ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি) অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ ভাগ-বাটোয়ারার অভিযোগ বিষয়ে জাবি উপাচার্য প্রফেসর ফারজানা ইসলাম বলেছেন, ছাত্রলীগের সঙ্গে অর্থ লেনদেনের বিষয়টি একটি বানোয়াট গল্প। একই সঙ্গে বিষয়টি তদন্ত করার জন্য বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যকে অনুরোধ করবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাবি ক্যাম্পাসে উপাচার্যের বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোপকালে তিনি এসব কথা বলেন। উপাচার্য প্রফেসর ফারজানা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ লেনদেনের বিষয়টি বানোয়াট গল্প। টাকা-পয়সা নিয়ে তাদের (ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক) সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি। তারা তাদের মতো করে কাজ করে। তারা কার কাছে কমিশন পায় বা পায় না, তা আমি জানি না। এ বিষয়ে তারা আমাকে ইঙ্গিত দিলে আমি বলি, তোমরা টাকা-পয়সা নিয়ে কোনো আলাপ আমার সঙ্গে করবে না। তোমরা যা চাও, তা তোমাদের মতো করো। তিনি বলেন, ছাত্রলীগের মূল উদ্দেশ্য ছিল যে, তারা ঠিকাদারের কাছ থেকে কিছু কমিশন নেবে। তারা এ বিষয়ে আমাকে ইঙ্গিত দিয়েছে। কিন্তু আমার কাছে এসে তারা হতাশ হয়েছে। তারা প্রধানমন্ত্রীর কাছে যে খোলা চিঠি লিখেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর দেওয়া খোলা চিঠির ব্যাপারে উপাচার্য ফারজানা ইসলাম বলেন, তারা মিথ্যা গল্প ফেঁদেছে। আমি তাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলাম। এ বিষয়ে আমি তদন্ত করতে অনুরোধ করবো বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনকে ও আচার্য মহোদয়কে। আমি যাবো তাদের কাছে। এতে আমার কোনো সমস্যা নেই। এর আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের দুই কোটি টাকা ছাত্রলীগের মাঝে ভাগ-বাটোয়ারার সংবাদটি গণমাধ্যমে এলে দেশজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়। এই আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে ও আগের বিভিন্ন অভিযোগ টেনে ছাত্রলীগের কমিটি ভেঙে দিতে বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর নিজেদের ভুল স্বীকার করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি লিখেন ছাত্রলীগে সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।
চিঠিতে রাব্বানী উল্লেখ করেন, জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম ঈদুল আজহার আগে শাখা ছাত্রলীগকে এক কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়েছেন। এ ছাড়া উপাচার্যের সন্তানের মাধ্যমে তাদের জাবিতে ডেকে আনা হয়েছিল। গোলাম রাব্বানী সাবেক এক ছাত্রলীগ নেতার ফার্মকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য সুপারিশ করলেও উপাচার্য তার কথা রাখেননি।
এদিকে মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান আন্দোলন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলতে গণভবনে যান উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম। সেখান থেকে ফিরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, সেদিন তারা (শোভন ও রাব্বানী) আমাকে বলে, এত বড় প্রকল্প, আপনি আমাদের সহযোগিতা করেন, আমরাও আপনাকে সহযোগিতা করবো। আপনি কোম্পানিগুলোকে বলে দেন তারা যেন আমাদের কিছু (পার্সেন্ট) টাকা দেয়। আমাদের টাকা দিলে আমরা স্থানীয় (জাবি) ছাত্রলীগকে তা থেকে কিছু দিয়ে দেবো। কিন্তু আমি তাদের কথায় রাজি হইনি এবং মুখের উপরে বলে দিয়েছি, আমি কোনো টাকা-পয়সার মধ্যে নেই। তখন তারা আমাকে বললো, আপা (প্রধানমন্ত্রী) আমাদের সব বিশ্ববিদ্যালয় দেখাশোনার দায়িত্ব দিয়েছেন।
উপাচার্য বলেন, তখন তাদের কথায় সাড়া না দেওয়ায় তারা আমার সঙ্গে বেশ উচ্চৈঃস্বরে কথা বলা শুরু করে। এর কিছু সময় পর তারা চলে যায়। তারা প্রকল্পের টাকার দু-এক পার্সেন্ট না, চার কিংবা ছয় পার্সেন্ট দাবি করছে।
এফএন/এমআর