দু’শতাধিক কারখানার রফতানি বন্ধের উদ্যোগ

প্রথম পাতা » সর্বশেষ » দু’শতাধিক কারখানার রফতানি বন্ধের উদ্যোগ
বৃহস্পতিবার ● ৮ আগস্ট ২০১৯


দু’শতাধিক কারখানার রফতানি বন্ধের উদ্যোগ

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

আশানুরূপ সংস্কার না করায় নতুন করে ২০৫টি তৈরি পোশাক কারখানার রফতানি বন্ধের উদ্যোগ নিচ্ছে শ্রম মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর (ডিআইএফই)। বার বার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও ওসব কারখানা সংস্কার না করায় এ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ওসব গার্মেন্টসের কাঁচামাল আমদানির সুযোগ বন্ধ করতে ইউটিলিটি ডিক্লারেশন বা ইউডি সেবা বাতিলের জন্য পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএতে শিগগিরই চিঠি পাঠানো হচ্ছে। একইভাবে কাঁচামালের প্রাপ্যতার অনুমোদন বা ইউপি বন্ধ করার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটকেও চিঠি পাঠানো হবে। ডিআইএফই’র সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিদেশি ক্রেতা বা বায়ারের কাছ থেকে পণ্য রপ্তানির ক্রয়াদেশ পাওয়ার পর কাঁচামাল ও অন্যান্য উপকরণ আমদানির জন্য সংশ্লিষ্ট কারখানা প্রাপ্যতার ঘোষণা দেয়। বিজিএমইএ তা দেখভাল করে। তার ভিত্তিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট অনুমোদন দিয়ে থাকে, যা ইউটিলিটি পারমিশন বা ইউপি নামে পরিচিত। তবে ইউডি সেবা বন্ধ হয়ে গেলে ওসব কারখানার পক্ষে সরাসরি কাঁচামাল আমদানির সুযোগ থাকবে না। ফলে বৈধভাবে উৎপাদন কার্যক্রম করার সুযোগও রহিত হয়ে যায়।
সূত্র জানায়, প্রথম দফায় গত প্রায় দেড় বছর আগে কারখানা সংস্কারে ব্যর্থতা ও অসহযোগিতার অভিযোগে ২১৫টি কারখানার ইউডি সেবা বন্ধ করার জন্য পোশাক শিল্প মালিকদের দুটি সংগঠন বিজিএমইএ ও বিকেএমইএকে চিঠি পাঠিয়েছিল ডিআইএফই। ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে বিজিএমইএ তাদের সদস্যভুক্ত ১৪২টি কারখানার মধ্যে ৫১টির ইউডি সাময়িক বাতিল করেছে। বাদবাকি ৯১টির মধ্যে ৪১টি কিছুটা অগ্রগতি করায় নতুন করে সরকারের উদ্যোগে চলমান সংস্কার কার্যক্রমের মধ্যে আসে। বাদবাকি ৫০টি কারখানা সংস্কারে আশানুরূপ কোনো উন্নতি করতে পারেনি। এই ৫০টির সঙ্গে নতুন করে একই তালিকায় যুক্ত হয়েছে ১৫৫টি কারখানা। অর্থাৎ মোট ২০৫টি কারখানা সংস্কারে একেবারেই পিছিয়ে।
সূত্র আরো জানায়, বিগত ২০১৩ সালে রানা প্লাজা দুর্ঘটনায় পর ওই বছরই ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতাদের সমন্বয়ে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স নামে আলাদা দুটি জোট গঠিত হয়। ওই দুটি জোট বায়ারদের কাছ থেকে রপ্তানিকারক প্রায় ২ হাজার গার্মেন্টস কারখানা ভবনের কাঠামো, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরীক্ষা করে ত্রুটি সংস্কার তদারকির দায়িত্ব নেয়। ওই জোটভুক্ত কারখানাগুলোর সংস্কারে অগ্রগতি গড়ে ৯০ শতাংশের ওপরে। তবে অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের তদারকির বাইরে থাকা দেড় হাজার কারখানা সংস্কারের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের শুরুতে উদ্যোগ নেয় সরকারের শ্রম মন্ত্রণালয়। চার বছর সময় পেরিয়ে গেলেও ওই কারখানাগুলো ভবনের কাঠামো, অগ্নি ও বৈদ্যুতিক ত্রুটির সংস্কার হয়েছে মাত্র এক-তৃতীয়াংশ। এই সময়ের মধ্যে বন্ধ হয়ে যাওয়া, স্থানান্তর কিংবা অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সে যুক্ত হওয়া কারখানা বাদ দিয়ে এখন ৬৯৭টি কারখানার সংস্কার দেখভাল করছে ডিআইএফই। কিন্তু গত সাড়ে তিন বছর ধরে দফায় দফায় সভা করেও সংস্কারের কাক্সিক্ষত অগ্রগতির ক্ষেত্রে আশানুরূপ ফল মেলেনি।
এদিকে এ প্রসঙ্গে ডিআইএফই সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব কারখানার প্রতিনিধিদের সঙ্গে বহুবার বৈঠক করে সতর্ক করার পরও তারা সংস্কার করছেন না। এটি এখন ‘সহ্যের সীমা’ ছাড়িয়ে গেছে। এখানে একটি কারখানায়ও কোনো ধরনের দুর্ঘটনা ঘটলে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সবার ওপর। অথচ গত ৬ বছরে অনেক কারখানাই সংস্কারের জন্য কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করে এখন কর্মপরিবেশ সম্পন্ন (কমপ্লায়েন্ট) হয়েছে। এসব কারখানার জন্য কমপ্লায়েন্ট কারখানা ভুক্তভোগী হোক তা কেউ চায় না। ওসব কারখানার ইউডি সেবা বন্ধ করতে ঈদের আগেই বিজিএমইএকে চিঠি পাঠানো হবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক গতকাল জানান, ডিআইএফইর চিঠি পাওয়ার পর বিজিএমইএ ব্যবস্থা নেবে। আমরা চাই যেসব কারখানা সংস্কার করবে না, সেগুলো বন্ধ হয়ে যাক। আগে যে কারখানাগুলোর বিষয়ে চিঠি দেয়া হয়েছিল, তাদের অনেকেরই ইইডি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কিছু কারখানা এমনিতেই বন্ধ হয়ে আছে। আবার কিছু কারখানা সংস্কারে অগ্রগতিও করেছে।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২২:০৮:৩০ ● ৩৮২ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ