ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
ঢাকার সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে পুলিশের উপর হাতবোমা হামলার ঘটনাকে ছোট করে দেখা ঠিক হবে না বলে মনে করেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি মনে করেন, এটা জঙ্গিদের বড় ধরনের হামলার ‘টেস্ট কেস’ (পূর্বপ্রস্তুতি) হতে পারে, প্রথমে পুলিশের উপর হামলা হলেও পরে আক্রান্ত হতে পারেন মন্ত্রী-সংসদ সদস্যরাও।
শনিবার রাতে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় দিয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের গাড়ি অতিক্রমের পরপরই পুলিশ বক্সে হাতবোমা হামলা হয়। এতে দুই পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। রবিবার (১ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, টার্গেট নিঃসন্দেহে পুলিশ। হতে পারে এরা ছোটখাটো ঘটনা দিয়ে ‘টেস্ট কেইস’ করতে চাচ্ছে, বড় ধরনের কোনো হামলা করার জন্য, তার পূর্বপ্রস্তুতিও হতে পারে। এ হামলা রাজনীতিবিদদের উপর হুমকি কি না- প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি পুলিশের আইজি ও কমিশনারের সাথে কথা বলেছি। তারা নিশ্চিত করেছেন, মন্ত্রী এখানে টার্গেট ছিল না। এ ধরনের ছোট ছোট ঘটনার মাধ্যমে.. এখন পুলিশ টার্গেট পরবর্তীতে মন্ত্রী-এমপিরা টার্গেট হবে না, এমন তো নয়, হতেও তো পারে।
জঙ্গি তৎপরতা এখনও রয়েছে কি না- প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, তা তো অবশ্যই আছে, দুর্বল হয়েছে, কিন্তু নিষ্ক্রিয় হয়েছে মনে করার কারণ নেই। এটা এখন পৃথিবীর সব দেশেই ঘটছে এ ঘটনা। তলে তলে প্রস্তুতি নিচ্ছে বড় ধরনের হামলার জন্য, আমার কাছে মনে হয়। পুলিশের উপর তিন-চারটি হামলা টেস্ট কেইস হিসেবে নিতে পারে পরবর্তীতে বড় ধরনের হামলা করার জন্য। ২০১৬ সালে গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে নজিরবিহীন হামলার আগে কয়েক বছর ধরে ব্লগার, শিক্ষক, সংস্কৃতিকর্মীদের উপর বিক্ষিপ্ত হামলা চলছিল। গুলশান হামলার পর নিরাপত্তা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে জঙ্গি তৎপরতা কমে এলেও সম্প্রতি পুলিশকে লক্ষ্য করে কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটেছে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, এর আগে মালিবাগে, গুলিস্থানে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছে, রিমোর্ট কন্ট্রোলড বোমা। এসব হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি গোষ্ঠী আইএসের নামে দায় স্বীকারের বার্তা এলেও তা উড়িয়ে দিচ্ছেন বাংলাদেশের পুলিশ কর্মকর্তারা। তবে দেশীয় জঙ্গিরা তা ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে তাদের ধারণা। জঙ্গি দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশংসা করেই তিনি বলেন, জঙ্গি দমনে ট্র্যাক রেকর্ড ভালো, তবে এ বিষয়টি (সাম্প্রতিক হামলা) তারা আমার মনে হয় উদ্ঘাটন করতে পারেনি। তবে এখন সতর্ক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে জানিয়ে কাদের বলেন, এ চক্রটাকে বের করার জন্য অনুসন্ধান চলছে। এ ধরনের হামলার প্রতিরোধে গোয়েন্দা ব্যর্থতা রয়েছে কি না- প্রশ্নে তিনি বলেন, গোয়েন্দারা তো এ যাবৎ জঙ্গি দমন ও নিয়ন্ত্রণে যথেষ্ট সফলতার পরিচয় দিয়েছে, এ বিষয়ে তারা সফল হবে বলে আশা করি।
সম্প্রতি ফেসবুকে ‘নতুন মোটরযান আইন (সংশোধনী)’ নিয়ে ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এ নিয়ে পরিবহন সেক্টরে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে। পরিবহন সেক্টরে নতুন একটি আইন প্রণয়ন ও জরিমানা বাড়ানোর যে খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রটানো হচ্ছে তা বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য চক্রান্ত বলে জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের বলেন, মোটরযান আইন নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটা গুজব রটানো হচ্ছে যে এখানে বিভিন্ন বিষয়ে জরিমানা বাড়ানো হয়েছে। আসলে এটা তো মোটরযান আইন না, এটা সড়ক পরিবহন আইন। ওবায়দুল কাদের বলেন, নতুন মোটরযান আইন তৈরিই হয়নি। আমাদের আইন হচ্ছে ‘সড়ক পরিবহন আইন’। এটার নামই তো ভুল। এগুলো অহেতুক, নামটা যেমন ভুল, তেমনি এসব জরিমানার হারও মনগড়া। স্বার্থান্বেষী মহল বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য মালিক-শ্রমিককে উস্কে দেওয়ার জন্য চক্রান্ত ও পায়তারা করেছে। পরে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে সড়ক পরিবহন সেক্টরে ‘নতুন মোটরযান আইন (সংশোধনী) ২০১৯’ নামে কোনো আইন নেই। ২০১৮ সালে জাতীয় সংসদে পাস হওয়া সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ কার্যকর করতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা করে বিধিমালা প্রণয়নের কাজ করছে।
‘নতুন মোটরযান আইন (সংশোধনী) ২০১৯’ কে গুজব উল্লেখ করে অপপ্রচার ও গুজরে বিভ্রান্ত না হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে। অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে ২৬ সিটের মিনিবাস ৪১ সিট করা নিয়ে এক প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের বলেন, এখানে যে একটা ফাঁকি আছে এবং এ ধরনের অপকর্ম হয়ে আসছে। সর্ষের মধ্যেও ভূত আছে। বিষয়গুলো বন্ধ করার জন্য শক্তিশালী একটা টাস্কফোর্স করার জন্য প্রস্তাব আছে।
সাংবাদিকদের নবম ওয়েজ বোর্ডের সুপারিশ মন্ত্রিসভায় কেন পাস হচ্ছে না- এ প্রসঙ্গে ওবায়দুল কাদের বলেন, এটা ক্যাবিনেটে পাস করার কোনো বিষয় নয়। এটা প্রধানমন্ত্রীর কাছে সামারি আকারে যাবে, সেটা রেডি হচ্ছে। যে কোনো দিন প্রধানমন্ত্রীর কাছে যেতে পারে। সেখান থেকেই সিদ্ধান্ত আসবে। সাংবাদিকদের প্রশ্নে ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন, আগামি অক্টোবরে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল আয়োজনের প্রস্তুতি থাকলেও এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। আমাদের জাতীয় সম্মেলন অক্টোবরেই হওয়ার কথা। অক্টোবরে এখনও ঠিক আছে। আমরা তো পরিবর্তন করিনি। পরিবর্তন করলে ওয়ার্কিং কমিটির মিটিং ডেকে তা করার বিষয় আসবে। তাহলে কি অক্টোবরেই চূড়ান্ত- প্রশ্ন করলে কাদের বলেন, এই মুহূর্তে বলা যাবে না। আমরা এক মাসের নোটিস দিয়েও জাতীয় সম্মেলন অতীতে করেছি। তবে আমাদের প্রস্তুতি চলছে।
ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ না পাওয়াদের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ছাত্রলীগের কমিটিকে বলা হয়েছে, রিভিজিট করার জন্য যদি কেউ রিয়েলি বঞ্চিত হয়ে থাকে। আর ছাত্রলীগের কমিটিতে যদি কাউকে নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ থাকে, ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন নেতা আছেন, আমাদের নেত্রী দায়িত্ব দিয়েছেন। তারা বিষয়টি বিবেচনা করবেন। তিনি বলেন, যারা পদবঞ্চিত বলে পরিচিত, তারা তো রাস্তায় এখন আন্দোলন করছে না। কাজেই নিশ্চয়ই এটার একটা প্রক্রিয়া চলছে। সে কারণে তারাও কোনো বিক্ষোভ দেখাচ্ছে না।
ভারতের বাংলাদেশ লাগোয়া রাজ্য আসামের নাগরিকপঞ্জি নিয়ে এখনই কোনো মন্তব্য করতে চাননি ওবায়দুল কাদের। নানা বিতর্কের মধ্যে আসামের চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জি শনিবার প্রকাশিত হয়েছে, যে তালিকায় রাজ্যটির বাসিন্দা ১৯ লাখ মানুষের নাম স্থান পায়নি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর আগে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে আসামে যারা আবাস গেঁড়েছেন, তারাই তালিকায় রয়েছেন। নাগরিকপঞ্জিতে বাদ পড়াদের ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করে ভারত থেকে বের করে দেওয়া হতে পারে বলে বাংলাদেশের মধ্যেও কারও কারও উদ্বেগ রয়েছে; যদিও এর চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে আরও কয়েকটি ধাপ বাকি রয়েছে।
রোববার সচিবালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদেরের কাছে আসামের নাগরিকপঞ্জি নিয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা। জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে এটা পর্যবেক্ষণ করছি এ কারণে এখানে যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া আছে, আপিল করার সুযোগ আছে উচ্চ আদালতে। কাজেই বিষয়টি সম্পর্কে এ মুহূর্তে সুপ্রিম রিমার্কস করার সুযোগ নেই। নাগরিকপঞ্জিতে বাদ পড়াদের ফেরত পাঠানোর সম্ভাবনার বিষয়টি ভারতের গণমাধ্যমে আসছে। ফলে বাংলাদেশের কোনো প্রস্তুতি রয়েছে কি না- জানতে চাইলে কাদের বলেন, আমরা সতর্ক আছি। আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। তবে যে কোনো সমস্যা দেখা দিলে আলোচনার মধ্য দিয়ে তা সমাধানে বাংলাদেশ সরকারের আগ্রহের কথা জানান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের।
তিনি বলেন, যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য আমরা তৈরি আছি। আমরা তো কারও সাথে যুদ্ধ করতে যাচ্ছি না, আমরা পিসকে ওন করার চেষ্টা করছি এবং যে কোনো সমস্যা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বাংলাদেশের সংবিধান ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব কারও সাথে শত্রুতা নয়’- এ নীতির ভিত্তিতে আলাপ-আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করতে চাইছি। রোবাবার ছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, এত বছরে বিএনপিকে কীভাবে মূল্যায়ন করবেন- প্রশ্নে কাদের বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তাদের শুভ কামনা করি। তারা নেতিবাচক রাজনীতি পরিহার করে ইতিবাচক রাজনীতিকে আলিঙ্গন করবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
এফএন/এমআর