নিমজ্জিত নৌযানের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে নৌপথ

প্রথম পাতা » জাতীয় » নিমজ্জিত নৌযানের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে নৌপথ
বৃহস্পতিবার ● ২২ আগস্ট ২০১৯


নিমজ্জিত নৌযানের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে নৌপথ

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

দেশের বিভিন্ন নৌপথে একের পর এক দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে নৌযান নিমজ্জিত হলেও তা উদ্ধারে তেমন উদ্যোগ নেই। মূলত নিমজ্জিত নৌযান উদ্ধারে শক্তিশালী নৌযানের অভাবেই এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আর নিমজ্জিত নৌযানের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে নৌপথ। যাত্রীবাহী লঞ্চ, ট্রলার, পণ্যবাহী কার্গো ও ফেরিডুবির দুর্ঘটনার পর তা নদীর তলদেশেই ধ্বংস হচ্ছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে নৌপথে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটলেও নিমজ্জিত নৌযান উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। নাব্য সংকট, অদক্ষ চালক, লঞ্চে আধুনিক প্রযুক্তির অভাব, নৌ-মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মনিটরিং সংকটের কারণে নৌপথে দুর্ভোগের সীমা নেই। তার ওপর ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের মেঘনা নদীতে দুর্ঘটনায় নিমজ্জিত কার্গো, বাল্কহেড উদ্ধার না হওয়ায় দিনে দিনে এই ঝুঁকি আরো বাড়ছে। নৌ-মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নিমজ্জিত বিভিন্ন পণ্যবাহী নৌযানের ওজন ১ হাজার ২০০ টনের ওপরে হওয়ায় ২৫০ টন ধারণ ক্ষমতার বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী জাহাজের পক্ষে তা উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না। গত ২৫ মে বালুবাহী বাল্কহেড এমভি সিয়াম মেঘনা নদীর মিয়ারচর এলাকায় নিমজ্জিত হলেও গত তিন মাসে তা উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। গত ৬ আগস্ট মেঘনা নদীর গজারিয়ায় দুর্ঘটনাকবলিত হয়ে দুটি নৌযান নিমজ্জিত হয়। গজারিয়ায় সার বোঝাই এমভি টপশিপ কার্গো ও গোবিন্দপুর সংলগ্ন অপর একটি মালবাহী কার্গো নিমজ্জিত হয়।
মেঘনা নদীতে এ তিনটি কার্গো প্রায় কাছাকাছি স্থানে নিমজ্জিত হওয়ায় বর্ষা মৌসুমে ঝুঁকি আরো বেড়েছে। বিশেষ করে মেঘনা নদীতে ডুবোচরের পাশাপাশি কার্গো নিমজ্জিত থাকায় নদীপথ সরু হয়ে গেছে। সূত্র জানায়, বিআইডব্লিউটিএর উদ্ধারকারী নৌযান হামজা ও রুস্তুম অনেক আগেই যৌবন হারিয়েছে। ওই দুটি জাহাজের ক্রেনের উত্তোলন ক্ষমতা ৬০ টন। হামজা সংগ্রহ করা হয় ১৯৬৫ সালে, যা বর্তমানে আরিচা ফেরিঘাটে রয়েছে। রুস্তুম সংগ্রহ করা হয় ১৯৮৪ সালে, যা বর্তমানে মাওয়া ফেরিঘাটে রয়েছে। দীর্ঘ ২৯ বছর পর ২০১৩ সালে কোরিয়া থেকে আমদানি করা হয় নির্ভীক ও প্রত্যয় নামে দুটি উদ্ধারকারী নৌযান। এ দুটির উত্তোলন ক্ষমতা ২৫০ টন। প্রয়োজনের তুলনায় কম উত্তোলন ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও নতুন দুটি উদ্ধারকারী নৌযান আশার সঞ্চার করেছিল। তবে উদ্ধার অভিযানে এ দুটি যানও সংশ্লিষ্টদের হতাশ করেছে। ৫০০ টন উদ্ধার ক্ষমতা হলেও বরিশালে অবস্থানরত নির্ভীক ও নারায়ণগঞ্জ অবস্থানরত প্রত্যয় পুরোনো জলযান রুস্তুম ও হামজার মতো একযোগে উদ্ধার অভিযান চালাতে পারে না।
সূত্র আরো জানায়, গভীর পানি ছাড়া নতুন এ দুটি উদ্ধারকারী ভারি জাহাজ চলতে পারে না। রুস্তুম ও হামজা সাত-আট ফুট পানিতে চলাচল করতে পারলেও নির্ভীক ও প্রত্যয় চলাচলের জন্য এর দ্বিগুণ গভীরতা প্রয়োজন হয়। চলৎশক্তিহীন এ উদ্ধারকারী জাহাজ কোথাও দুর্ঘটনা ঘটলে টাগ বা অন্য জাহাজের সাহায্যে তাকে টেনে নিয়ে যেতে হয়। এতে জ্বালানীর প্রয়োজন হয় প্রতি ঘন্টায় ৩০০ লিটার। ভাটার সময় এর গতি আরো কমে যায়। ফলে মেঘনা, লক্ষ্মীপুরসহ চাঁদপুরের আনাচে-কানাচে কিংবা বরগুনার বিষখালী, খাতাচেড়া কিংবা আগুনমুখা নদীতে দুর্ঘটনা ঘটলে বরিশাল ও নারায়ণগঞ্জ থেকে উদ্ধারকারী নৌ-যানগুলোর অকুস্থলে পৌঁছতে দীর্ঘসময় লেগে যায় যায়। তাছাড়া দেশের বিশাল নৌপথ যখন নাব্য সংকটে রয়েছে, তখন গভীর জলে চলাচল উপযোগী প্রত্যয় ও নির্ভীক দুর্ঘটনাস্থলে কীভাবে পৌঁছাবে তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। জোয়ার-ভাটার হিসাব মিলিয়ে ওই দুটি ইউনিট দুঘর্টনাস্থলে পৌঁছালেও কাজ করতে পারে মাত্র একটি ইউনিট। এদিকে একাধিক লঞ্চ মাস্টার জানান, মিয়ারচর চ্যানেলে বাল্কহেড ডুবির ঘটনার পর বড় লঞ্চগুলোকে মেহেন্দিগঞ্জের কালীগঞ্জ রুট হয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে যেমন সময় বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে খরচও। কালীগঞ্জ রুটটি দীর্ঘদিন ব্যবহার না করায় চালকদের হিমশিম খেতে হয়। যে সকল লঞ্চে পানি মাপার যন্ত্র (ইকোসাউন্ডার) নেই তারা বিপদে পড়ছে। আবার কালীগঞ্জ স্থানটি মেঘনার ডেঞ্জার জোন এলাকার মধ্যে। মিয়ারচর দিয়ে যেমন স্বাচ্ছন্দ্যে নৌযান চলাচল সম্ভব হতো কালীগঞ্জে ঠিক তার উল্টো।
অন্যদিকে  নিমজ্জিত নৌযান প্রসঙ্গে বরিশাল নৌ-সংরক্ষণ বিভাগের উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলাম জানান, নিমজ্জিত স্থান বয়া দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে। যদিও বিগত ৬ বছরে একাধিক নৌযান নিমজ্জিত হলেও এ নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের তদন্ত কমিটি গঠন ও পরবর্তীতে উদ্ধার অভিযান পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এতে নিমজ্জিত নৌযানের অধিকাংশ পানির নিচেই ধ্বংস হয়ে যায়।  এ প্রসঙ্গে বিআইডব্লিউটিএর নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক আজমল হুদা সরকার মিঠু জানান, মিয়ারচরে নিমজ্জিত বাল্কহেড এমভি সিয়াম উদ্ধারে বিআইডব্লিউটিএ ৬০ লাখ টাকার উন্মুক্ত দরপত্র দিয়েছে। কিন্তু নদীতে তীব্র স্রোত থাকায় তা উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২১:৪৯:২১ ● ৪১৪ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ