আমতলীর সেই মনিকার কেন্দ্রিয় খেলাঘরের অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণপত্র এখন বোঝা!

প্রথম পাতা » বরগুনা » আমতলীর সেই মনিকার কেন্দ্রিয় খেলাঘরের অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণপত্র এখন বোঝা!
বুধবার ● ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯


মনিকার বসত ঘর
আমতলী প্রতিনিধি ॥
মোর মাইয়্যা যা হরছে হ্যাতে হারা দ্যাশ ভরা ক্ষ্যতি, মাইয়্যার কামে মুই খুবই খুসি। কিন্তু অ্যাহন কি দিয়া মুই মাইয়্যা লইয়্যা ঢাহা যামু। মোর হাতে কোন টাহা নাই। পৌরসভায় কাম হইর‌্যা দুই আজার টাকা পাই, আর মোর স্বামী হে তো তেমন কামাই হরতে পারে না। মোর ব্যাডায় যেদিন কামাই হরতে পারে সেই দিন খাই, নাইলে না  খাইয়্যা থাহি। কি দিয়া মুই মাইয়্যা লইয়্যা ঢাহা যামু। বুধবার আমতলী পৌরসভার ৭ নং ওয়ার্ডের একটি ঘুপরি ঘরের ভাড়া বাসায় কেন্দ্রিয় খেলাঘর আসরের জাতীয় সম্মেলনে অংশগ্রহনের বিষয়ে মনিকার মা শাহনাজ বেগম কান্নাজনিত কন্ঠে এ কথা বলেছেন। নিজের বাল্য বিয়ে ঠেকানো আমতলীর সেই মনিকার জাতীয় খেলাঘর আসরের অতিথি হিসেবে আমন্ত্রনপত্র এখন বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে। অর্থাভাবে অনুষ্ঠানে অংশগ্রহন করা তার জন্য খুবই দুর্বিসহ ব্যাপার।

জানাগেছে, উপজেলার হলদিয়া ইউনিয়নের তক্তাবুনিয়া গ্রামের অটোরিক্সা চালক অসুস্থ জুয়েল প্যাদা আমতলী পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডের বটতলা ব্রীজ সংলগ্ন খালের পাড়ের বাসুগী গ্রামে একটি ঘুপরি ঘরে একমাত্র মেয়ে মনিকাকে নিয়ে বসবাস করছেন। ওই বাসায় তিনি তিন’শ টাকায় ভাড়া থাকেন। স্ত্রী শাহানাজ বেগম আমতলী পৌরসভায় পরিছন্নকর্মী হিসেবে দৈনিক মজুরীতে কাজ করেন। স্বামী-স্ত্রীর আয়ে কোন মতে চলে তাদের জীবন সংসার। তাদের একমাত্র কন্যা মনিকা পৌরসভার আমতলী এমইউ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেনীতে পড়ে। অভাবেব সংসারে ৯ বছরের কন্যা মনিকা হয়ে পড়ে তাদের বোঝা। এতটুকু বয়সে কিছু বোঝার আগেই সিদ্ধান্ত নেয় মা শাহানাজ মেয়েকে বিয়ে দেয়ার। মনিকার মা পৌরসভার পরিচ্ছন্নতা কর্মী শাহনাজ বেগম একই পৌরসভার আরেক পরিচ্ছন্নতা কর্মী শামীম (১৫) এর সাথে গত মাসের ২৪ আগষ্ট রাতে মেয়ের বিয়ের সকল আয়োজন সম্পন্ন করেন। এ বিয়েতে মনিকার বাবা রাজী ছিল না বলে জানায় মনিকা। নিজের বিয়ের এ আয়োজন দেখে মনিকা চমকে যান এবং তার এ বিয়ে বন্ধের জন্য একই এলাকার খেলার সাথী ফারজানা ও কনিকাকে নিয়ে আমতলী থানায় চলে আসে। থানায় এসআই নাসরিনের সাথে দেখা হলে মনিকা তার বিয়ের আয়োজনের সব কথা খুলে বলেন। তাৎক্ষনিক এসআই নাসরিন কয়েকজন পুলিশ সদস্য নিয়ে মনিকার বাড়ীতে চলে যায়। ঘটনাস্থলে গিয়ে এসআই নাসরিন বিয়ের সকল আয়োজনের সতত্যা পান। এসআই নাসরিন তাৎক্ষনিক আমতলী ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কমলেশ চন্দ্র মজুমদারকে জানান। ভ্রাম্যমান আদাতের বিচারক কমলেশ মজুমদার ঘটনাস্থলে গিয়ে তিনি মনিকার মাকে বাল্য বিয়ের কুফল সম্পর্কে বুঝিয়ে বলেন। পরে বাল্য বিয়ের কুফল বুঝতে পেরে মনিকার মা তার মেয়েকে বাল্য বিয়ে দিবেন না বলে মুচলেকা দেন। ভেঙ্গে দেয় মনিকা নিজের বাল্য বিয়ে। মনিকার এমন কাজে সারা দেশ ব্যাপী আলোরন সৃষ্টি হয়। প্রশংসা কুরায় মনিকা। কিন্তু নিজের বিয়ে বন্ধ করে এমন অনন্য নজির স্থাপন করলেও মনিকাকে উৎসাহ দেয়া ও সহযোগীতা করার মত কেউ এগিয়ে আসেনি। নিরবেই চলে মনিকার লেখাপড়া। শুধুমাত্র আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনিরা পারভীন বিদ্যালয়ে গিয়ে শিক্ষা উপকরন দিয়ে আসেন। গত ২৫ দিন পেরিয়ে গেলেও স্থানীয়ভাবে মনিকাকে  দেয়া হয়নি সংবর্ধনা। বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় মনিকার সাহসিকতার সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় কেন্দ্রিয় খেলাঘর আসর মনিকাকে সংবর্ধনা ও সম্মাননা পুরুষ্কার দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আগামী ২০ ও ২১  সেপ্টেম্বর কেন্দ্রিয় খেলাঘর আসরের জাতীয় সম্মেলন শিশু একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হবে। ওই সম্মেলনে মনিকাকে অতিথি হিসেবে আমন্ত্রন জানানো হয়। এ সম্মেলনে মনিকাকে সাহসিকতার জন্য সংবর্ধনা ও সম্মাননা পুরুষ্কার প্রদান করা হবে। ওই অনুষ্ঠানের অতিথির আমন্ত্রনপত্র মনিকার পরিবার গত ১৫ সেপ্টেম্বর পেয়েছে। ওই সম্মেলনে অংশগ্রহন করার মত অর্থ মনিকার পরিবারের নেই। এখন তাদের কাছে অতিথির আমন্ত্রনপত্রটি যেন বোঝা হয়ে দাড়িয়েছে।

মনিকার বাবা জুয়েল প্যাদা বলেন, আমার মেয়ে একটি অসাধারণ কাজ করেছে। মেয়ে যা করেছে তা অনন্য হাজারো মেয়ের চেয়ে উত্তম। মেয়ের এমন কাজে আমি গর্বিত। কিন্তু কি দিয়ে যে মেয়েকে নিয়ে সম্মেলনে যাব তা ভেবে পাচ্ছি না। না আছে টাকা, না আছে মেয়ের একটি ভালো পোশাক। তিনি আক্ষেপ করে আরো বলেন, আমার মেয়ের এমন সাহসিকতার জন্য স্থানীয়ভাবে কেউ উৎসাহ ও সহযোগীতা করেনি। আমি হতদরিদ্র বলেই এমনটা হয়েছে।

আমতলী উপজেলা নির্বাহী আফিসার মোসাঃ মনিরা পারভীন বলেন, মনিকার শিক্ষা সহায়তা উপকরন দেয়া হয়েছে।

এমএইচএকে/কেএস

বাংলাদেশ সময়: ১৭:১০:৪৩ ● ৫৯৮ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ