ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
বাংলাদেশ রেলওয়ের যাত্রীসেবার মান বাড়াতে বিদেশ থেকে অত্যাধুনিক রেল কোচ আনা হচ্ছে। ওসব কোচে অনেক সুযোগ-সুবিধা থাকবে। যাত্রী সাধারণের জন্য আধুনিক মানসম্মত চেয়ার, বার্থ, স্টেয়ার, পার্সেল রেক, টিভি মনিটর হ্যাঙ্গার, ওয়াইফাই রাউটার হ্যাঙ্গার, মোবাইল চার্জারসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে। এসব কোচ সংযোজনের পর রেলের সেবায় এক নতুন মাত্রা যোগ হবে। মিটারগেজ লাইনে চলার উপযোগী এসব কোচ ইন্দোনেশিয়া থেকে আনা হচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, স্থলপথে নাগরিকদের দেশের বিভিন্নস্থানে নিরাপদ, আরামদায়ক, সহজলভ্য ও পরিবেশবান্ধব রেলসেবা দেয়ার লক্ষ্যে ইন্দোনেশিয়া থেকে ২শ অত্যাধুনিক কোচ আনা হচ্ছে। আগামী বছরের জুলাইয়ের মধ্যেই ওসব কোচ বাংলাদেশে এসে পৌঁছাবে। একই সঙ্গে ওই সময়ের মধ্যে প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন রুটে নতুন ট্রেনে ওসব কোচ সংযোজন করা হবে। তাছাড়া পুরাতন ট্রেনেও ওসব কোচ সংযোজন করে ট্রেনের যাত্রীর চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। এ প্রকল্পের আওতায় আরো অত্যাধুনিক ৫০টি ব্রডগেজ কোচ ইতোমধ্যে আনা হয়েছে।
সূত্র জানায়, এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে মোট নয় ধাপে ইন্দোনেশিয়া থেকে ২০০টি মিটারগেজ কোচ বাংলাদেশে আনা হবে। এর মধ্যে প্রথম ধাপে বিগত ১ আগস্ট ২৬টি মিটারগেজ কোচ দেশে এসে পৌঁছায়। দ্বিতীয় ধাপে সেপ্টেম্বর মাসের ১২ থেকে ১৫ তারিখের মধ্যেই আরো ২২টি মিটারগেজ কোচ দেশে পৌঁছাবে। তৃতীয় ধাপ থেকে অষ্টম ধাপ পর্যন্ত প্রতি ধাপে ২২টি করে মোট ১৩২টি কোচ আসবে। সবশেষে নবম ধাপে ২০২০ সালের জুলাই মাস নাগাদ আরো ২০টি মিটারগেজ কোচ দেশে এসে পৌঁছাবে। বাংলাদেশ রেলওয়ের ২০০টি মিটারগেজ ও ৫০টি ব্রডগেজ যাত্রী পরিবহন কোচ সংগ্রহ নামে এ প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা।
এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে এডিবি দিচ্ছে ১ হাজার কোটি ৮ লাখ টাকা। বাকি ৩৭৪ কোটি টাকা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্পটি ২০২১ সালের জুন নাগাদ শেষ হবে।
সূত্র আরো জানায়, ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা প্রতিটি মিটারগেজ কোচের মূল্য ৩.০৩ কোটি টাকা এবং প্রতিটি ব্রডগেজ কোচের মূল্য ৪.২২ কোটি টাকা। আমদানি করা মিটারগেজ কোচের ১৮টি এসি বার্থ এবং প্রথম শ্রেণীর এসি সিøপারযুক্ত কোচ থাকবে ১০টি। ৫৫ সিটবিশিষ্ট এসি চেয়ার কোচ থাকবে ৪০টি। ৬০ সিট বিশিষ্ট শোভন চেয়ার কোচ থাকবে ১১২টি। ১৫ সিটবিশিষ্ট খাবার গাড়ি ও গার্ড ব্রেকসহ কোচ থাকবে ২৫টি। পাওয়ার কার ও নামাজ ঘরসহ কোচ থাকবে ১৩টি। দেশে এই প্রকল্পের মাধ্যমেই প্রথমবারের মতো স্টেনলেস স্টিলের বডি ও বায়ো টয়লেটযুক্ত কোচ আনছে রেল কর্তৃপক্ষ। ভেতরে কোচের আয়তনও বর্তমান ট্রেনের চেয়ে বেশি বলে যাত্রীরা অধিক স্থানে স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে সক্ষম হবেন। একই সঙ্গে এসব ট্রেন সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব ও আরামদায়ক তথা যাত্রীবান্ধব বটে।
এদিকে বর্তমানে বাংলাদেশ রেলওয়ের রেলপথের দৈর্ঘ্য এখন পর্যন্ত ২ হাজার ৯২৯.৫০ কিলোমিটার। আর সারাদেশে চলাচলকারী মোট যাত্রীবাহী ট্রেনের সংখ্যা ৩৬২টি। এরমধ্যে আন্তঃনগর ট্রেনের সংখ্যা ৯৬টি। আর বন্ধ হয়ে যাওয়া স্টেশন চালুসহ এখন পর্যন্ত সর্বমোট স্টেশন রয়েছে ৪০০টি।
অন্যদিকে বাংলাদেশ রেলওয়ের ক্যারেজ সংগ্রহ প্রকল্পের সদ্য বিদায় নেয়া পরিচালক ইঞ্জিনিয়ার হারুন-অর-রশিদ জানান, প্রকল্পের আওতায় মিটারগেজ ও ব্রডগেজ প্যাসেঞ্জার কোচ ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানি করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ৫০টি ব্রডগেজ কোচ চলে এসেছে, যা দিয়ে যাত্রীসেবা দেয়া হচ্ছে। আর মিটারগেজ কোচগুলো ২০২০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে চলে আসবে। আধুনিক ওসব মিটারগেজ কোচ দেশে চলে আসার পরে বিভিন্ন রুটে সেগুলো নামানো হবে। নতুন এসব কোচে যাত্রীসেবার ধরন পাল্টে যাবে। প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যেই ইন্দোনেশিয়া থেকে তিন ধাপে ৫০টি ব্রডগেজ কোচ দেশে নিয়ে আসা হয়েছে। বিভিন্ন রুটে কোচগুলো চলাচল করছে। এসব কোচ দিয়ে নতুন চালু হওয়া পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, বনলতা এক্সপ্রেস, বেনাপোল এক্সপ্রেস চালানো হচ্ছে। এ তিন ট্রেনের প্রতিটিতে ১২টি করে মোট ৩৬টি কোচ সংযোজন করা হয়েছে। এছাড়া আমদানি করা ৫০টি ব্রডগেজ কোচের মধ্যে বাকি ১৪টি কোচ অন্য ট্রেনে লাগানোর পরিকল্পনা রয়েছে। প্রয়োজনে এসব কোচ বিভিন্ন রুটে ব্যবহার করা হবে।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মোঃ শামসুজ্জামান জানান, রেলওয়েকে বিশ্বের উন্নত দেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে নিতে চায় সরকার। নতুন আমদানিকৃত কোচসমূহের অনেক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এগুলো একেবারেই আধুনিক কোচ। এসব কোচে অনেক সুযোগ-সুবিধা থাকবে। যাত্রী সাধারণের জন্য আধুনিক মানসম্মত চেয়ার, বার্থ, স্টেয়ার, পার্সেল রেক, টিভি মনিটর হ্যাঙ্গার, ওয়াইফাই রাউটার হ্যাঙ্গার, মোবাইল চার্জারসহ নানা ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে। এসব কোচ সংযোজনের পর রেলের সেবায় এক নতুন মাত্রা যোগ হবে।
এফএন/এমআর