ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
জেনারেল এইচএম এরশাদকে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের সুযোগ খালেদা জিয়াই করে দিয়েছিলেন বলে প্রধানমন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন তার প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
আগের দিন সংসদে দেওয়া সরকারপ্রধান শেখ হাসিনার বক্তব্যের জবাবে সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীতে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের এক সভায় বিএনপি মহাসচিব এ প্রতিক্রিয়া জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, (জাতীয় পার্টির প্রয়াত চেয়ারম্যান) হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে সঙ্গে নিয়েই শেখ হাসিনা এদেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছেন এবং তাদের গৃহপালিত বিরোধীদল বানিয়েছেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, তিনি (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) সংসদে এ ধরনের অসত্য কথা প্রায়ই বলেন। যে কথার কোনো ভিত্তি নেই। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় না। বরং সত্য হচ্ছে এটাই একজন নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে সরিয়ে দিয়ে এরশাদ যখন রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করেন, তখন তিনি (শেখ হাসিনা) ভারত সীমান্তে বলেছিলেন, আই অ্যাম নট আনহ্যাপি, অর্থাৎ তিনি অখুশি নন। পরবর্তীকালে তার কাজ দেখেই আমরা বুঝতে পারি, তিনি এরশাদকে সঙ্গে নিয়েই এই দেশের গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছেন, মানুষের অধিকারকে কেড়ে নিয়েছেন। বরাবরই তিনি এরশাদকে সঙ্গে নিয়ে জোট করেছেন। তাদের সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্রকে হত্যা করে ওই পার্টিকে বিরোধীদলে বসিয়েছেন। যেটাকে আমরা সবসময় বলি, এরশাদ ছিলেন শেখ হাসিনার গৃহপালিত বিরোধীদলীয় নেতা।
রোববার একাদশ জাতীয় সংসদের চতুর্থ অধিবেশনের শুরুতে বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের মৃত্যুতে আনা শোক প্রস্তাবের উপর আলোচনায় প্রসঙ্গক্রমে তার ক্ষমতা দখলের বিষয়ে কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ১৯৮২ সালে এরশাদকে ক্ষমতা দখলের সুযোগ করে দিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। বিনিময়ে তিনি দুটি বাড়ি ও নগদ ১০ লাখ টাকাসহ অনেক সুযোগ-সুবিধা পেয়েছিলেন। যে কারণে জিয়ার হত্যার ব্যাপারে যে মামলা হয়েছিল, সেই মামলাটা বিএনপি চালায়নি। তবে, বহু বছর পরে ১৯৯১ সালে বা তার পরে খালেদা জিয়া জেনারেল এরশাদকে তার স্বামী হত্যার জন্য দায়ী করেছেন। এর জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, এরশাদকে সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনাই দেশে গণতন্ত্র ধ্বংস করেছেন। এরশাদ ‘সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগের, শেখ হাসিনার’ গৃহপালিত বিরোধী দলীয় নেতা ছিলেন। তার মৃত্যুর পরে সেই দায়িত্ব নিয়েছেন রওশন এরশাদ।
মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের পুনপ্রবর্তক ও আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার ছিলেন জিয়াউর রহমান। আজকের গণতন্ত্রের অন্যতম সেনানী যিনি আজীবন গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছেন, সেই খালেদা জিয়াকে অবৈধ দখলদার সরকার বেআইনিভাবে কারাগারে আটকে রেখেছে। তিনি অত্যন্ত অসুস্থ। আজকের এই দিনে মহিলা দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আল্লাহর কাছে এই দোয়া করছি, আল্লাহ তাকে যেন অবিলম্বে মুক্ত করেন। আমাদের মাঝে নেতৃত্ব দিয়ে দেশ ও গণতন্ত্রকে আবার মুক্ত করতে পারেন। তিনি বলেন, আজকে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার, গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করার শপথ নিয়েছে মহিলা দল। আমরা আশা করি সম্মিলিত আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো এবং গণতন্ত্রকে মুক্ত করবো।
জিয়ার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদনকালে আরও উপস্থিত ছিলেন মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস, সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ, সিনিয়র সহ-সভাপতি নূর জাহান ইয়াসমিন, সহ-সভাপতি জেবা খান, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, ঢাকা মহানগর উত্তরের সহ-সভাপতি মেহেরুন্নেসা হক, সাধারণ সম্পাদক আমেনা খাতুন, যুগ্ম-সম্পাদক রাবেয়া আলম, ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি রাজিয়া আলিম, সাধারণ সম্পাদক শামসুন্নাহার ভূইয়া, যুগ্ম-সম্পাদক রোকেয়া চৌধুরী বেবী প্রমুখ।
এফএন/এমআর