ঢিলেঢালা নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে বন্ধ হচ্ছে না ট্রেনে মাদক পাচার

প্রথম পাতা » জাতীয় » ঢিলেঢালা নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে বন্ধ হচ্ছে না ট্রেনে মাদক পাচার
শনিবার ● ৩১ আগস্ট ২০১৯


ঢিলেঢালা নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে বন্ধ হচ্ছে না ট্রেনে মাদক পাচার

ঢিলেঢালা নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণে বন্ধ হচ্ছে না ট্রেনে মাদক পাচার

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

মাদক পাচারকারী ও চোরাচালানিরা এখনো রেলপথে সক্রিয়। মূলত ঢিলেঢালা নিরাপত্তা ব্যবস্থার কারণেই রেলপথে মাদক পাচার ও চোরাচালান বন্ধ হচ্ছে না। এসব অপরাধ বন্ধে যে আধুনিক সরঞ্জাম দরকার, সংশ্লিষ্টদের কাছে তা নেই। ফলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রেলপথে মাদক ও চোরাচালান বিরোধী অভিযানের সফলতা মিলছে না।
রেলে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৪ লাখ যাত্রী চলাচল করে। মাদক পাচারকারী ও চারাকারবারিরা যাত্রী সেজে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে লুকিয়ে মাদক পাচার চালিয়ে যাচ্ছে। আর বছরের পর বছর এভাবে চললেও তারা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। প্রায় দু’যুগ আগে থেকেই অপরাধীদের ধরতে প্রতিটি স্টেশনের প্রবেশ ও বহির্গমন পথে বডি এবং লাগেজ স্ক্যানার বসানোর দাবি উঠেছিল। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা কোথাও বসানো হয়নি। ফলে পরিস্থিতির তেমন উন্নতি ঘটছে না। বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্বাধীনতার পর থেকেই রেলপথে মাদক পাচার হয়ে আসছে। নব্বইয়ের দশকের পর আগ্নেয়াস্ত্র, ফেনসিডিল, গাঁজা, নেশার ইনজেকশনসহ বিভিন্ন প্রকার মাদকদ্রব্য পাচারের নিরাপদ রুট হয়ে ওঠে রেলপথ। বিভিন্ন কৌশলে ওসব অবৈধ মালামাল পাচার হয়ে আসছে। এমনকি রেলপথে নারী চোরাকারবারিদের তৎপরতাও লক্ষণীয়। যাত্রীবেশে তরুণীসহ নানা বয়সী মহিলারা শরীরের স্পর্শকাতর অংশে ইয়াবা-হেরোইন লুকিয়ে রাজধানীসহ বিভাগীয় শহরগুলোতে পৌঁছে দিচ্ছে। ইদানীং পুরুষরা মুখে কিংবা পায়ুপথে বিশেষ কৌশলে ইয়াবা ঢুকিয়ে পাচার করছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পাচারকারী এমন অনেক অপরাধীকে রেলওয়ে পুলিশ আটকও করেছে। রেলওয়েতে মহিলা পুলিশ নেই বললেই চলে। এ কারণে সন্দেহভাজন নারী যাত্রীদের দেহ তল্লাশি করা সম্ভব হচ্ছে না। গত ১০ বছরে নারী, বিভিন্ন স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থীসহ বহু চোরাকারবারি আটক হয়েছে। তাদের কাছ থেকে অস্ত্র, ফেনসিডিলসহ লাখ লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করা হয়েছে।
প্রতিদিন কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলস্টেশন হয়ে প্রায় পৌনে ২ লাখ যাত্রী রাজধানীতে প্রবেশ করে। এর প্রায় ৯৮ শতাংশই বিনা তল্লাশিতে স্টেশন ত্যাগ করে। শুধু গোপন সংবাদের ভিত্তিতেই অপরাধী ও অবৈধ মালামাল জব্দ করতে পারে পুলিশ সদস্যরা। সূত্র জানায়, মাদক বহনে ট্রেন সবচেয়ে নিরাপদ। পাচারকারীরা খুব সহজেই টয়লেট ব্যবহার করতে পারে। টয়লেটে বসে পেটের ভেতর কিংবা বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে রাখা মাদক নিজের সুবিধার্থে নাড়াচাড়া করে নিতে পারে। পূর্বাঞ্চল থেকে আসা এসব মাদক বিভিন্ন ট্রেনে পশ্চিমাঞ্চলে পাচার হয়। অনেক সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অবৈধ মালামাল বহনের খবর পুলিশের কাছে পৌঁছার বিষয়টি অপরাধীরা জেনে যায়। সংবাদ পাওয়ার পরপরই চোরাকারবারিরা ট্রেনের ব্যাকম (হাওয়া) ছেড়ে বিভিন্ন স্থানে ট্রেন দাঁড় করিয়ে অনায়াসে নেমে পড়ে। এভাবে পুলিশের বহু অভিযান ব্যর্থ হয়ে গেছে। তাছাড়া পূর্ব কিংবা পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা অধিকাংশ ট্রেন বিশেষ করে টঙ্গি থেকে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত ট্রেনগুলো ধীরগতিতে চালানো হয়। এ পথের প্রায় ৬টি স্থানে খুব ধীরগতিতে চলে ট্রেন। কখনও কখনও ৩০-৪০ সেকেন্ড সময় ট্রেন দাঁড় করানো হয়। তেজগাঁও রেলওয়ে বস্তি এলাকায়ও ট্রেন খুবই ধীরগতিতে চলে। ধীরগতি কিংবা দাঁড়ানো অবস্থার সুযোগে মাদকদ্রব্য নিয়ে সহজেই নেমে পড়ে অপরাধীরা। বিভিন্ন সময় কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলস্টেশনে ইয়াবাসহ মাদক চোরাকারবারি আটক হলেও অন্যসব স্টেশনে চোরাকারবারিদের আটকের খবর খুব একটা শোনা যায় না।
সূত্র আরো জানায়, সম্প্রতি বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ট্যাবলেট ও অন্যান্য মাদকসহ শেরপুরের আসলাম হোসেন, কুড়িগ্রামের হাসেন মিয়া, রাজিবপুরের বিল্লাস হোসেন, দেওয়ানগঞ্জের বারাজ মিয়া, মিলু মিয়া, মানিক ও মনিরকে আটক করে দেওয়ানগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ। দেওয়ানগঞ্জ রেলস্টেশন হয়ে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকের চালান কুড়িগ্রাম, শেরপুর, গাইবান্ধা, রংপুরসহ পুরো উত্তরাঞ্চলে চলে যায়। একই সঙ্গে সীমান্ত এলাকা থেকে ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদক দেওয়ানগঞ্জ-জামালপুর রেলস্টেশন হয়ে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় পৌঁছে। অগ্নিবীণা ও পদ্মা এক্সপ্রেস ট্রেনের মাধ্যমে মাদক পাচার হয়। তাছাড়া দ্রুতযান, একতা, সিল্কসিটি, লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনের মাধ্যমেও মাদক পাচার হয়।
এদিকে রেলওয়ে পুলিশ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেলপথে মাদক পাচার পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে ট্রেনে মাদক পাচার আগের চেয়ে কমে এসেছে। দেশের রেলপথের সবকটি স্টেশন এক প্রকার উন্মুক্ত। হাজার হাজার ট্রেনযাত্রী প্রতিদিন স্টেশনগুলো হয়ে চলাচল করছেন। পুলিশ শুধু গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালায়। তাতে কখনো সফল হয়, কখনো হয় না। কারণ বিপুলসংখ্যক যাত্রীর বডি তল্লাশি করা সম্ভব নেই। আর স্টেশনগুলোতে নেই কোনো স্ক্যানার মেশিন কিংবা আধুনিক সরঞ্জাম। বিভিন্ন জেলা কিংবা সীমান্ত এলাকা হয়েই ট্রেনে মাদক আসছে। মাদক পাচার বন্ধে সমন্বিত চেষ্টা দরকার।
কমলাপুর, বিমানবন্দর, চট্টগ্রামসহ বড় বড় স্টেশনে বডি-লাগেজ স্ক্যানার বসানো খুবই জরুরি। কিন্তু এ বিষয়টা সংশ্লিষ্টরা বুঝতেই চাচ্ছেন না। অন্যদিকে রেলওয়ে রেঞ্জের অতিরিক্ত আইজিপি মো. মহসিন হোসেন জানান, রেলপথে মাদক পাচার এখনো পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। রেলপথে হাজার হাজার যাত্রীর বিপরীতে যে সংখ্যক পুলিশ সদস্য বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থাকা প্রয়োজন তা নেই। যাত্রীবেশী চোরাকারবারিদের ধরতে প্রতিটি স্টেশনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। স্টেশনগুলোতে বডি-লাগেজ স্ক্যানার বসানোর জন্য বহু বছর ধরেই সংশ্লিষ্টদের বলা হচ্ছে। কমলাপুর ও বিমানবন্দর স্টেশনে এই যন্ত্র বসানো খুবই প্রয়োজন। পাশাপাশি দরকার পর্যাপ্ত লোকবল। কিন্তু তা হচ্ছে না।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৭:৫৪:০৪ ● ৪২৭ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ