গুলশান হামলায় টাকা আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে: র‌্যাব

প্রথম পাতা » সর্বশেষ » গুলশান হামলায় টাকা আসে মধ্যপ্রাচ্য থেকে: র‌্যাব
শনিবার ● ২৬ জানুয়ারী ২০১৯


---

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
২০১৬ সালে রাজধানীর গুলশানের অভিজাত হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় চাঞ্চল্যকর হামলার জন্য মধ্যপ্রাচ্য থেকে ৩৯ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছিল বলে এক জঙ্গিকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে দাবি করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। শনিবার সকালে রাজধানীর কারওয়ানবাজারের র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে হলি আর্টিজানে হামলার মামলার সবশেষ পলাতক আসামি মো. শরিফুল ইসলাম ওরফে খালিদের (২৭) গ্রেফতার পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। র‌্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ খান বলেন, শুক্রবার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল-মহিপুর সড়ক থেকে শরিফুলকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি জামা’য়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) শীর্ষ নেতা। ব্রিফিংয়ে মুফতি মাহমুদ খান জানান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) অধ্যয়নরত অবস্থায় শরিফুল সহপাঠী শোভনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন। তিনি হলি আর্টিজান হামলার চার্জশিটভুক্ত শেষ আসামি। আত্মগোপনে থেকে তিনি আবারও জঙ্গিদের সংগঠিত করার তৎপরতা চালাচ্ছিলেন। তবে গতকাল (শুক্রবার) তাঁকে গ্রেফতারের মাধ্যমে জঙ্গিদের সব পরিকল্পনা নস্যাৎ করা হয়। এর আগে ২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল সংঘবদ্ধভাবে রাবির ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. রেজাউল করিমকে হত্যা করে আত্মগোপনে চলে যান শরিফুল। ওই বছরই পহেলা জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলার পরিকল্পনায় শরিফুলের বিশেষ ভূমিকা ছিল, বলেন র‌্যাব মুখপাত্র। কেন রেজাউল করিমকে হত্যা করা হয়েছিল সেটার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা না দিলেও বিভিন্ন সময় মুক্তমনাদের ওপর টার্গেট কিলিংয়ের মতোই ওই হত্যাকা- বলে জানায় র‌্যাব। র‌্যাব কর্মকর্তা ওই হত্যাকা- প্রসঙ্গে জানান, শরিফুল তাঁর আমিরের নির্দেশে রাবির অধ্যাপককে হত্যা করে আত্মগোপনে চলে যান। এর তিনমাস পর গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলা করে আবারও সুকৌশলে আত্মগোপন করেন তিনি। এরপর ২০১৭ সালের অক্টোবরে পুনরায় প্রকাশ্যে এসে জঙ্গিদের সুসংগঠিত করার চেষ্টা করেন শরিফুল। এবারে উদ্দেশ্য ছিল দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা। কিন্তু তাঁর সব পরিকল্পনা র‌্যাব একে একে ভেস্তে দিতে থাকলে আবারও আত্মগোপনের পথ বেছে নেন তিনি। কিন্তু এবারে আত্মগোপনে থাকা অবস্থায়ও শরিফুল জঙ্গিদের সংগঠিত করে বিভিন্ন অপতৎপরতার চেষ্টা করছিলেন বলে আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল। বারবার নিজের অবস্থান বদল করছিলেন তিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে র‌্যাবের হাতে ধরা পড়তে হলো। শরিফুল রাবি অধ্যাপক হত্যা মামলার মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আসামি, বলেন মুফতি মাহমুদ খান।
র‌্যাব মুখপাত্র আরো বলেন, অধ্যাপক রেজাউল করিমকে হত্যার পর আত্মগোপনে থাকা অবস্থায় হলি আর্টিজান হামলার উদ্দেশে শরিফুল ও গত সপ্তাহে গ্রেফতার আরেক জঙ্গি নেতা রিপন মধ্যপ্রাচ্য থেকে ৩৯ লাখ টাকা সংগ্রহ করেছিল। তবে মধ্যপ্রাচ্য থেকে সেসব টাকা কে বা কারা দিয়েছিল সে ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানাননি র‌্যাবের মুখপাত্র। এ ব্যাপারে আসামিকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানানো হয়। র‌্যাব জানায়, শরিফুলের জন্ম রাজশাহী জেলার বাগমারা এলাকায়। তিনি বাগমারা উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও রাজশাহী সিটি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করার পর ২০১০-১১ সেশনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগে ভর্তি হন। সেখানে তিন বছর পড়াশোনার পর সহপাঠী শোভনের মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন। হলি আর্টিজান মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় বন্দুকধারীরা। হামলার পর রাতেই তারা ২০ জনকে হত্যা করে। সেদিনই উদ্ধার অভিযানের সময় বন্দুকধারীদের বোমার আঘাতে নিহত হন পুলিশের দুই কর্মকর্তা। পরের দিন সকালে যৌথ বাহিনীর অভিযানে নিহত হয় পাঁচ হামলাকারী। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরেকজনের মৃত্যু হয়। জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) এ হামলার দায় স্বীকার করে। সংগঠনটির মুখপাত্র ‘আমাক’ হামলাকারীদের ছবি প্রকাশ করে বলে জানায় জঙ্গি তৎপরতা পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স।’ এ ঘটনায় গুলশান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করে পুলিশ।

এফএন/এনইউবি

বাংলাদেশ সময়: ১৩:৪৭:০৬ ● ৫১২ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ