মন্ত্রণালয়গুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রথম পাতা » জাতীয় » মন্ত্রণালয়গুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর
রবিবার ● ১৮ আগস্ট ২০১৯


মন্ত্রণালয়গুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যথাযথভাবে বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার জন্য মন্ত্রণালয়গুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্প গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাজেট দিয়েছি এবং উন্নয়ন প্রকল্প নিয়েছি। কিন্তু তা বাস্তবায়নে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়কে প্রকল্প অনুযায়ী তাদের কাজের অগ্রাধিকার ঠিক করতে হবে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী তাঁর কার্যালয়কে (পিএমও) বিষয়টির উপর লক্ষ্য রাখার নির্দেশ দিয়ে বলেন, যেহেতু আমাদের একটা ভালো সেটআপ আছে তাই এই দপ্তর থেকেই এই বিষয়টা নিয়ে নজরদারি করা দরকার যাতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়গুলো তাদের কাজের অগ্রাধিকার ঠিক করতে পারে, আমাদের অর্জনগুলো আমরা ধরে রাখতে পারি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রবিবার (১৮ আগস্ট) সকালে তেজগাঁওয়ে তাঁর কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রদত্ত ভাষণে একথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার বিশাল বাজেট পেশ করেছে এবং মন্ত্রণালয়গুলোকে অগ্রাধিকার নিয়ে তাদের ভৌত কাজ বন্যার পরই যাতে শুরু করা যায় সে লক্ষ্যে পেপার ওয়ার্ক শেষ করে দ্রুত উন্নয়ন কাজ করতে হবে।
তিনি উল্লেখ করেন, প্রাকৃতিক নিয়মেই বাংলাদেশে বন্যা হবে এবং এ দেশের মানুষকে প্রকৃতির সঙ্গেই বসবাস করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বন্যার পরই বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজের গতি বাড়াতে হবে যাতে এসব প্রকল্প সঠিক সময়ে সম্পন্ন হয় এবং দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়। দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে আরো সক্রিয় দায়িত্ব পালনের আহবান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি এলাকায় একটু খোঁজ নেয়া দরকার আমরা সতর্ক করে দিয়েছি কোন এলাকায় কেউ গৃহহীন থাকবে না, কেউ ভিক্ষা করবে না। যেখানেই গৃহহীন থাকবে তাদের একটা ঘর করে দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় তাঁর ‘ঘরে ফেরা’ কর্মসূচি পুনরায় চালুর ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, যারা ঘরে ফিরে যেতে চায় তাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ হিসেবে আমরা বস্তিবাসীর উপর সার্ভে করেছিলাম। এই কাজগুলো আবার করতে হবে। তিনি ‘শান্তি নিবাস’ এবং ‘অবসর’ কর্মসূচিও পুনরায় চালুর কথা বলেন। তাঁর সরকার প্রবৃদ্ধি ৮ দশমিক ১ ভাগে উন্নীত করেছে এবং এরপর আরো যত উপরে ওঠার চেষ্টা করা হবে অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ীই তা দুরুহ হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী এ সময় কাজের প্রতি সকলকে যতœবান হওয়ার পরামর্শ দেন।
তিনি বলেন, এখন কিন্তু অত দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন করা সম্ভব হবে না, অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ীই এটা হয়ে থাকে। আর এর থেকে যেন পিছিয়ে না যাই সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, ড. মশিউর রহমান এবং ড. তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, পিএমও’র এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক মো. আবুল কালাম আজাদ, পিএমও সচিব সাজ্জাদুল হাসান, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এবং প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো.নজিবুর রহমান অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। দুর্নীতি প্রতিরোধ এবং দুর্নীতি দমনে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দুর্নীতিতে যে ঘুষ নেবে শুধু সে অপরাধী নয়, যে দেবে সেও অপরাধী। এই জিনিসটা মাথায় রাখা এবং সেভাবে ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তাহলে আমাদের অনেক কাজ দ্রুত হবে। সম্পদের প্রতি মানুষের লোভের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্পদের তো সীমা আছে। মানুষ আসলে অন্ধ হয়ে যায় অর্থের জন্য। কিন্তু এটা ভুলে যায় যে মরে গেলে কিছু সাথে নেওয়া যাবে না, কবরে একাই যেতে হবে। যা রেখে যাবে সেটা আর কোনোদিন কাজে লাগবে না। আর যদি বেশি রেখে যায় তবে ছেলে-মেয়ের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। ওই নিয়ে মারামারি কাটাকাটি শুরু হয়ে যাবে। এখন যেটা যথেষ্ট দেখা যায়। তিনি বলেন, এই অন্ধের মত ছুটে বেড়ানো। আর নিজের সবকিছু নষ্ট করার কী অর্থ থাকে? কার কত আয়, আয় বুঝে ব্যয়; জীবনটা সবার ভালোভাবে চলুক সেটা আমরা চাই। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এই বিষয়টা সামনে নিয়ে আসা- যে ঘুষ দেবে সেও যেমন দোষী, যে নেবে সে দোষী। তাহলে এভাবে যদি আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি, এটা নিয়ন্ত্রণ, করলে আমাদের অনেক কাজ আমরা দ্রুত করতে পারবো। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) যথেষ্ট সক্রিয় আছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। কে কত খরচ করলো তারও একটা হিসাব নেওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন সরকারপ্রধান। এ সময় তাঁর সরকারের দুর্নীতি দমন কমিশন সক্রিয় থাকার উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী উপার্জন অনুযায়ী ট্রাক্স প্রদানের বিষয়টিও লক্ষ্য রাখার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, কে কত ট্যাক্স দিলো আর কে কত খরচ করলো তারও একটা হিসেবে নেয়া দরকার। দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বন্যা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আষাঢ়, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে বাংলাদেশে বৃষ্টি ও বন্যা হয় এবং এটা স্বাভাবিক। তবে, এতে জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতি যেন কম হয় সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং বন্যা মোকাবেলায় আমরা যে দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নিয়েছি সেটাও বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলাদেশ পলিবাহিত ব-দ্বীপ হওয়ায় এর মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি এবং ভ’গর্ভন্থ পানির স্তর রক্ষায় বন্যার প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কিন্তু এর ক্ষতিটা আমাদের কমিয়ে আনতে হবে। যে কোন পরিকল্পনায় মাথায় রাখতে হবে বন্যা বন্ধ করে নয় বরং বন্যার সঙ্গে বসবাস করা আমাদের শিখতে হবে।
দেশে ডেঙ্গু সমস্যা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে আরো সচেতন থাকার এবং এ বিষয়ে চিকিৎসকদের পরামর্শ মেনে চলার আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, ডেঙ্গু, এটা বিরাট সমস্যা। এটা শুধু আমাদের দেশে না, আমাদের আশপাশে অনেক দেশে কিন্তু ডেঙ্গুটা দেখা গেছে। দক্ষিণ এশিয়া তো বটেই, দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে। কোনো কোনো দেশে মহামারি আকারে, যেমন ফিলিপাইনে মহামারি আকারে দেখা গেছে। জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে তারা বাধ্য হয়েছে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় ব্যক্তিগত পর্যায়ে সচেতন হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিজেদের সচেতন থাকতে হবে। নিজেদের ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখা, মশার লার্ভাটা যেন না জন্মে, মশা যেন জন্ম না নিতে পারে সে বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং নিজে সচেতন থাকা, নিজেকে সুরক্ষিত করা। সেটা হচ্ছে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। সে বিষয়ে আমাদের আরও সর্তক হতে হবে।
তিনি বলেন, এখনও এর প্রকোপ অনেকটা আছে। এখন দেখা যাচ্ছে অনেক জেলাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। সে ব্যাপারে আমাদের সর্তক হতে হবে। আমি মনে করে এটা মোকাবিলা করায় যথেষ্ট সচেতন ছিলেন, সে ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছেন। ডেঙ্গু মোকাবিলায় সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অফিসের (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়) সবাই অত্যন্ত সক্রিয় ছিলেন। আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে শুরু করে যে যেখানে ছিল প্রত্যেকে এ ব্যাপারে যথেষ্ট সক্রিয় ছিল। আমাদের সিটি করপোরেশনগুলো চেষ্টা করেছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশ ভৌগলিক দিক থেকে ছোট কিন্তু জনসংখ্যার দিক থেকে অনেক বড়। এজন্য আমাদের কাজের চাপটা অনেক বেশি। প্রধানমন্ত্রী এ সময় ডেঙ্গু প্রতিরোধে পিএমও এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয় এবং সিটি কর্পোরেশনগুলোর প্রচেষ্টায় সন্তোষ প্রকাশ করে এ ব্যাপারে জনগণকে সতর্ক এবং পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, নিজের ঘর-বাড়ি এবং কর্মস্থলের চারপাশের পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে নিজেকে সচেতন হতে হবে। যাতে কোথাও পানি জমে এই রোগ সৃষ্টিকারী লার্ভা জন্মাতে না পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখনও এই রোগের প্রকোপ অনেকটা রয়ে গেছে এবং বিভিন্ন জেলাতেও ছড়িয়ে পড়েছে। কাজেই এ ব্যাপারে আমাদের আরেকটু সতর্ক হতে হবে। দেশের মানুষকে পরিস্কার-পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কে আরো সচেতন হওয়ার আহবান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নিজের কাজটি নিজেই করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন, পাশ্চাত্য বিশ্বের অনেক কিছুই আমরা অনুকরণ করতে চাই। কিন্তু তারা যেভাবে নিজেদের কাজটা নিজেরা করে তা আমরা অনুকরণ করি না। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, যারা একমময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার শুধু বিরোধিতাই করে নাই তারা বলেছিল বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে একটা বটমলেস বাস্কেট হবে। সেই দেশটার থেকেও যেন আমাদের দারিদ্রের হার কমাতে হবে। তাদের চেয়ে অন্তত এক শতাংশ হলেও দারিদ্র কমাতে হবে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। তারা উন্নত দেশ হতে পারে কিন্তু আমরা যে পারি সেটা আমাদের প্রমাণ করতে হবে- যোগ করেন তিনি। দারিদ্র বিমোচন এবং দেশের সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে যেকোন কাজে তাঁর কাছে যেকোন সময় যে কাউকে আসার অনুমতি দেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, আমাকে জনগণ ভোট দিয়ে প্রধানমন্ত্রী করেছে এটা ঠিক, কিন্তু আমি জাতির পিতার কন্যা কাজেই সেই হিসেবে, মনে করি দেশের প্রতি আমার একটা দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। সেখানে প্রটোকলের বাধা আমি কখনও মানি না, মানতেও চাই না। শেখ হাসিনা বলেন, আমি চাই সকলের সাথে মিশতে, জানতে এবং কাজ করতে। আমরা সকলে একটা টিম হিসেবে কাজ করবো যাতে দেশের উন্নয়নটা ত্বরান্বিত হয়। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষনের শুরুতে সকলকে পবিত্র ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা জানিয়ে শোকের মাস এই অগাস্টে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা এবং ১৫আগষ্টের শহীদদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। ৭৫ এর ১৫ই আগস্টের নির্মম হত্যাকা-ের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিবার-পরিজন হারিয়ে এবং শোক ও ব্যথা নিয়ে জাতির পিতার আকাক্সক্ষা পূরণের জন্যই তিনি কাজ করে যাচ্ছেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাঁর সম্প্রতি যুক্তরাজ্যে সরকারি সফরের উল্লেখ করে বলেন, চোখের চিকিৎসার কারণে তিনি এবার দীর্ঘদিন চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী দেশের বাইরে থাকতে বাধ্য হন।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২০:২৬:৪৫ ● ৩৭৯ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ