চরফ্যাশন প্রতিনিধি ॥
ভোলা ৪(চরফ্যাশন-মনপুরা) আসনের সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ এম এম নজরুল ইসলামের মৃত্যুবার্ষিকী ১৭সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার। এই উপলক্ষে উপজেলা অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম ফাউন্ডেশন এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের যৌথ আয়োজনে চরফ্যাশন উপজেলা তাঁর সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পণ, শোকযাত্রা, কবর জেয়ারত, স্মরনসভা ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। দিনব্যাপী কর্মসূচীতে অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম ফাউন্ডেশন, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো এসকল কর্মকান্ডে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করবেন বলে দলীয় সূত্রে জানিয়েছেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন আখন বলেন, সকাল সাড়ে ৬টায় কালো পতাকা উত্তোলন, ৭টায় খতমে কোরআন, খতমে তাহলিল, সকাল ১০টায় দলীয় কার্যালয় সামনে থেকে কালো ব্যাজ ধারণ করে শোকযাত্রা শুরু হয়ে শহরের উল্লেখযোগ্য সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে চরফ্যাশন সরকারি কালেজ ক্যাম্পাসে অধ্যক্ষ নজরুল ইসলামের সমাধিস্থলে গিয়ে শেষ হবে। সেখান তাঁর সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পণ করা হবে। পরে কলেজ মসজিদে স্মরণসভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, এমএম নজরুল ইসলাম ১৯৪৩ সালের ১৬ অক্টোবর তৎকালীন বরিশাল জেলার ভোলা মহকুমার লালমোহন থানার লর্ডহার্ডিঞ্জ ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামে পন্ডিত বাড়িতে জম্মগ্রহণ করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি লর্ডহার্ডিঞ্জ মাদ্রাসা থেকে ৫ম শ্রেনী পাশ করেন। ১৯৬৬সালে তিনি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে দ্বিতীয় শ্রেনীতে এমএ ডিগ্রি অর্জন করেন। বরিশাল কাশিমপুর হাই স্কুলে পরে চরফ্যাশন উপজেলার দুলারহাট ও চরফ্যাশন টিবি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেন। যোগদান পর প্রসঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগ সিনিয়র সহ-সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ সফল চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদিন কালের কন্ঠ বলেন, ওই সময় থেকে তিনি স্ব-পরিবারে চরফ্যাশন বসবাস শুরু করেন। ১৯৬৮ সালে ১ আগষ্ট চরফ্যাশন কলেজ প্রতিষ্ঠিত হওয়া কলেজ অধ্যক্ষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি পাকিস্তানি সেনাবাহিনীতে কমিশন হিসাবে নিয়োগ পান। তিনি শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে সেখানে যোগদান করতে যেতে পারেনি।
রাজনীতি জীবনে তিনি বরিশাল ছাত্র ইউনিয়ন এবং পরবর্তী সময় ছাত্রলীগের কর্মী হিসাবে কাজ করেন। জাতীর জনক বঙ্গবন্ধুর ডাকে স্বাধীকার আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন। ১৯৭১সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয়ভাবে সংগঠক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৩ সালে ১৩ ডিসেম্বর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উপকূলীয় জনপদ পরিদর্শনে অংশ হিসাবে চরফ্যাশন কলেজ মাঠে আগমন করেন। অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম কলেজ এবং চরফ্যাশনের মানুষের কিছু দাবী-দাওয়া তুলে ধরে ওই সভায় বক্তব্যে রাখেন। এতে তিনি চরফ্যাশন বাসীর কাছে আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠেন। ১৯৭৯সালে বাকেরগঞ্জ-৩(চরফ্যাশন-লালমোহনের কিছু অংশ নিয়ে গঠিত) আসন থেকে জাতিয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১সালে ২৭ ফেব্রুয়ারী দ্বিতীয় বারের মতো ভোলা-৪(চরফ্যাশন-মনপুরা) আসন থেকে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি জাতীয় সংসদে সরকারি হিসাব কমিটি, ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং বিমান ও পর্যটন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কিমিটির সদস্য ছিলেন।
সংসদ সদস্য থাকা কালিন মাত্র ১৩দিন অসুস্থ্য থাকার পর ১৯৯২সালে ১৭ সেপ্টেম্বর রাত ১২টায় ১০মিনিটে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থা ইন্তেকাল করেন। পরদিন সকাল ১১ টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তাঁর প্রথম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। তৎকালিন প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেত্রী, মন্ত্রী পরিষদের সদস্যবৃন্দু তারঁ কফিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি প্রদান করেন। বিকাল সোয়া ৩টায় হেলিকপ্টার যোগে জাতীয় নেতা তোফায়েল আহমেদ, জ্যেষ্ঠ পুত্র বর্তমান সাংসদ আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি মরহুমের সহধর্মীনী বেগম রহিমা ইসলামসহ পরিবারের সকল লোকজনসহ তাঁর কর্মস্থল চরফ্যাশন আসেন। ৫টা ৪৫মিনিটে কলেজ চত্বরের প্রথান গেইট সংলগ্ন পশ্চিম পাশে তাঁকে সমাধিস্থ করা হয়। মৃত্যুকালে তিনি ৩ছেলে ১কন্যাসন্তানসহ অসংখ্যা গুনিজন রেখে গেছেন। প্রয়াত নজরুল ইসলামের ছেলে ওই আসনের এমপি হয়ে পিতার অসমাপ্ত কাজ করে পিতার স্মৃতি ধরে রেখেছেন।
সাংসদ আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বলেন, আমার বাবা একজন সৎ আদর্শ রাজনীতিবিদ ছিলেন। তার কর্মের জন্য আজ আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে নমিনেশন পেয়ে ব্যাপক ভোটের ব্যবধানে নৌকার প্রতীকে বিজয় হয়ে জনগনের উন্নয়ন করতে স্বক্ষম হয়েছি। তাঁর কর্মের জন্য শুধু চরফ্যাশন-মনপুরা নয় পুুরো বাংলাদেশের নেতাকর্র্মীদের মনে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। তিনি অমৃত্যু দল মত নির্বিশেষে জাতীয় রাজনীতিতে বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখে গেছেন। যার ফল আজ আমি জ্যাকব ভোগ করছি।
এএইচ/কেএস