আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
“কত কষ্ট হইর্যা এই বচ্ছর আউশ ধান দিছি, ধান মোডা মুডি ভালোই অইছে কিন্তু আডে ধানের দাম কোম। কি হরমু অনেক টাহা লছ দিতে অইবে। ধার হইর্যা জমি চইছি, কিদ্ধা হেই ধার টাহা দিমু কইতে পারি না”। এ কথাগুলো বলেছেন, আমতলী উপজেলার চাওড়া ইউনিয়নের কাউনিয়া গ্রামের কৃষক কামাল সিফাই। বরগুনার আমতলীতে আউশ ধানের ভালো ফলন হয়েছে। ভালো ফলন হওয়ায় আশাবাদী হলোও বাজারে ধানের দাম কম থাকায় দুচিন্তায় কৃষকরা। কৃষকরা জানান, ধানের দাম কম থাকায় লাভবান হওয়ায় সম্ভবনা নেই বরংঞ্চ একর প্রতি ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা লোকসান দিতে হবে। চালের দাম কম থাকায় মিল মালিকরা ধান কিনছে না। তাই বাজারে ধানের দাম কম এ তথ্য ধান আড়ৎদারদের।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানাগেছে, এ বছর আমতলীতে আউশ ধানের জমি চাষের লক্ষমাত্রা ধরা হয়ছিল ১১ হাজার ৭’শ ৬০ হেক্টর। অর্জিত হয়েছে ৮ হাজার ৯’শ ৯০ হেক্টর। ধানের দাম কম থাকায় কৃষকরা জমি চাষাবাদে আগ্রহ হারিয়েছে। তাই ওই লক্ষমাত্রা অর্জিত হয়নি। গত বছর ছিল ১০ হাজার ৫০০ হেক্টর। গত বছরের তুলনায় এ বছর ১ হাজার ৫’শ ১০ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের আবাদ কম হয়েছে। আউশ ধান চাষের উপযুক্ত সময় বৈশাখ মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত। বীজতলা থেকে শুরু করে পাঁচ মাসের মধ্যে উচ্চ ফলনশীল ধানের ফলন আসে। বর্তমানে কৃষকরা ধান কাটা শুরু করেছে। উচ্চ ফলনশীল জাতের বিরি-৪৮, বিরি-২৭, বিআর-২৬ ও বাউ- ৬৩ ধান চাষ করেছে কৃষকরা। বাজারে ধানের দাম কম। প্রতি মণ ধান ৪২০ থেকে ৫০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। বাজারে ধানের দাম কম থাকায় দুচিন্তায় কৃষকরা। কৃষকরা জানান, জমির বর্গামূল্য, চাষাবাদ, রোপন, কীটনাশক, নিড়ানি, বীজের মূল্য ও শ্রমিক মজুরীসহ একর প্রতি ২২-২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ওই জমিতে ধান হয়েছে ৩২-৩৫ মণ। বাজারে প্রতি মণ ধান ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সে হিসেবে ওই জমির ধান বিক্রি হচ্ছে ১৬-১৮ হাজার টাকা। এতে একর প্রতি ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে। কৃষকরা আরও জানান, টাকা ও শ্রম বিনিয়োগ করে যা আয় হয় তা দিয়ে পোষায় না। উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের অটো রাইস মিল মালিকরা ধান ক্রয় না করায় বাজারে ধানের দাম কমে গেছে বলে জানান আড়ৎদাররা।
আড়পাঙ্গাশিয়া গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান বলেন, এ বছর দুই একর জমিতে বিরি-৪৮ জাতের আউশ ধানের চাষ করেছি। উৎপাদন খরচ হয়েছে ৪১ হাজার টাকা। ওই জমিতে ৬০ মণ ধান পেয়েছি। বাজারে ৪৫০ টাকা মণ ধরে কিছু ধান বিক্রি করেছি। ক্রেতা না থাকায় বাকি ধান বিক্রি করতে পারিনি। তিনি আরও জানান বাজারে ধানের দাম কম থাকায় এ লোকসান গুনতে হবে।
আঠারোগাছিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ সোনাখালী গ্রামের সোহেল রানা বলেন, গত বছর তিন একর জমিতে আউশ ধান চাষ করেছিলাম। অনেক টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে, তাই এ বছর মাত্র ৩০ শতাংশ জমিতে চাষ করেছি। ওই জমিতে ৯ মণ ধান পেয়েছি। ক্রেতা না থাকায় তা বিক্রি করিনি।
আমতলীর মেসার্স হিমেল ট্রেডার্সের মালিক মোঃ ফয়সাল উদ্দিন মৃধা বলেন, চালের দাম কম থাকায় মিল মালিকরা ধান ক্রয় করছে না। তাই বাজারে ধানের দাম কম। তিনি আরো বলেন, বিগত বছরে মিল মালিকরা ধানের জন্য অগ্রিম টাকা দিয়ে রাখতো। এখন আমরা তাদের বাকীতে ধান দিলেও তারা নিতে চায় না।
ধান-চাল আড়ৎদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাকির হোসেন বলেন বাজারে দুই ধরনের ধান রয়েছে। প্রকার ভেদে ওই ধানের মণ ৪০০-৫০০ টাকা। বাজারে ধানের দাম কম থাকায় কৃষকদের লোকসান হবে। তিনি আরও বলেন, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর, চাঁদপুর, দিনাজপুর, গাছুরিয়া মিল ও দক্ষিনাঞ্চলের পাঁচটি অটো রাইস মিল মালিকরা ধান ক্রয় করছে না। তারা ধান ক্রয় না করায় বাজারে ধানের দাম কমে গেছে। তিনি আরো বলেন এই সময়ে সরকার ধান ক্রয় করছে না। যদি ধান ক্রয় করতো তা হলে বাজারে ধানের দাম বেশী থাকতো।
আমতলী উপজেলা কৃষি অফিসার সিম রেজাউল করিম বলেন, এ বছর আউশ ধানের ফলন ভালো। প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। তিনি আরও বলেন, বাজারে ধানের দাম কম থাকায় কৃষকদের কিছুটা সমস্যা হবে।
এমএইচকে/এমআর