ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
নতুন আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১০ শতাংশ কমেছে। আর এ পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা ৯৬ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সারা দেশে নতুন ৬ শ’ ৭৩ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। সেপ্টেম্বর মাসের শুরু থেকেই হাসপাতালগুলোতে নতুন ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সংখ্যা লক্ষ্যণীয়ভাবে কমে এসেছে।
বিগত ২৪ ঘণ্টায় নতুন আক্রান্ত ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১০ শতাংশ কমেছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী জানুয়ারি থেকে শুক্রবার পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা শেষে ছাড়পত্র নিয়ে চলে গেছেন ৭৬ হাজার ৯ শ’ ৩৭ জন। ছাড়পত্র প্রাপ্ত রোগীর সংখ্যা ৯৬ শতাংশ। বর্তমানে সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ভর্তিকৃত রোগী আছেন ২ হাজার ৯০০ জন। এ যাবত ৬০ জনের মৃত্যু ডেঙ্গু জনিত বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। আর দেশের সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালের চিকিৎসক ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে এ তথ্য জানা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে এ পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মোট ৯ জন চিকিৎসকসহ চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মারা গেছেন। কিন্তু সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান বলছে এ সংখ্যা ৯ নয়, ৫।
চিকিৎসকদের কেন্দ্রীয় সংগঠন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের কাছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকদের মৃতের সংখ্যা ৯ জন জানালেও সঠিক হিসাব নেই, আছে শুধু চারজনের নাম। বরং তারাই বলছে মৃতের সংখ্যা আরও বেশি কিন্তু তাদের কাছে সে তথ্য নেই। আর তারাও আইইডিসিআরের ডেথ রিভিউ কমিটির অপেক্ষায় আছেন জানিয়ে বিএমএর মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, আমাদের কাছে ৯ জনের মৃত্যুর খবর থাকলেও আমরা আইইডিসিআরের মৃত্যু নিশ্চিত করার অপেক্ষায় থাকি। তারা পাঁচজন জানিয়েছে। তবে সন্দেহ ৯ জন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে তারা জানান, আমাদের কাছে বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে মোট চারজন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর রয়েছে। এরা হলেন- হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. শাহাদাত হোসেন হাজরা, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক ডা. ইউলয়াম ¤্রং, ঢাকা মেডিকেল কলেজের এফসিপিএস পার্ট-২ এর শিক্ষার্থী ডা. তানিয়া সুলতানা এবং কুয়েত মৈত্রী সরকারি হাসপাতালের রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. নিগার নাহিদ দিপু। জানা যায়, এই চারজনের জন্য শোকদিবস পালনের প্রস্তাব বিএমএ থেকে প্রস্তুত করা হচ্ছে।
আবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে ডেঙ্গুতে চিকিৎসা সংশ্লিষ্টদের নিশ্চিত মৃত্যুর সংখ্যা পাঁচজন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুমের সহকারী পরিচালক জানান, ডেঙ্গুতে এ পর্যন্ত ৬০ জনের মৃত্যু নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে পাঁচজন চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। এখানে তিনজন এমবিবিএস পাস করা চিকিৎসক, একজন স্বাস্থ্য সহকারী, একজন এমবিবিএস পঞ্চমবর্ষের শিক্ষার্থী।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, হবিগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. মো. শাহাদাত হোসেন হাজরার মৃত্যু ডেঙ্গুতে হয়েছে কিনা তা এখনও নিশ্চিত নয়। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজধানীর পপুলার হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, আমাদের এক সহকর্মী চিকিৎসক প্রথমে জ¦রে আক্রান্ত হন। তিনি শুধু প্যারাসিটামল খেয়ে ডিউটিতে ছিলেন। কারণ তখন ঢাকায় ডেঙ্গু রোগীদের ব্যাপক চাপ ছিল হাসপাতালে। ঈদের ছুটি পর্যন্ত বাতিল করে আমাদের ডিউটি করতে হয়েছে। পরে তার অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়ায় দেশের বেসরকারি উন্নতমানের হাসপাতালে নেওয়া হলে তিনি মারা যান। এ ক্ষেত্রে তিনি যদি শুরুতে চিকিৎসার অন্তর্ভুক্ত থাকতেন তাহলে প্রাণ হারাতে হতো না হয়তো।
এ বিষয়ে বিএমএ’র সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ ই মাহবুব বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ যখন বেশি ছিল তখন ডাক্তাররা নিজের দিকে নজর না দিয়ে কাজ করে গেছেন। ছুটি বাদ দিয়ে সারাক্ষণ হাসপাতালে সেবা দিয়েছেন। তাদের মশা কামড়াতে পারে তা স্বাভাবিক। নার্সরা রয়েছেন আরও বিপাকে। তারা যে বিষয়টা সম্পর্কে জানে না বা সচেতন না তা নয়। তারাই ভালো জানে। যেহেতু দ্রুত চিকিৎসা নিলে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, অর্থাৎ তারা দায়িত্ব পালনের চাপে তা করতে গড়িমসি করেছেন। বিষয়টা দুঃখজনক। সমাধান হিসেবে তিনি আরও বলেন, তাই এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের পেশাজীবী সংগঠনদের বিষয়টা নজরে রাখা দরকার। তার চেয়ে বেশি দায়িত্ব সরকারে। কারণ চিকিৎসক তারই। তাই নিয়ম করা উচিত যে এমন সময় তারা যেন কড়া সেবার আওতায় থাকে। এজন্য অল্টারনেটিভ ব্যবস্থা রাখা জরুরি। আর এ কাজটা সরকারের করতে হবে। সংগঠনগুলো কার্যক্রমটাকে উল্লেখ করে দিতে পারে। তাছাড়া সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) কাছে ডেঙ্গু সন্দেহে ২০৩টি মৃত রোগীর তথ্য এসেছে। এ সন্দেহের সংখ্যা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৯৭ ছিল। এরমধ্যে ১০১টি মৃত্যু পর্যালোচনা করে ৬০টি ডেঙ্গুজনিত মৃত্যু নিশ্চিত করেছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে প্রতিদিনই মৃতের সংখ্যা বাড়ছে বলে জানা যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে। এ সংখ্যা এখনও সরকারি তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। হাসপাতলে ভর্তি হয়ে মৃত ৬০ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে এপ্রিলে ২, জুনে ৫, জুলাইয়ে ২৮ এবং আগস্ট মাসে ২৫ জন রয়েছেন। তাছাড়া এবারের ডেঙ্গুতে শিশুমৃত্যুর হারও সর্বোচ্চ বলে জানা যায় আইইডিসিআর সূত্রে।
সরকারের এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির মতে, ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত মৃত্যুর ৩৮ দশমিক ৫ শতাংশের বয়সই ১৮ বছরের নিচে। যাদের মধ্যে ১২ জনের বয়স ৫ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে। যা মোট মৃত্যুর ২৩ দশমিক ১ শতাংশ। ডেঙ্গুতে নিশ্চিত মৃত ৬০ জনের তথ্য বিশ্লেষণ করে আইইডিসিআরের বিশেষজ্ঞরা জানান, ৬০ জনের মধ্যে ৪০ জনের ডেঙ্গু শক সিন্ড্রোম এবং ৭ জনের হেমোরেজিক জ¦র ছিল। ২৩ জনের মধ্যে এর আগে ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া মৃতদের মধ্যে ২১ জনের বয়সই ১৮ বছরের নিচে।
এফএন/এমআর