বিএনপিকে রাজনীতি করতে দেওয়া হচ্ছে না: মোশাররফ

প্রথম পাতা » রাজনীতি » বিএনপিকে রাজনীতি করতে দেওয়া হচ্ছে না: মোশাররফ
শুক্রবার ● ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯


বিএনপিকে রাজনীতি করতে দেওয়া হচ্ছে না: মোশাররফ

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

বিএনপিকে রাজনীতি করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, আমরা জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দলকে সুসংগঠিত করছি। এজন্য যে কাউন্সিল করা দরকার, সে কাউন্সিল করতে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। তাতে বাধা দিচ্ছে সরকার। আপনারা দেখেছেন, ছাত্রদলের যে কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল, সেটাতেও কোর্ট থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে স্বাধীনতা ফোরাম আয়োজিত বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে এক অবস্থান কর্মসূচিতে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এসব কথা বলেন। ছাত্রদলের নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনে শনিবার কাউন্সিলের আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির বিদায়ী ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আমান উল্লাহর একটি আবেদনে বৃহস্পতিবার ঢাকার জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ নুসরাত জাহান কাউন্সিল আয়োজনে স্থগিতাদেশ দেন। আদালতের নোটিস পাওয়ার পর কাউন্সিল আয়োজনে যুক্ত বিএনপি নেতারা রাতে গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৈঠকে বসেন।
পরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, ছাত্রদলের কাউন্সিলে স্থগিতাদেশ দেওয়া গভীর চক্রান্তমূলক। সরকারের কারসাজিতেই এহেন আদেশ প্রদান করা হয়েছে। শুক্রবার খন্দকার মোশাররফ বলেন, আজকে বাংলাদেশে কোনো রাজনীতি নেই, আমাদেরকে রাজনীতি করতে দেয়া হচ্ছে না। একতরফা সব কিছু চলছে। বিএনপিকে ‘সুসংগঠিত করার জন্য’ বিভিন্ন পর্যায়ে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তৃণমূলে কাউন্সিল করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, আমরা মনে করি, আমাদের যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, আমাদের যে গণতান্ত্রিক চর্চার চেষ্টা- এটাতেও সরকার নানাভাবে বাধা দিচ্ছে। তিনি বলেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এ দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী। তিনি স্বৈরশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। খালেদা জিয়া এ দেশের গণতন্ত্রের প্রতীক, খালেদা জিয়া ‘গণতন্ত্রের মা’, ‘মাদার অব ডেমোক্রেসি’। কিন্তু এই সরকার তাঁকে আজ হীন উদ্দেশ্যে কারাগারে বন্দি করে রেখেছে।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন আরো বলেন, আজকে যারা ক্ষমতায়, তারা ১৯৭৫ সালে গণতন্ত্রকে হত্যা করে বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছিল। কিন্তু জিয়াউর রহমান বাকশালের পরিবর্তে বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। যখন তিনি বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন, তখন এই দেশে আওয়ামী লীগের অস্তিত্বই ছিল না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, আমরা বলতে চাই, জিয়াউর রহমান বাকশাল থেকে গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেছেন। আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া স্বৈরাচারকে হটিয়ে সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। এজন্য আজকে যারা ক্ষমতায়, তারাও এই ব্যাপারে ভীতু। এজন্য তারা (আওয়ামী লীগ) গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে না। এ জন্যই ৩০ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ২৯ ডিসেম্বর রাতেই ভোট ডাকাতি হয়ে গেছে। গণতন্ত্রের কথা শুনলে আওয়ামী লীগের গায়ে জ¦ালা ওঠে।
খন্দকার মোশাররফ আরো বলেন, আওয়ামী লীগ একতরফা নির্বাচন করার জন্য আমাদের নেত্রীকে জেলে নিয়ে রেখেছে। নেত্রীর কথামতো আমরা নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সেই নির্বাচনে ৮০ ভাগ লোক ধানের শীষে ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল। তখনই ২৯ ডিসেম্বর রাতে জনগণের ভোট ডাকাতি হয়ে গেল। গণতন্ত্রের পক্ষে বিএনপি, আর আওয়ামী লীগ বারবার প্রমাণ করেছে তারা গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করে না। আজকে প্রধান বিষয় হচ্ছে গণতন্ত্র; আর গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে না পারলে দেশের এ অবস্থা থেকে আমরা পরিত্রাণ পাব না। মহাসড়কে টোল আদায়ের সিদ্ধান্তে সরকারের অনড় অস্থানের সমালোচনা করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় টোল হাইওয়ে আছে, সেই হাইওয়ে বিভিন্ন কোম্পানিকে দেওয়া হয়। তারা তাদের টাকায় সেই হাইওয়ে নির্মাণ করে এবং টোল নিয়ে তারা তাদের মূলধন ও লাভ নিয়ে যায়। কিন্তু বাংলাদেশের মহাসড়ক নির্মাণ করা হয়েছে জনগণের টাকায়। আর গাড়ি এসব মহাসড়কে চলার জন্য সকল প্রকার রোড ট্যাক্স দেয়। তাহলে আবার টোল কেন? অর্থাৎ দেশের রাজস্ব ভা-ার এতই শূণ্য যে হাইওয়ে থেকে টোল নিয়ে সরকার চালাতে হচ্ছে। লুটপাটের কারণে ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হতে বসেছে মন্তব্য করে এই বিএনপি নেতা বলেন, আজকে বাংলাদেশ সরকারের দেশ চালানোর টাকা নাই। নানাভাবে ভ্যাট সম্প্রসারণ করে, জনগণের ওপর নানা রকম নির্যাতন করেও তারা রাজস্ব বৃদ্ধি করতে পারছে না। তারা নিজস্ব লাভের জন্য বড় বড় প্রজেক্ট করে মেগা কমিশন নিয়ে এখন আটকে গেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, আধা-সরকারি, স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে যা উদ্ধৃত্ত টাকা আছে তা সরকারকে দিয়ে দিতে হবে। তাহলে আগামীতে এই প্রতিষ্ঠানগুলো চলবে কীভাবে? এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ চাইলে দেশের ‘গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই’ মন্তব্য করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। সেজন্য সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
স্বাধীনতা ফোরামের উদ্যোগে এই মানবন্ধনে সভাপতিত্ব করে সংগঠনের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, শাহ নেছারুল হক, সাঈদ আহমেদ আসলাম, ফরিদউদ্দিন, কাজী মনিরুজ্জামান, মিয়া মো. আনোয়ার, সাঈদ হাসান মিন্টু, ইসমাইল তালুকদার খোকন, জাহাঙ্গীর আলম, জাতীয় দলের এহসানুল হুদা মানববন্ধনে বক্তব্য দেন।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৯:১৭:১৪ ● ৩৫৬ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ