বানারীপাড়া (বরিশাল) প্রতিনিধি ॥
বানারীপাড়ায় জামায়াত নেতা রফিক উদ্দিনের জামাতা ও সোনালী ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মো. সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ এনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর, সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বরিশাল দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) উপ-পরিচালকের কাছে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। সম্প্রতি বানারীপাড়ার মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান ও হানিফ মিয়া নামের দুই ব্যক্তি পৃথক ভাবে ব্যাংকের হিসাব বিবরণী সহ ওই অভিযোগ করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বানারীপাড়ার সোনালী ব্যাংকের গ্রাহক অবসরপ্রাপ্ত সরকারী চাকুরীজীবী নূরুল আলম তার নামে-বেনামে থাকা দুই-তিন কোটি টাকার এফডিআর ভাঙিয়ে তার সঞ্চয়ী হিসাবে জমা দিতে চাইলে শাখা ব্যবস্থাপক সাইদুর রহমান তাকে ভয় দেখিয়ে বলেন, এতো টাকা সঞ্চয়ী হিসাবে জমা রাখলে আপনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকে রিপোর্ট হয়ে যাবে এবং তাতে আপনার অনেক ক্ষতি হবে। এর কারণ হিসেবে তাকে বলা হয় আপনার আয়ের সঙ্গে ওই টাকার বর্তমান হিসাবের কোন মিল নেই। তাকে দুই লাখ টাকা দিলে বিকল্প ব্যবস্থা করে দিবেন। নিজেকে রক্ষা করার জন্য ওই গ্রাহক শাখা ব্যবস্থাপক সাইদুর রহমানকে দুই লাখ টাকা উৎকোচ দিলে উক্ত গ্রাহকের নামে-বেনামে ৬টি পেমেন্ট অর্ডার ইস্যু করে দেন। পেমেন্ট অর্ডার ও এফডিআর ইস্যুর সময় মুরি বহিতে গ্রাহকের স্বাক্ষর করতে হয় এবং সেটি প্রদানের সময় মুরি বহির স্বাক্ষরের সঙ্গে মিলিয়ে প্রদান করতে হয়। ফলে কার স্বাক্ষর কাকে দিয়ে নামে-বেনামের পেমেন্ট অর্ডার ইস্যু করা হলো এ নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
এছাড়াও তিনি সোনালী ব্যাংকের আড়ৎদার পট্টী শাখা ব্যবস্থাপক থাকা অবস্থায় তার প্রতিবেশী সান্টু নামের এক ব্যক্তিকে এক লাখ টাকার বিনিময়ে একটি বড় লোন পাস করে দিয়েছেন বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে বানারীপাড়া শাখা থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরিদের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা করে উৎকোচ নিয়ে কনজুমার ঋণ দেয়া ও উৎকোচ ব্যতিরেকে কোন ঋণ প্রদান না করার অভিযোগ রয়েছে। তিনি সোনালী ব্যাংক সংলগ্ন বানারীপাড়া পাইলট স্কুল মাঠের দক্ষিণ পাশে ও পৌর শহরের ৬নং ওয়ার্ডে শ্বশুর বাড়িতে ৪৫ লাখ টাকার একটি গৃহ নির্মাণ ঋণ নিয়ে প্রায় কোটি টাকা ব্যায়ে ৪ তলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন। শাখা ব্যবস্থাপক সাইদুর রহমানের শ্বশুর বানারীপাড়া পৌর জামায়াতের সাবেক আমির ও উপজেলা জামায়াতের বর্তমান রোকন রফিক উদ্দিন মিয়া ২০১৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে গাড়ি ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগে থানা পুলিশের হাতে দু’বার আটক হওয়া ও তার শ্যালক পৌর ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি সাব্বির আহম্মেদের বিরুদ্ধে ককটেল বিষ্ফোরণ, পুলিশের ওপর হামলা ও নাশকতার অভিযোগে মামলা সহ শাশুড়ি ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে ১০/১২ জনের মহিলা জামায়াত টিম নিয়ে নির্বাচনের সময় ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রপাগান্ডা এবং অপ-প্রচার চালানোর অভিযোগ করা হয়েছে। একই ভাবে তার উপস্থিতিতে বিভিন্ন সময় শ্বশুর বাড়িতে জামায়াত নেতারা সরকার বিরোধী গোপন বৈঠক হওয়া ও সেই বৈঠকে তার খরচ বহনের অভিযোগ করা হয়েছে। শ্বশুর, শাশুড়ি, স্ত্রী ও শ্যালকের শেল্টারদাতা ও জামায়াত কানেকশনের কারণে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের ভিত্তিতে সাইদুর রহমানকে ইলেকশন ডিউটি দেয়া হয়নি বলেও অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে বানারীপাড়ার বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা সোনালী ব্যাংকের বরিশালের জিএম’র সঙ্গে দেখা করে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে জামায়াত সমর্থক শাখা ব্যবস্থাপকের কাছ থেকে ভাতার টাকা নিতে তারা লজ্জা বোধ করছেন এবং তারা এ বিষয়টি জানিয়ে তাকে অন্যত্র বদলী করার দাবী জানিয়েছেন।
এবিষয়ে জানতে চাইলে বানারীপাড়া সোনালী ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক মো. সাইদুর রহমান বলেন, তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবী করেন।
এসএমজিএমআর/কেএস