ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
সুপ্রিম কোর্টের বিচারকসহ সাংবিধানিক পদাধিকারীদের রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম ও সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী প্রটোকল দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। তথ্য সচিব, বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিলসহ দেশের সকল জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারদের এ নির্দেশ দেওয়া হয়ছে। সেই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের বিষয়ে সংবাদ প্রচার-প্রকাশের ক্ষেত্রে গণমাধ্যমকেও সতর্ক করা হয়েছে।
একটি রিট আবেদনের শুনানি করে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর হাই কোর্ট বেঞ্চ বুধবার (৭ আগস্ট) এ আদেশ দেয়। হাই কোর্টের একজন বিচারককে খুলনা সফরের সময় প্রটোকল দেওয়ার অনুরোধ নিয়ে সম্প্রতি কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. শাহীনুর রহমান এই রিট আবেদন করেন। রিট আবেদনের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী একরামুল হক টুটুল, যিনি কিছুদিন আগেও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলের দায়িত্বে ছিলেন।
পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “কিছু সংবাদমাধ্যম প্রটোকল নিয়ে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চকে মিসকোট করে সংবাদ প্রচার করেছে। পরে একজন বিচারপতির সফর নিয়েও বিভ্রান্তিকর সংবাদ প্রকাশ করা হযেছে। এতে সুপ্রিম কোর্ট এবং সাংবিধানিক পদাধিকারীর মর্যাদা ক্ষুণœ করা হয়েছে, এটাই আমি শুনানিতে বলেছি।” সরকারের একজন যুগ্ম সচিবের অপেক্ষায় কাঁঠালবাড়ি ঘাটে তিন ঘণ্টা ফেরি আটকে রাখায় বিগত ২৫ জুলাই তিতাস ঘোষ নামের এক স্কুলছাত্র অ্যাম্বুলেন্সেই মারা যায়। এরপর ৩১ জুলাই তিতাসের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ চেয়ে এক রিট মামলার শুনানিতে বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের হাই কোর্ট বেঞ্চ বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দেয়। বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের সেদিন শুনানির একপর্যায়ে বলেন, “সরকারের কোনো স্তরের কর্মকর্তাই কেউ ভিআইপি নন। তারা পাবলিক সার্ভেন্ট। সারা বিশ্বে অ্যাম্বুলেন্স, অগ্নিনির্বাপণে ফায়ার সার্ভিস এবং নিরাপত্তার জন্য পুলিশের গাড়ি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যেতে দেওয়া হয়। আর এখানে ঘটেছে তার উল্টোটা। ভিআইপি কারা সেটা আইনেই বলে দেওয়া আছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার জন্য যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এটা অন্য কারো ক্ষেত্রে নয়। ভিআইপি থাকলেও অ্যাম্বুলেন্সকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আগে যেতে দেওয়া হয়ে থাকে, কারণ এর সঙ্গে একজন মানুষের জীবন-মৃত্যুর বিষয়টি জড়িয়ে রয়েছে। এ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই হাই কোর্টের একজন বিচারপতির খুলনা সফরের সময় সার্কিট হাউজে ভিআইপি কক্ষ, গাড়ি ও পুলিশ এসকর্টের ব্যবস্থা চাওয়া হয় খুলনার জেলা প্রশাসনের কাছে।
কয়েকটি সংবাদমাধ্যম তখন বিচারপতির জন্য ‘ভিআইপি প্রটোকল’ চাওয়া হয়েছে বলে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সুপ্রিম কোর্ট একটি সাংবিধানিক সংস্থা হওয়ায় রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম ও সংশ্লিষ্ট আইন অনুযায়ী বিচারপতিরাও প্রটোকল পান। সেই প্রটোকল না দেওয়ায় আদালত অবমাননায় দোষী সাব্যস্ত করে ফেনীর সাবেক জেলা জজ মো. ফিরোজ আলমকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করে হাই কোর্ট।
১৩ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি কুদ্দুস জামানের হাই কোর্ট বেঞ্চের রায়ে বিচারপতিদের ভ্রমণ ও পরিদর্শনের ক্ষেত্রে প্রটোকল ব্যবস্থা নিয়ে কয়েক দফা নির্দেশনাও দেওয়া হয়।
সেই নির্দেশনায় বলা হয়-
১. ছুটির দিনে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি কোনো জেলা সদরে পরিদর্শন, ভ্রমণ বা সফরে গেলে জেলা ও দায়রা জজ পদ মর্যাদার অন্তত একজন বিচারিক কর্মকর্তা সফরকারী বিচারপতিকে সার্কিট হাউজ বা তার অবস্থানেরজায়গায় অভ্যর্থনা জানাবেন।
সে সময় জেলা ও দায়রা জজ জেলা সদর দপ্তরে অবস্থান করলে অবশ্যই তাকে সফরকারী বিচারপতিকে সৌজন্য কল করতে হবে।
২. সপ্তাহের কোনো কর্মদিবসে অফিস চলাকালে সুপ্রিম কোর্টের কোনো বিচারপতি সফরে গেলে জাজ ইনচার্জ নেজারত বিচারপতিকে অভ্যর্থনা জানাবেন। তবে আদালতের কার্যক্রম শেষে জেলা দায়রা জজ অথবা তার অনুপস্থিতেতে একজন বিচারিক কর্মকর্তা সফরকারী বিচারপতিকে সৌজন্য কল দিবেন।
৩. সফরকারী বিচারপতি উপজেলা বা গ্রামে অবস্থান করলে জাজ ইনচার্জ নেজারত অথবা একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা তার দেখভাল করবেন।
৪. সফরকারী বিচারপতির বিদায়ের সময় জেলা ও দায়রা জজ বা অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজকে অবশ্যই উপস্থিত থাকতে হবে। জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার বা তাদের প্রতিনিধিদেরও সে সময় উপস্থিত থাকতে হবে।
এফএন/এমআর