চাঁদাবাজির প্রমাণ পেলে বহিষ্কার: ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি

প্রথম পাতা » রাজনীতি » চাঁদাবাজির প্রমাণ পেলে বহিষ্কার: ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি
রবিবার ● ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯


চাঁদাবাজির প্রমাণ পেলে বহিষ্কার: ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

চাঁদাবাজির অভিযোগের প্রেক্ষাপটে ছাত্রলীগের দুই শীর্ষনেতা বাদ পড়ায় ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বে আসা আল নাহিয়ান খান জয় এ বিষয়ে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের প্রথমেই হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কারও বিরুদ্ধে যদি চাঁদাবাজি বা টেন্ডারবাজির অভিযোগের প্রমাণ পাই এবং তারা যদি ছাত্রলীগের সুনাম নষ্ট করে, তাহলে সাথে সাথেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
রবিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য্যকে পাশে রেখে এক সংবাদ সম্মেলনে একথা বলেন নাহিয়ান। চাঁদাবাজির কয়েকটি ঘটনায় অভিযোগের মুখে ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে শনিবার নেতৃত্ব ছাড়তে হয়। কমিটির মেয়াদের প্রায় এক বছর বাকি থাকতে দুই শীর্ষনেতার বিদায়ে ১ নম্বর সহ-সভাপতি নাহিয়ান ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এবং ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়েছেন।
দায়িত্ব নেওয়ার পর রবিবার দুপুরে মধুর ক্যান্টিনে প্রথম সংবাদ সম্মেলনে আসেন তারা। এসময় নাহিয়ান এসব কথা বলেন। এদিকে, রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠনের দায়িত্ব নেওয়ার কথা জানান ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য।
রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা এ কথা জানান। এ সময় তাদের সঙ্গে ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন উপস্থিত ছিলেন। ছাত্রলীগের নতুন দায়িত্ব পাওয়া ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আল নাহিয়ান জয় বলেন, ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে আমরা সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে সংগঠনের দায়িত্ব গ্রহণ করবো। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় তারই কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করবো।
তিনি বলেন, আমরা ১৩ মাস সহ-সভাপতি ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। এই মুহূর্তে আমাদের অভিভাবক দেশরতœ শেখ হাসিনা একটা দায়িত্ব দিয়েছেন। এটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। তবে আমরা মনে করি যত চ্যালেঞ্জ আসুক না কেন তা মোকাবেলা করে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া ছাত্রলীগকে দেশরতেœর নির্দেশনা অনুসরণ করে এগিয়ে নেবো। ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক থেকে অব্যাহতি পাওয়া শোভন-রাব্বানীর বিচার চান কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে জয় বলেন, আমরা শুধু আমাদের দায়িত্ব পালন করবো। অন্য বিষয়গুলো আমাদের নীতিনির্ধারণী অভিভাবক ও আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতারা রয়েছে। তাদের সঙ্গে বসে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো।
ছাত্রলীগ নিয়ে পরিকল্পনার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। এটা চালাতে আমাদের অনেক ধরনের পরিকল্পনা নিতে হবে। আমরা যেহেতু দায়িত্ব পেয়েছি দুজনে বসে একটি সার্বিক পরিকল্পনা গ্রহণ করবো, ছক আঁকবো। সে অনুযায়ী, আমরা যে দশ মাস সময় পাচ্ছি, এই সময়ের মধ্যে আমাদের যেসব কমিটিগুলো বিভিন্ন জায়গায় বিলুপ্ত করা হয়েছে এবং যে কমিটি ২ বছরের অধিক চলে গেছে সেই কমিটি গুলো বিলুপ্ত করে আমরা সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে যুগোপযোগী করে এগিয়ে যাবো। দেশরতেœর হাতকে শক্তিশালী করবো।
সংগঠনের নেতিবাচক কর্মকা- মোকাবেলায় কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে? সাংবাদিকরা জানতে চাইলে সভাপতি জয় বলেন, দেশরতেœর হাতকে শক্তিশালী করার জন্য যেকোনো ধরনের পজিটিভ পদক্ষেপ ছাত্রলীগ নিবে। এজন্য আমরা সবসময় কাজ করে যাবো। আশা রাখি অতীতে যদি সংগঠনের কোনো ইমেজ ক্ষুণœ হয়ে থাকে তাহলে তা ফিরিয়ে আনতে কাজ করবো। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কোনো অন্যায়, চাঁদাবাজিকে প্রশ্রয় দেয় না। আমরা সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেবো। নিজেদের বেলায় দুর্নীতি হবে কি-না এমন প্রশ্নে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, আমি হলেও দায়িত্ব পালন করেছি। চেষ্টা করি আমাদের গায়ে কোনো কালিমা যেন না লাগে। আমরা দেশরতেœর আস্থার জায়গাটা অবশ্যই রাখবো, সে অনুযায়ী কাজ করবো।
ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য বলেন, ছাত্রলীগ নিয়ে যে সংকট বিরাজমান তা মোকাবেলা করার জন্যই আমরা দায়িত্ব পেয়েছি। আমরা দায়িত্বটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে গ্রহণ করেছি। দশ মাসের মধ্যে আমাদের সবগুলো কমিটি তৈরি করে সম্মেলনের মাধ্যমে সুন্দর ছাত্রলীগ উপহার দিতে হবে। আমরা সব শাখার সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে চাই। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের যদি কোনো ধরনের সমস্যা থাকে, তাহলে আমাদের দরজা আপনাদের জন্য খোলা থাকবে। কোনো ধরনের লবিং-তদবির দরকার নেই, অভিযোগ বলুন, আমরা সুষ্ঠু সমাধান করবো। আদর্শ ধারণ করে রাজনীতি করলে সবাই সঠিক মূল্যায়ন পাবে।
শনিবার রাতে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটি থেকে বেরিয়ে সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের কথা জানান। ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পান একই কমিটির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় এবং জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য হন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক। সংগঠনকে ব্যবহার করে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ মাথায় থাকা রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে কয়েক দিন ধরেই রাজনৈতিক অঙ্গনে জল্পনা-কল্পনা চলছিল। এর মধ্যে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও দেন গোলাম রাব্বানী। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁদের সরে যেতেই হয়। শোভন ও রাব্বানীর জায়গায় ছাত্রলীগের নেতৃত্বে এসেছেন আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্য। জয় ও লেখক দুজনই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটির ১ নম্বর সহ-সভাপতি ছিলেন জয়, আর লেখক ছিলেন ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কাছে গিয়ে চাঁদা দাবির অভিযোগে সমালোচনার মুখে থাকা শোভন-রাব্বানীকে সরিয়ে তাদের দুজনকে আওয়ামী লীগের এই ছাত্র সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। তারা ছাত্রলীগের সম্মেলনের প্রস্তুতি নিবেন বলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানিয়েছেন। ছাত্রলীগের সর্বশেষ ২৯তম জাতীয় সম্মেলন হয়েছিল গেল বছরের ১১ ও ১২ মে। নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন ছাড়াই শেষ হয় সম্মেলন। তার আড়াই মাস পর বিগত বছরের ৩১ জুলাই শোভনকে সভাপতি ও রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক করে দুই বছর মেয়াদি আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। সে হিসাবে আরও প্রায় ১১ মাস পর ছাত্রলীগের সম্মেলন হওয়ার কথা। সে পর্যন্ত জয় ও লেখকই সংগঠনটির নেতৃত্ব দেবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। বরিশালের ছেলে আল নাহিয়ান জয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগে পড়েছেন। শোভনের সঙ্গে একই বর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। এখন ক্রিমিনোলজি বিভাগ থেকে সান্ধ্যকালীন মাস্টার্স করছেন জয়। ছাত্রলীগের বিগত কেন্দ্রীয় কমিটির আইন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা জয় তার আগে সার্জেন্ট জহরুল হক ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হওয়া লেখক ভট্টাচার্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ বিভাগের ছাত্র। এখন স্নাতকোত্তর করছেন তিনি। যশোরের মনিরামপুরের ছেলে লেখক ওই এলাকার সাংসদ ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্যের ভাতিজা। লেখক ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ও জগন্নাথ হল শাখার বিগত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৯:৪৪:১০ ● ৩০৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ