ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
দেশে মামলার জট অস্বাভাবিক; এটিকে কমিয়ে আনতে হবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। বৃহস্পতিবার জাস্টিস রিফর্ম অ্যান্ড করাপশন প্রিভেনশন (জেআরসিপি) প্রকল্পের আওতায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বাংলাদেশ জাস্টিস অডিট ফলাফল উপস্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, আমরা চাই জনগণ বিচার পাক। বিচার রাস্তায় যাতে চলে না যায়। সেটি আমরা চাই না। বিচার প্রক্রিয়ায় মানুষের আস্থা টিকে থাকুক। এজন্য আমাদের মামলার জট কমিয়ে আনতে হবে।
আইনমন্ত্রী বলেন, প্রায় ৩২ লাখ মামলা আমাদের আদালতগুলোতে বিচার প্রক্রিয়া দীর্ঘসূত্রতা; কারাগারে বন্দি সংখ্যাধিক্য, বিশেষ করে বিচারাধীন মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করণে বিচারকদের ওপর বিপুল চাপের বিষয় আমরা সকলেই ওয়াকিবহাল। এগুলো সবই আসলে একটি অন্তর্নিহিত রোগের লক্ষণ। যার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন ছিল রোগের সঠিক কারণ শনাক্ত করা।
তিনি বলেন, বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতার পেছনে রয়েছে একাধিক কারণ। যেগুলো বিচার ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম এবং বিচার প্রক্রিয়াকে বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করছে। মামলার জট নিরসন বর্তমান সরকারের একটি অন্যতম অগ্রাধিকার এবং আমরা পদ্ধতিগতভাবে করতে চেয়েছি। তাই মামলা জটের কারণগুলো শনাক্তকরণের পাশাপাশি কোথায় কোথায় মামলা জট রয়েছে, তা অনুসন্ধানের লক্ষ্যে বিচারাঙ্গনের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র দেখতে আমরা বিভিন্ন কৌশল অবলম্বনের কথা চিন্তা করেছিলাম। আর তখনই আমরা জাস্টিস অডিট নামে এই ওয়েবভিত্তিক তথ্যভা-ারের কথা জানতে পারি।
আনিসুল হক বলেন, এ বিষয়ে বিস্তারিত জানার পর ২০১৩ সালে আমরা জার্মান সরকারের সহযোগিতায় দেশের পাঁচটি জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে অডিট সম্পাদন করি। এই ফলাফল থেকে আমরা ওই পাঁচটি জেলার বিচার ব্যবস্থার পূর্ণাঙ্গ চিত্র দেখতে পেয়েছিলাম। এই ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে জার্মান এবং ব্রিটিশ সরকারের সহযোগিতায় আইন মন্ত্রণালয় ২০১৬ সালে দেশব্যাপী ন্যাশনাল জাস্টিস অডিট সম্পন্ন করে বলে তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, জাস্টিস অডিট শুধু তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে, এটা কোনো সুপারিশ করে না। জাস্টিস অডিট থেকে প্রত্যাশিত ফলাফল পেতে হলে আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। এই অডিটের মাধ্যমে আমরা শুধু বিচার প্রক্রিয়ার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের তথ্য বিশ্লেষণ, বিচার প্রক্রিয়ায় সেবাপ্রদানকারী এবং বিচারপ্রার্থীদের মতামত সংগ্রহের মাধ্যমে এই অঙ্গণে বিদ্যমান সমস্যাগুলো চিহ্নিতকরণের পাশাপাশি সংস্কারের সুযোগগুলোও দেখতে চেয়েছিলাম। আর তাই জাস্টিস অডিটের তথ্যগুলো বিচারসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো থেকেই সংগৃহীত। এখানে বিচার ব্যবস্থার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেবাপ্রদানকারী এবং সেবাগ্রহীতাদের মতামতের সমন্বয় করা হয়েছে। এই অডিটের মাধ্যমে আমরা বিচার ব্যবস্থার সামগ্রিক চিত্র দেখে এখানে বিদ্যমান সমস্যাগুলো নির্ণয়ের পাশাপাশি সমাধানের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনার পর্যাপ্ত তথ্য পেয়েছি।
আইনমন্ত্রী বলেন, আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশ, যেখানে বিচারপ্রার্থীদের একটি বড় অংশ আর্থসামাজিকভাবে পিছিয়ে আছে, তাদের জন্য আইনি পরামর্শ গ্রহণ এবং আইনি প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা কষ্টসাধ্য। মামলার দীর্ঘসূত্রতা তাদের আইনি যাত্রাকে আরও কষ্টকর করে তোলে। আর তাই নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার প্রাপ্তিতে অসমর্থ জনগোষ্ঠীসহ সব বিচারপ্রার্থীর আইনি অধিকার নিশ্চিত কল্পে আমাদের সব সক্রিয় ও সমন্বিত উদ্যোগ একান্ত প্রয়োজন।
আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন জার্মানির ডেপুটি অ্যাম্বাসেডর বার্কহাড ডুকফি, জার্মান সরকারের উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা জিআইজেডের টিম লিডার সৈয়দ জিয়াউল হাসান, প্রজেক্ট ম্যানেজার এটিএম মোর্শেদ আলম ও হেড প্রোগ্রামার প্রমিথা সেন গুপ্ত প্রমুখ।
আইন মন্ত্রণালয়, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং জিআইজেড যৌথ উদ্যোগে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
এফএন/এমআর