কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥
জীবনের প্রয়োজনে, পেটের যোগান দিতে স্বামী শাহীন কাজীর সঙ্গে ইটভাটায় শ্রমিকের কাজ করতে গিয়েছিলেন মনি বেগম (২০)। একমাত্র চার বছরের শিশু কন্যা সাথীকে নিয়ে তিনজনের সংসারে দুবেলা-দুমুঠো অন্নের সংস্থানে গিয়েও স্বস্তি নেই এ দম্পতির। মানুষরুপী হায়েনার দল জাপটে ধরে ধর্ষণ চেষ্টা চালায়। একই ইটভাঁটার শ্রমিক ও একই বাড়ির সুমন, আবুবকর খাঁ, বেল্লাল খাঁ, আল-আমিন এমন বর্বরতা চালায়। কোনমতে সম্ভ্রম রক্ষা করেছে মনি বেগম। কিন্তু এর বিচার চাইতে মামলা করে হামলার শিকার হয়ে এখন এ দম্পতি বাড়ি-ঘর ছাড়া।
কলাপাড়া উপজেলার বালিয়াতলী ইউনিয়নের তুলাতলী গ্রামে বাড়ি হলেও এদের এখন ঠাঁই হয়েছে মনি বেগমের অসহায় মা বৃদ্ধা তাজনেয়ার বেগমের বাড়ি, লালুয়ার চর-চান্দুপাড়ায়। জীবিকার প্রয়োজনে মাছ ধরার ট্রলারের জেলে হিসেবে কাজ করছেন শাহীন। আর স্ত্রী মনি বেগম নিজের বৃদ্ধা মাকে নিয়ে দৌড়াচ্ছেন থানা-পুলিশ কিংবা আদালতের বারান্দায়। ধর্ষণ চেষ্টার মামলার চার্জশিট পুলিশ দাখিল করেছে ঠিকই। কিন্তু ওই মামলা মোকাবেলা করতে ধর্ষণ চেষ্টার মামলার তিন নম্বর আসামি বেল্লাল খাঁ মনি বেগমের স্বামী শাহীন কাজীকে আসামি করেছে। আসামি করা হয়েছে মামলার অপর স্বাক্ষী ইউপি মেম্বার জাফর খাঁসহ মনি বেগমের ছোট ভাইকে। মামলায় বলা হয়েছে, দুই লাখ টাকা চাঁদা চায় শাহীন কাজীসহ আসামিরা। যা না পেয়ে হামলা মারধর করে ২০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়। বর্তমানে এ দম্পতি চরম বিপাকে পড়েছেন। বাড়ি ঘর ছেড়ে ঘুরছে দ্বারে দ্বারে। মামলা সুত্রে জানা গেছে, এ বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি রাতে নীলগঞ্জের ছলেমানের ইটভাঁটায় মনি বেগমকে ধর্ষণ চেষ্টা চালায়। ইটভাঁটার ম্যানেজার ইছা মিয়াকে এ ঘটনা জানালে ক্ষিপ্ত হয়ে বাড়িতে আটকে (১২ ফেব্রুয়ারি) বেধড়ক মারধর করা হয় মনি বেগমকে। এ ঘটনায় কলাপাড়া থানায় মামলা করলে মামলা প্রত্যাহারের চাপ দেয় আসামিরা। তাতে রাজি না হওয়ায় আসামিরা ১৯ জুন এ দম্পতির ওপর ফের হামলা চালায়। বর্তমানে দরিদ্র এ গৃহবধু দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অসহায়ের মতো কলাপাড়া প্রেসক্লাবে এসে হাউ-মাউ করে কান্না জুড়ে দেন। বর্তমানে মামলা পরিচালনা করবেন কীভাবে তাও বুঝে উঠতে পারছেন না এ মনি বেগম। স্বামী দৌড়াচ্ছেন জীবিকার পেছনে। আর মনি বেগম দৌড়াচ্ছেন মামলার বিচারের আশায়। অসহায় এ নারী মানবাধিবার সংগঠনের কাছে সহায়তা চেয়েছেন। চেয়েছেন তার পরিবারের নিরাপত্তা। বাড়িতে আদৌ ফিরতে পারবেন কি না তাও বুঝে ওঠতে পারছেন না। চরম অনিশ্চয়তা নিয়ে কাটছে একেকটি মুহুর্ত।
এমইউএম/এমআর