সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশকে রাজনীতি শূন্য করছে: ফখরুল

প্রথম পাতা » রাজনীতি » সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশকে রাজনীতি শূন্য করছে: ফখরুল
শনিবার ● ১৭ আগস্ট ২০১৯


সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশকে রাজনীতি শূন্য করছে: ফখরুল

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

সরকার সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে রাজনীতি শূন্য করে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিএনপির সামনে অনেক বড় ও কঠিন কাজ রয়েছে। মনে রাখতে হবে, সংগঠনের বিকল্প কিছু নেই। সংগঠন থাকলে আন্দোলন ও নির্বাচনে সফল হতে পারবেন। দলের নেতাকর্মী হিসেবে আপনাদের বিষয়টা মনে রাখতে হবে।
শনিবার (১৭ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১১টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। গাজীপুর সিটির সাবেক ভারপ্রাপ্ত মেয়র মো. আবদুল করিমসহ তার অনুসারীদের বিএনপিতে যোগদান উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে রাজনীতি শূন্য করে দিচ্ছে। বিরাজনীতিকরণ করছে, যাতে দেশের মানুষ রাজনীতি করতে না পারে। রাজনৈতিক দলগুলো যেন রাজনীতি করতে না পারে। তার জন্য সংবিধানে একে একে পরিবর্তন নিয়ে আসছে। তাদের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছেÑএ দেশে একদল থাকবে, আর কোনও দল থাকবে না। এটা তাদের সেই পুরনো দিনের ইচ্ছা। আগে বাকশাল করেছিল, বর্তমান আওয়ামী লীগ দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা চায়।
তিনি বলেন, এসময়ে বিএনপিতে তার (আব্দুল করিম) যোগাদান আমাদের অনুপ্রাণিত করছে যে, আমরা সঠিক পথে আছি। বিএনপির রাজনীতি সঠিক পথে আছে। করিম সাহেবের বক্তব্যে সেটা উঠে এসেছে।
গাজীপুর বিএনপির কমিটিতে তাকে দায়িত্বশীল পদ দিতেও আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন চালাচ্ছে, অভিযোগ করে তিনি আরও বলেন, ৭২ সালেও রক্ষীবাহিনী দিয়ে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের হত্যা করেছিল। আজকেও চারদিকে দুঃশাসন। দেশে কোনও আইনশৃঙ্খলা নেই। মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে, নারী-শিশুদের ধর্ষণ করা হচ্ছে। বিনাবিচারে হত্যা করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার দেশের অর্থনীতিকে শেষ করে দিয়েছে বলে দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ব্যাংকগুলোকে ধ্বংস করে দিয়েছে আগেই। সর্বশেষ কোরবানির চামড়া, যে চামড়া বিক্রি করে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মাদ্রাসাগুলো তাদের ভরণপোষণের অর্থ সঞ্চয় করে। আজকে সেই চামড়া শিল্পকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের মতো দুর্নীতিবাজ ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট তৈরি করে। আর চামড়া নিয়ে সরকারের কোনও নীতি না থাকার কারণে চামড়া শিল্প ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এটা আরও একটা চক্রান্ত। চামড়া শিল্পের উন্নতি হয়েছিল, বিদেশে চামড়াজাত যে দ্রব্য আমরা রফতানি করি, তার চাহিদাও বেড়ে গিয়েছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্য এবার সেটাও ধ্বংস হচ্ছে। খালেদা জিয়া কারাগারে থেকেও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই সংগ্রাম করে যাচ্ছেন, এমন মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, এদেশের সব মানুষ বিশ্বাস করে খালেদা জিয়াই একমাত্র গণতান্ত্রিক নেত্রী, যিনি গণতন্ত্রকে উদ্ধার করতে পারেন। আমরা সবার আগে দেশনেত্রীর মুক্তি চাই। তিনি এদেশের মানুষের আকাক্সক্ষার প্রতীক, স্বাধীনতা স্বার্বভৌমত্বের প্রতীক। দ্বিতীয়ত হলো এই দখলদারি সরকার, যারা নির্বাচন না করে ক্ষমতা দখল করে নিয়েছে। তাদেরকে পদত্যাগ করে অবিলম্বে নিরপেক্ষ সরকারের অধীন নির্বাচন দিতে হবে। একই সঙ্গে যে নির্বাচন কমিশন আছে তাদেরকে বাতিল করে দিয়ে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। এটা ছাড়া দেশে কোনোদিন রাজনৈতিক ও অর্থনেতিক মুক্তি আসবে না।
ফখরুল বলেন, দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী যখন কারাগারে, হাজার হাজার নেতাকর্মীর নামে মামলা, সেই সময়ে আবদুল করিমের যোগদান নিঃসন্দেহে আমাদের অনুপ্রাণিত করবে। তাকে আমরা দলে বরণ করে নিচ্ছি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন গাজীপুর মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম শুক্কুর, সাংগঠনিক সম্পাদক সিরাজুল হক মোল্লা প্রমুখ। এ সময় গাজীপুর মহানগর বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের শতাধিক নেতাকর্মী ও সদ্য বিএনপিতে যোগ দেওয়া নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
অগ্নিকা-ের ঘটনা নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি: মিরপুর চলন্তিকা মোড় সংলগ্ন ঝিলপাড় বস্তিতে অগ্নিকা-ের ঘটনা খতিয়ে দেখতে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার দুপুরে পুড়ে যাওয়া বস্তি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এমন দাবি জানান। মির্জা ফখরুল বলেন, সম্প্রতি ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন বস্তিতে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় দুঃস্থ ও দরিদ্র মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে পড়ছেন। এ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠন হওয়া জরুরি। তদন্ত করে দেখতে হবে কেন এসব অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটছে, যদি কোনো মানুষের মাধ্যমে এসব ঘটনা ঘটে তবে তাদের বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। চলন্তিকা ঝিলপাড় বস্তিতে আগুন লেগে প্রায় ৩০ হাজার পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে উল্লেখ করে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি জানান ফখরুল।
এর আগে মির্জা ফখরুলসহ বিএনপির নেতাকর্মীরা ঝিলপাড় বস্তিতে আগুনে পুড়ে যাওয়া বস্তি পরিদর্শন করেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত বস্তিবাসীর সঙ্গে কথা বলে তাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। এ সময় ফখরুল বস্তিবাসীদের বলেন, আপনারা ধৈর্য ধরুন, আমাদের সীমিত ক্ষমতার মধ্যে আপনাদের পাশে থাকার চেষ্টা করবো। আমাদের পক্ষ থেকে যা করা যায় তাই করার চেষ্টা করা হবে। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টা ২২ মিনিটে বস্তিটিতে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের ২৪টি ইউনিট ৩ ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ততক্ষণে সব পুড়ে ছাই হয়ে যায় বস্তিবাসীর।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৯:৫৮:৩৫ ● ৩০১ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ