ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
দেশে জীবন বিমা ও সাধারণ মিলিয়ে মোট ৭৫টি বিমা কোম্পানি রয়েছে। এর মধ্যে ৪৭টি বিমা কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত। বাকি ২৮টি তালিকাভুক্ত না হওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী। আগামী তিনমাসের মধ্যে এসব কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত না হলে চার ধাপে সনদ বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলনকক্ষে বিমা প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ারম্যান এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে মন্ত্রী একথা বলেন। মন্ত্রী বলেন, একদেশে দুই আইন হতে পারে না। কেউ পুঁজিবাজারে থাকবে কেউ বাইরে থাকবে এটা হতে পারে না। আগামি অক্টোবর, নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই পুঁজিবাজারের বাইরে থাকা ২৮ কোম্পানিকে অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। অন্যথায় এদের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। প্রথমে তাদের সাসপেন্ড করা হবে, এর পরে সাময়িক সনদ বাতিল, শেষ ধাপে স্থায়ীভাবে সনদ বাতিল করা হবে। সরকার একটা উদ্দেশ্য সামনে নিয়ে লাইসেন্স দেয়। এই উদ্দেশ্য পূরণ না হলে লাইসেন্স বাতিল হবে এটাই স্বাভাবিক। বিমা কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে এলে পুঁজিবাজার আরও শক্তিশালী হবে।
মুস্তফা কামাল বলেন, দেশের বিমা কোম্পানিগুলো ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিমা খাতে বৈচিত্র আনতে হবে। এই খাত আগামীতে দেশের অর্থনীতিতে আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে। পর্যায়ক্রমে গবাদিপশু-বহুতল ভবন-অফিস ও ফ্ল্যাট এসব কিছুই ইন্সুরেন্সের আওতায় আনা হবে। মুস্তফা কামাল বলেন, বিমা খাতের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নানা আলোচনা হয়েছে। তারাই বলেছেন, বিমা আগের অবস্থানে নেই। বিমা খাত ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বিমা খাতটিকে কীভাবে আরও বৈচিত্রময় করা যায়, কীভাবে আরও নতুনত্ব আনা যায়, সেই বিষয়ে আলাপ করেছি। আমাদের যেই যেই জায়গায় ইন্সুরেন্স কাভারেজ নেই, সেইগুলোকে ইন্সুরেন্সের আওতায় আনতে হবে। আমরা সবাই কোনো না কোনো বাসায় থাকি, ফ্ল্যাটে থাকি। তাদের দাবি, ফ্ল্যাটগুলোর ইন্সুরেন্স বাধ্যতামূলক করা। আমরা যে অফিসে থাকি সেটার ইন্সুরেন্স আছে কিনা, আমরা জানি না। তাদের দাবি, সেগুলোও ইন্সুরেন্সের আওতায় আনা।
অর্থমন্ত্রী বলেন, বিদেশে শুধু মানুষ ও প্রোপার্টি নয়, কুকুর-বিড়ালেরও ইন্সুরেন্স আছে। আমাদের দেশকে যদি শক্তিশালী দেশ হিসেবে গড়তে হয়, তবে দেশের প্রত্যেকটা কম্পোনেন্টকে মনের মাধুরি মিশিয়ে সামনে নিতে হবে। আমাদের দুর্ঘটনা ইন্সুরেন্স কাভার করতে হবে, অফিসের গাড়ির ইন্সুরেন্স করতে হবে, প্রত্যেকটা উঁচু -নিচু বিল্ডিং ইন্সুরেন্সের আওতায় আনতে হবে। মানুষ যে বাড়িতে ঘুমায়, সেই বাড়িগুলোও শতভাগ ইন্সুরেন্সের আওতায় আনতে হবে। বিমা খাতের অগ্রগতির কথা তুলে ধরে মন্ত্রী বলেন, বিমা খাতে আমরা অনেক গতিশীলতা নিয়ে এগোচ্ছি। আমরা সঠিক পথে আছি, জাতির পিতার নির্দেশিত পথেই প্রধানমন্ত্রী আমাদের নিয়ে যাচ্ছেন। অর্থনীতিতে পুঁজিবাজার যেমনিভাবে মৌলিক এলাকা, ঠিক তেমনিভাবে বিমা খাতও মৌলিক এলাকা। আগে বিমা খাত নিয়ে অনেক দুঃখ করতাম। কারণ এটা নিয়ে অনেক অপপ্রচার হত। এই খাত জনমনে আস্থার সংকটে ভুগতো। কিন্তু এখন এটা কেটে গেছে। এখন তিন কিংবা ছয় মাসেও আপনারা একটাও নিউজ পাবেন না যে, বিমা নিয়ে কোনো দুর্ভাবনা আছে। আগে বিমা নিয়ে অহরহ নেতিবাচক কথা শুনতাম। এখন কিন্তু কিছুই শুনিনা। এটা একটা ভালো দিক। মন্ত্রী আরও বলেন, প্রতিটা জায়গা আমরা যদি ইন্সুরেন্সের আওতায় আনতে পারি, তাহলে সেটি আমাদের অর্থনীতিতে শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে। তাই বিমা কোম্পানির দাবিগুলোর জন্য তাদের ধন্যবাদ জানাই। বিমা খাতকে অর্থনীতির জন্য কাজে লাগাতে হবে।
মুস্তফা কামাল বলেন, পয়লা মার্চ জাতির পিতাকে স্মরণ করে জাতীয় বিমা দিবস পালন করা হবে। সেই দিন প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতি পাওয়ার চেষ্টা করবো। আমরা সবার কথা শুনেছি। সবাইকে সমানভাবে সুযোগ দিয়েছি। সবার অংশগ্রহণে বিমা খাত অর্থনীতিতে আরও শক্তিশালী ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম, বিমা কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান পাটোয়ারী, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন প্রমুখ।
এফএন/এমআর