ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
ছাত্রলীগ ও যুবলীগ গত ১০ বছরে যে অত্যাচার, নির্যাতন, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি করেছে -ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদককে অপসারণ করার মাধ্যমে সম্পূর্ণভাবে তাদের মুখোশ খুলে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে অ্যাসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (অ্যাব) আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন।
মওদুদ বলেন, আজকে বিরোধী দল নাই। তার পরেও সরকার এমন অবস্থায় পড়েছে যে, তাদেরকে বাধ্য হয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদককে অপসারণ করতে হয়েছে। কারণ, ঘুষের জন্য তারা দুর্নীতি করেছে। সরকার নাকি একটি তালিকা বের করেছে, সেখানে লেখা আছে ৫০০ জন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী চাঁদাবাজি করছে। এটা ৫০০ নয় ৫০০০ হবে বা তার চেয়ে বেশি হবে। এটার (সভাপতি-সম্পাদককে অপসারণের) মাধ্যমে কী বুঝানো হয়েছে? সরকার পরিষ্কারভাবে বুঝাতে সক্ষম হয়েছে যে, ছাত্রলীগ-যুবলীগ সারাদেশে চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজি করে। মানুষের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করে, জমি দখল করে, মানুষকে গুম করে টাকা নেয়, এই ধরনের কথা আজকে তারা প্রমাণ করেছেন।
তিনি বলেন, এই সরকার একটি অসাংবিধানিক সরকার। কারণ, তারা সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন বলতে যা বোঝায়, সেই নির্বাচনের মাধ্যমে তারা নির্বাচিত হন নাই। তারা সত্যিকার অর্থে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করেন না। জনগণের প্রতিনিধিত্ব যেহেতু তারা করেন না, সেজন্য এই সরকার পরিচালনা করার সাংবিধানিক ক্ষমতা তাদের নেই। কিন্তু তারপরেও তারা জোর করে ক্ষমতায় টিকে আছে। একেবারে বিরোধীদলকে নিষ্পেষিত করার মাধ্যমে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছে। যেহেতু তাদের জবাবদিহিতা নেই, সেজন্য দুর্নীতি আজকে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, কয়েকদিন আগে খবরের কাগজে দেখলামÑ দৈনিক নাকি ৭৫ হাজার কোটি টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। এটা কাদের টাকা, এটা জনগণের টাকা। যারা দুর্নীতি করেছেন, স্মাগলিং করেছেন, অবৈধভাবে টাকা উপার্জন করেছেন, তাদের টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে সংবিধান লঙ্ঘন করে। আজকে দুর্নীতি সর্বকালের সর্ব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে এই সরকারের সময়ে। অর্থাৎ এমন কোনও জায়গা নেই যেটি দুর্নীতিমুক্ত আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব নয় জানিয়ে বিএনপির এই শীর্ষ নেতা আরও বলেন, আমরা অনেক চেষ্টা করেছি এক বছর সাত মাস তিনি আজকে কারাগারে বন্দি। একটি বানোয়াট মিথ্যা মামলায় তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে। তার শরীর খুবই খারাপ কিন্তু তারপরেও এই অমানবিক সরকার বিভিন্ন কৌশলে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে, বিশেষ করে নিম্ন আদালত এখন সম্পূর্ণরূপে প্রশাসনের অধীনে কাজ করে। সেই কারণে আজও পর্যন্ত আমরা খালেদা জিয়ার জামিন নিশ্চিত করতে পারিনি। কারণ, তারা খালেদা জিয়াকে ভয় করেভ খালেদা জিয়ার জনপ্রিয়তাকে ভয় করে।
তিনি আরও বলেন, আগেও আমি বলেছি, আইনি প্রক্রিয়ায় আমরা তাকে মুক্ত করার জন্য চেষ্টা করছি, চেষ্টা করে যাবো। কিন্তু এর মাধ্যমে খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে না। খালেদা জিয়ার মুক্তি হবে রাজপথে। আমরা যদি রাজপথে নামতে পারি, আন্দোলন করতে পারি -তাহলেই তার মুক্তি হবে। সেই দিনের অপেক্ষায় আমাদেরকে থাকতে হবে আমাদের ধৈর্যধারণ করতে হবে। সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে দেশ আজ সমস্যার সম্মুখীন দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, একটি হলো রোহিঙ্গা সংকট। এই রোহিঙ্গা সংকট এ সরকারের সৃষ্টি। এজন্য সরকারই সম্পূর্ণভাবে দায়ী। তাদের কূটনীতিক ব্যর্থতার কারণে আজ ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশের মাটিতে রয়েছে। এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও দেশে ফেরত পাঠাতে পারেনি। অপরদিকে আসামের এনআরসি। ভারতের একজন নেতা বলেছেন, ‘দুই প্যাকেট খাবার দিয়ে বাংলাদেশিদের ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হবে’। তার মানে কী? তিনি বলেন, কোনো বাংলাদেশিতো আসামে নেই। তারা ভারতের নাগরিক। আমাদের দেশ থেকে আসামে কেন লোক যাবে? আমাদের অর্থনৈতিক অবস্থা কি আসামের চেয়ে খারাপ? আমাদের দেশের আর্থিক অবস্থা তাদের চেয়ে অনেক অনেক ভালো। কেন এখানের মানুষ আসামে যাবে? এটা একটি মিথ্যা অজুহাত তুলে কিছু মানুষকে বাংলাদেশে পাঠানোর ষড়যন্ত্র চলছে।
এইবির আহ্বায়ক প্রকৌশলী রিয়াজুল ইসলাম রিজুর সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়া, ড্যাব মহাসচিব প্রফেসর ডা. আবদুস সালাম, বিএনপির সাবেক সহ-দফতর সম্পাদক কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, বিএনপির সহ-তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, বিএনপি নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন প্রমুখ।
এফএন/এমআর