দেশের চামড়া খাত বিদেশী ক্রেতাদের আস্থা হারাচ্ছে

প্রথম পাতা » জাতীয় » দেশের চামড়া খাত বিদেশী ক্রেতাদের আস্থা হারাচ্ছে
বুধবার ● ২৮ আগস্ট ২০১৯


দেশের চামড়া খাত বিদেশী ক্রেতাদের আস্থা হারাচ্ছে

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

দেশের চামড়া খাত কমপ্লায়েন্স ইসুতে বিদেশী ক্রেতাদের আস্থা হারাচ্ছে। নানা উদ্যোগের পরও দেশের চামড়া শিল্প আন্তর্জাতিক পরিবেশের মান বজায় রাখতে পারছে না। ফলে রফতানিতে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা এই শিল্প খাতে এর প্রভাব পড়েছে। ওই ধারাবাহিকতায় গত কয়েক বছর ধরে ক্রাস্ট ও ফিনিশড চামড়া রফতানি কমে গেছে। গেল অর্থবছরে চামড়া রফতানি হ্রাস পেয়েছে ৬ শতাংশ। তবে আশার কথা হচ্ছে এই সময়ে আবার বাংলাদেশে উৎপাদিত চামড়াজাত পণ্য ও জুতা রফতানি বেড়েছে। ক্রেতারা অবশ্য চামড়ার পরিবেশের মান বজায় রাখার পরামর্শ দিয়েছে। লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (এলডব্লিউজি) চামড়াজাত পণ্যের কাঁচামাল কতটা পরিবেশবান্ধব তার সনদ দেয়। আন্তর্জাতিক সংস্থাটি ইতিমধ্যে এদেশের দুটি ট্যানারিকে সনদ দিয়েছে। ইপিবি এবং চামড়া শিল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, যে কোন পণ্য বিশ্ববাজারে রফতানি করতে গেলে উদ্যোক্তাদের আন্তর্জাতিক কিছু নিয়ম-কানুন মেনে পণ্য উৎপাদন করতে হয়। পণ্যটির গুণগত মান কতটুকু বজায় রাখা হয়েছে তা নির্ধারণে সার্টিফিকেশনের প্রয়োজন হয়। সেজন্য আবার প্রয়োজন হয় কমপ্লায়েন্সের। এক্ষেত্রে নিরাপদ কর্মপরিবেশ বজায় রাখা, শ্রমিকদের মজুরি নিয়মিত প্রদান ও পরিবেশ দূষণরোধ করে পণ্য উৎপাদনসহ আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ শর্ত মেনে চলতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশের চামড়া শিল্প খাতে কমপ্লায়েন্স একটি বড় বাধা। সাভারের চামড়া শিল্পনগরীর পাশেই ধলেশ্বরী নদীর অবস্থান। চামড়ার বর্জ্যে ধরেশ্বরীসহ আশপাশের পরিবেশ প্রতিনিয়ত দূষণ হচ্ছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার পুরোদমে চালু করা সম্ভব হয়নি। চারটির মধ্যে কোন রকমে দুটি মডিউল দিয়ে বর্জ্য শোধনাগারের কাজ চলছে।
সূত্র জানায়, এদেশ থেকে বিগত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ১১০ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রফতানি হয়েছে। এর মধ্যে ৮৪ কোটি ৭০ লাখ ডলারের চামড়াজাত পণ্য ও জুতা রফতানি হয়েছে। বাকি ১৬ কোটি ৫০ লাখ ডলারের ক্রাস্ট ও ফিনিশড চামড়া রফতানি হয়। এ শিল্প খাতে পরিবেশ দূষণ ও বর্জ্য শোধনাগার একটি বড় বিষয়। ক্রেতাদের চাপে হাজারীবাগ থেকে সাভারের চামড়া শিল্পনগরীতে ট্যানারিগুলো সরিয়ে নেয়া হলেও সেগুলো কমপ্লায়েন্স হতে পারেনি। দু’একটি কারখানা ছাড়া আন্তর্জাতিক মানদ- ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে ট্যানারিগুলো। এ অবস্থায় ক্রেতাদের আস্থাহীনতার সঙ্কট বেড়েছে। ফলে ধারাবাহিকভাবে রফতানি আদেশ কমেছে।
সূত্র আরো জানায়, এদেশে শত বছর ধরে চামড়া শিল্প গড়ে উঠলেও এই শিল্পে সুপরিকল্পিত কোন বিনিয়োগ হয়নি। এছাড়া সাভারে শিল্প প্লট পেয়ে যারা ট্যানারি মালিক হয়েছেন তাদের মধ্যে পেশাদারিত্বের যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। অবকাঠামোগত সমস্যা তো রয়েছেই। এসব কারণে ক্রাস্ট ও ফিনিশড চামড়া রফতানি ধারাবাহিকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। চামড়াজাত পণ্যের কাঁচামাল কতটা পরিবেশবান্ধব তার সনদ দেয় লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ (এলডব্লিউজি)। ইতিমধ্যে আন্তর্জাতিক ওই সংস্থাটি এদেশের দুটি ট্যানারিকে সনদ দিয়েছে। তবে বেশিরভাগ ট্যানারির সনদ না থাকায় রফতানি কমেছে। বিগত তিন মাস আগে সাভারের চামড়া শিল্পনগরীর কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার বা সিইটিপি পরিদর্শন করে মানোন্নয়নের পরামর্শ দিয়েছেন এলডব্লিউজির প্রতিনিধিরা। ফিনিশড লেদারের প্রধান ক্রেতা চীন, ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলো। কিন্তু এর বাইরেও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চামড়া রফতানি হয়ে থাকে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে পণ্য রফতানি করতে গেলে অবশ্যই কারখানাটি শতভাগ কমপ্লায়েন্স হতে হয়। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে কমপ্লায়েন্স একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পোশাকের মতো চামড়া খাত উন্নয়নে ইতোমধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, কারখানায় আন্তর্জাতিক পরিবেশ মান বজায় রাখতে সক্ষম হলে তৈরি পোশাক শিল্পের মতো এদেশের চামড়া খাতও শীর্ষ বাণিজ্য পণ্যের তালিকায় চলে আসবে। এদিকে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চামড়া শিল্প খাত নিয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ ট্যানার্স এ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মোঃ শাহিন আহমেদ আক্ষেপ করে বাণিজ্যমন্ত্রীকে বলেন, মজুদকৃত ফিনিশড চামড়া রফতানি করা যাচ্ছে না। বিগত বছরের অর্ধেকের বেশি চামড়া এখনও ট্যানারিগুলোতে রয়ে গেছে। এরই মধ্যে এবার কোরবানির চামড়া কিনতে হবে। ক্রেতারা চামড়া না নেয়ায় এ শিল্পের উদ্যোক্তারা চাপে আছেন। শুধু তাই নয়, বিশ্বজুড়ে নন-লেদার আইটেমের উৎপাদন বেড়েছে। এ কারণে চামড়া বিক্রি কমে যাচ্ছে।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২০:২৪:৫৫ ● ৪০০ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ