সাগরকন্যা ডেস্ক ॥
রংপুর-৩ সদর আসনে উপ-নির্বাচনে লড়তে জাতীয় পার্টির এরশাদের পুত্র সাদ ও ভাতিজা আসিফ আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ ৯ জন মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন। সোমবার সকাল ১০ টা থেকে বিকেলে ৫ টার মধ্যে তারা এই মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এ সময় লাঙ্গল ও নৌকা প্রতিকের প্রার্থী বিশাল শোডাউন নিয়ে খোদ নির্বাচন অফিসের ভিতরেই মিছিল করেন। তবে জাতীয় পার্টির মহাসচিব নির্বাচন অফিসে গেলেও আচরণবিধি মেনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে যান নি। অন্যদিকে দলীয় কোন্দলের কারণে স্থানীয় কোন নেতাকর্মী ছিলেন না বিএনপি প্রার্থীর সাথে। সব মিলে মনোনয়ন জমা দেয়ার শেষ দিনে উৎসবের নগরী হয়ে উঠেছিল রংপুর।
রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রংপুর-৩ আসনের উপ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা জিএম সাহাতাব উদ্দিন জানান, ১২ জন প্রার্থী মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেছিলেন। এরমধ্যে ৯ জন জমা দিয়েছেন। তারা হলেন, জাতীয় পার্টির রাহগীর আল মাহী সাদ এরশাদ, আওয়ামী লীগের অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু, বিএনপির রিটা রহমান, স্বতন্ত্র এরশাদের ভাতিজা হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ, বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী কাওছার জামান বাবলা, এনপিপির শফিউল আলম, খেলাফত মজলিসের তৌহিদুর রহমান মন্ডল রাজু, গণফ্রন্টের কাজী মোঃ শহীদুল্লাহ, বাংলাদেশ কংগ্রেসের একরামুল হক।
আচরণবিধি লংঘন: সকাল থেকেই নির্বাচন অফিসের আশপাশে ভির জমান জাতীয় পার্টির নেতাকর্মীরা। বেলা পৌনে ৩ টায় বিশাল শোডাউন নিয়ে সাদ এরশাদ নির্বাচন অফিসে আসেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন জাতীয় পার্টি মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি অফিসে প্রবেশ করলেও নির্বাচন কর্মকর্তার রুমে যান নি। নীচের একটি রুমে অপেক্ষা করেন। সাদ এরশাদ রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ফয়সাল চিশতি, জেলা জাতীয় পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজি আবদুর রাজ্জাক, শাফিউল ইসলাম শাফী, সাংগঠনিক সম্পাদক মুনশি আবদুল বারী, জেলা ছাত্রসমাজের আহ্বায়ক আশরাফুল হক জবা, যুগ্ম আহ্বায়ক সোবহান মজিদ বিদ্যুৎ, যুব সংহতির সাধারণ সম্পাদক হাসানুজ্জামান নাজিম, স্বেচ্ছাসেবক পার্টির সভাপতি শামীম সিদ্দিকিকে নিয়ে তার মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, পিতা এরশাদের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করই তার ব্রত। মনোনয়ন পত্র দাখিল শেষে ফিরে যাওয়ার সময় আবারও শ্লোগান দেন নেতাকর্মীরা। এর আগে তিনি সৈয়দপুর বিমানবন্দর থেকে এসে পল্লী নিবাসে মহাসচিবসহ এরশাদের কবর জিয়ারত করেন এবং মাওলানা কারামত আলী জৈনপুরির মাজার জিয়ারত করেন।
অন্যদিকে বেলা পৌনে চারটায় বিশাল শোডাউন নিয়ে নির্বাচন অফিসের নিচ তলায় অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী রংপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যডভোকেট রেজাউল করিম রাজু। এ সময় নৌকা নৌকা শ্লোগানে পুরো নির্বাচন অফিস মুখরিত হয়ে উঠে। পরে তিনি জেলা সভাপতি মহানগর সভাপতি সাফিউর রহমান সফি, সেক্রেটারী তুষারকান্তি মন্ডলসহ আওয়ামী লীগ ও সকল অঙ্গ এবং সহযোগি সংগঠনের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। নিচে নেমে এসে তিনি সাংবাদিকদের জানান, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবো আমরা। অন্য একটি পক্ষ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে এখানে মহাজোটের প্রার্থী হবে। কথাটি ঠিক নয়। নৌকা থাকবে এবং বিজয়ী হবে।
নেতাকর্মী ছিল না রিটা রহমানের পাশে: অন্যদিকে বিএনপি মনোনিত প্রার্থী রিটা রহমান দলীয় কোন্দলের কবলে পড়ে যান রংপুর এসেই। ফলে জেলা ও মহানগর বিএনপি এবং অঙ্গ ও সহযোগি সংগঠনের কোন স্তরের নেতাকর্মী তার মনোনয়নের সময় উপস্থিত ছিলেন না। অনেকটা নিসঙ্গ অবস্থায় তিনি মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু রংপুরে আসলেও তিনিও তার সাথে যান নি। তিনি নেতাকর্মীদের সাথে বৈঠক করা নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। মনোনয়ন দাখিল করে এসে তিনি বলেন, দলীয় কোন্দল ঠিক হয়ে যাবে। আচরণবিধি মেনে আমি মনোনয়ন দিয়েছি। বিজয় আমাদের হবেই।
এর আগে বিভিন্ন সময়ে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মরহুম পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ভাতিজা সাবেক এমপি হোসেন মকবুল শাহরিয়ার আসিফ সহ অন্যান্যরা।
আচরণবিধি লংঘনের ব্যপারে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, আমি সাদ এরশাদের সাথে আসলেও আমি রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে যাই নি। এখানে আমি মহাসচিব হিসেবে আমাকে দায়িত্ব পালন করতে এসেছি। এরশাদ বেঁচে থাকাকালীন সময়েও আমি এভাবেই আপনাদেও কাছে এসেছিলাম।
এ প্রসঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তা জিএম সাহাতাব উদ্দিন বলেন, আচরণবিধি লঙঘনের ব্যপারে আমরা প্রার্থীদের কড়া সতর্ক বার্তা দিয়েছি। মাইকিং চলছে। ৪ জন ম্যাজিষ্ট্রেট নিয়োগ দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার থেকে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হবে।
গত ১৪ জুলাই রংপুর সদর ৩ আসনের এমপি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিরোধী দলীয় নেতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর ১৬ জুলাই আসনটি শুন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। গত ১ সেপ্টেম্বর আসনটিতে নির্বাচনের জন্য তফশিল ঘোষণা করা হয়। তফশিল অনুযায়ী আগামি ৫ অক্টোবর এখানে ভোট গ্রহন হবে ইভিএম পদ্ধতিতে। এজন্য মনোনয়ন পত্র জমা ও দেয়া যাবে ৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। বাছাই হবে ১১ সেপ্টেম্বর। প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৬ সেপ্টেম্বর। রংপুর সদর উপজেলা এবং রংপুর সিটি করপোরেশনের ১-৮ নম্বর ওয়ার্ড ছাড়া বাকি এলাকা নিয়ে গঠিত রংপুর-৩ আসনে ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৪১ হাজার ৬৭৩ জন। এই আসনে ভোটকেন্দ্র ১৩০টি, ভোটকক্ষ ৯১০টি।
এফএন/কেএস