মেজবাহউদ্দিন মাননু ॥
কুয়াকাটার পর্যটক-দর্শনার্থীর জন্য সুখবর। সূর্যোদয়-সূর্যাস্তের মতো বিরল দৃশ্য উপভোগ্য সৈকত কুয়াকাটায় এবার সরকারি উদ্যোগে নির্মাণ হয়েছে ‘ট্যুরিজম পার্ক’। দীর্ঘদিন পর হলেও পর্যটকের প্রত্যাশিত প্রাপ্তির প্রতিফলন ঘটবে এ পার্কেও উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে। আগামী তিন মাসের মধ্যে এ পার্কটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে। অধিকাংশ নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। দীর্ঘদিনে প্রত্যাশা প্রাপ্তির সুখকর মুহুর্ত উপভোগের অপেক্ষায় রয়েছেন পর্যটক-দর্শনার্থী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর প্রতিশ্রুত কুয়াকাটার পর্যটকদের স্বস্তিদায়ক পরিবেশ সৃষ্টির সুযোগ করে দেয়ায় এখন ক্ষণ গুনছেন সাগরপাড়ের মানুষসহ সকল পর্যটক-দর্শনার্থী।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আড়াই একর জমি অধিগ্রহণের মধ্য দিয়ে ১৯৭৩ সালে এই কুয়াকাটার উন্নয়নের গোড়াপত্তন করেছিলেন। এরপরের অধ্যায়,উন্নয়ন-ইতিহাস বিষাদময়। দীর্ঘ ২৫ বছরেরও বেশি সময় পরে জাতির পিতার সুযোগ্য কণ্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৮ সালের মে মাসে কুয়াকাটায় পর্যটন কর্পোরেশনের হলিডে হোমস উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়ন শুরু করেন। পরিকল্পনার সঙ্গে কুয়াকাটাকে আধুনিক পর্যটন কেন্দ্রে উন্নীতের প্রতিশ্রুতি দেন। আর পেছনে ফেরেনি কুয়াকাটার উন্নয়ন। ২০১০ সালে কুয়াকাটাকে পৌরসভায় উন্নীত করা হয়। চুড়ান্ত হয়েছে পরিকল্পিত উন্নয়নের মাস্টার প্ল্যান। ইতোমধ্যে যার বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে এই ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণ শেষের পথে। বেড়িবাঁধের বাইরে সৈকত লাগোয়া নারিকেল বাগানোর মধ্যে খালি জায়গায় ১৬০ ফুট দীর্ঘ এবং ১২০ ফুট প্রস্থ এই পার্কটির নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের অর্থায়নে এক কোটি টাকা ব্যয়-বরাদ্দে সাগরপাড়ের মনোরম পরিবেশে দৃষ্টিনন্দন এই পার্কটি নির্মিত হয়েছে। ২০১৮ সালের পহেলা জানুয়ারি পার্কটির নির্মাণ কাজ উদ্বোধন করেন তৎকালীন জেলা প্রশাসক ড. মো. মাছুমুর রহমান। পার্কটিতে রয়েছে অকল্পনীয় সুযোগ-সুবিধা। সাগরে গোসল করতে নামার আগে পর্যটকরা এ পার্কটিতে থাকা লকার ব্যবহার করতে পারবেন। যেখানে জুতো-স্যান্ডেল, মোবাইল। টাকা-পয়সাসহ সবকিছু গচ্ছিত রাখতে পারবেন। নামে মাত্র সার্ভিস চার্জের বিনিময় এ লকার ব্যবহার করবেন পর্যটকরা। অন্তত দুই শ’ লকার থাকছে। থাকছে বাউন্ডারি ঘেরা। টিনশেড আধুনিক ডেকোরেশন সমৃদ্ধ একতলা আলাদা বিশ্রামাগার থাকছে। সেখানে সোফার ব্যবহার থাকছে। বসেই উত্তাল সমুদ্রে দৃষ্টি রাখতে পারবেন পর্যটক। সাগরে গোছল শেষে হাত-পা ধোয়ার জন্য পানির সরবরাহ লাইনসহ অসংখ্য ট্যাপ থাকছে। পুরুষ ও মহিলাদের আলাদাভাবে পোশাক-পরিচ্ছদ পাল্টানোর মতো স্পেস নিয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে। আলাদা প্র¯্রাবখানাসহ টয়লেটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অত্যাধুনিক সুবিধা সংবলিত ওয়াশরুম, ৫০ সিটের কফি হাউস থাকছে। প্রায় ৪০ ফুট দীর্ঘ দুই সারিতে কফি হাউসের আড্ডায় বসতে পারবেন আগতরা। থাকছে ক্যাফে কর্ণার। এমনকি ফি সপ্তাহের নির্দিষ্ট দিনে বিশেষ কনসার্টের ব্যবস্থা থাকবে এ পার্কটিতে। ইতোমধ্যে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। বাউন্ডারি নির্মিত হয়েছে। এ পার্কে বিশাল আকৃতির স্থায়ী ছাতা থাকছে। যার নিচে পর্যাপ্ত সংখ্যক চেয়ার থাকছে। রয়েছে বেঞ্চি। পার্কটি সবসময় প্রশাসনিক নিরাপত্তার আওতায় রাখা হবে। পার্ক অভ্যন্তরে বিশেষ কারণে পর্যটকরা রাত্রি যাপনেরও সুযোগ পাবেন। এমনকি পার্ক সংলগ্ন সীবিচে বোল্ডার দিয়ে সাগরের ঢেউয়ে বেলাভূমি ক্ষয়রোধেও বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। জিও টিউব দেয়া হয়েছে উত্তাল ঢেউয়ে যেন বীচের বেলাভূমের ক্ষয় বন্ধে। বর্তমানে এ পার্কটিকে ঘিরে কুয়াকাটায় আসা পর্যটক-দর্শনার্থীর বিনোদন কেন্দ্রীক একটি মাত্রা যোগ হচ্ছে। এছাড়া সাগরে গোসলের আগে কিংবা পরে যে বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হতে হতো তা লাঘব হবে। স্বাচ্ছন্দে সাগর উপভোগের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
কুয়াকাটা হোটেল-মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মোতালেব শরীফ জানান, জেলা প্রশাসন ট্যুরিজম পার্ক নির্মাণ করায় পর্যটকের দীর্ঘদিনের একটি দাবি পূরণ হলো। এজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, ট্যুরিজম বোর্ড এবং পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসককে তিনি ধন্যবাদ জানান। এটি কুয়াকাটার উন্নয়নের একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। ইতোমধ্যে এ পার্কটির ল্যান্ড রাইজিং, বাউন্ডারি ওয়াল, ইন্টারন্যাল রোড, বৈদ্যুতিক কাজসহ ভিআইপি রেস্ট হাউস, রেস্তরা, কনফারেন্স রুম, লকেট রুম, মহিলা ও পুরুষ টয়লেট, টিউবওয়েল ও বসার বেঞ্চি নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। শতকরা ৭৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বাকি ২৫ ভাগ কাজ সর্বোচ্চ তিন মাসের মধ্যে শেষ করতে ঠিকাদারকে সর্বোচ্চ তাগিদ দেয়ার কথা বললেন কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনিবুর রহমান ও উপজেলা প্রকৌশলী মো. আব্দুল মান্নান। এ দুই কর্মকর্তাও আগামি তিন মাসের মধ্যে পর্যটকের সুবিধার্থে পার্কটি চালুর কথা নিশ্চিত করলেন।
পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক ড. মোঃ মতিউল ইসলাম চৌধুরী জানান, পর্যটকের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল এ পার্কটি নির্মাণ করার। যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আধুনিক পর্যটনকেন্দ্রে উন্নীতের ধারাবাহিক একটি কাজ এই ট্যুরিজম পার্ক। আগামি তিন মাসের মধ্যে দৃষ্টিনন্দন এ পার্কটির নির্মাণ কাজ সম্পুর্ণভাবে শেষ করে উদ্বোধনের চেষ্টা চলছে। এটি চালু হলে পর্যটকরা স্বাচ্ছন্দে কুয়াকাটা উপভোগ করতে পারবে। এক কথায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মাস্টার প্ল্যান অনুসারে কুয়াকাটার উন্নয়নকে এগিয়ে নেয়া হচ্ছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ মহিব্বুর রহমান এমপি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কুয়াকাটার পরিকল্পিত উন্নয়নে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছেন। যা ১৯৯৮ সাল থেকে বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে পৌরসভা করেছেন। তিন নদীতে সেতু করেছেন। ট্যুরিজম পার্ক উদ্বোধন হলে পর্যটকের দীর্ঘদিনের একটি প্রত্যাশা পুরণ হবে। আর তা বাস্তবায়নে আমরা সচেষ্ট রয়েছি।
কেএস