বিদ্যুৎকেন্দ্রের উপকরণ আমদানিতে রেয়াত সুবিধার অপব্যবহার হচ্ছে

প্রথম পাতা » জাতীয় » বিদ্যুৎকেন্দ্রের উপকরণ আমদানিতে রেয়াত সুবিধার অপব্যবহার হচ্ছে
মঙ্গলবার ● ৬ আগস্ট ২০১৯


বিদ্যুৎকেন্দ্রের উপকরণ আমদানিতে রেয়াত সুবিধার অপব্যবহার হচ্ছে

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে প্রয়োজনীয় উপকরণ আমদানিতে কর রেয়াত সুবিধা দিচ্ছে। কিন্তু অনেক প্রতিষ্ঠানই বিদ্যুৎকেন্দ্রের উপকরণের নামে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য পণ্য আমদানি করে রেয়াত সুবিধার অপব্যবহার করছে। এমনকি বিদ্যুৎ বিভাগের প্রত্যয়নপত্র নিয়ে রেয়াত সুবিধায় পণ্য আমদানি করে বাইরে বিক্রিরও অভিযোগ উঠেছে। এনবিআর থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে সব ধরনের কর অবকাশ সুবিধা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও রেয়াতযোগ্য পণ্যের সুনির্দিষ্ট তালিকা করা হয়নি। চলতি বছর এনবিআরের সর্বশেষ প্রজ্ঞাপনে শুধু বলা হয়েছে, কোনো পণ্য চালান খালাসকালে রাজস্বহানির সম্ভাবনা থাকলে সেসব পণ্যের চালান খালাস করে এনবিআরের নজরে আনতে হবে। এ অস্পষ্টতার সুযোগে বিদ্যুৎকেন্দ্রের উদ্যোক্তারা অরেয়াতযোগ্য পণ্য আমদানি করছে। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সাম্প্রতিক সময়ে বিদ্যুৎ বিভাগের প্রত্যয়নপত্র নিয়ে বিদ্যুৎ খাতে অরেয়াতযোগ্য পণ্য আমদানি হচ্ছে। এসব পণ্যের মধ্যে আছে প্রি-ফ্যাব্রিকেটেড বিল্ডিং, বোল্ডার পাথর, এমএস রড, হট রোল্ড স্টিল প্লেট, স্টিল স্ট্রাকচার, স্টিল পাইপ, অ্যাংকর বোট ও ড্রেজার। রেয়াতযোগ্য পণ্যের সুনির্দিষ্ট তালিকা না থাকায় এসব পণ্য খালাসও হচ্ছে। সম্প্রতি বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে নদী খননকাজের জন্য ড্রেজার ও অ্যাংকর বোট আমদানি করা হয়েছে। রেয়াত সুবিধার বাইরে থাকা এ পণ্য আমদানি নিয়ে পায়রা কাস্টম হাউজের কমিশনার উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, তথ্য গোপন করে বিদ্যুৎ খাতের আড়ালে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে এসব পণ্য আমদানি হচ্ছে। রেয়াত সুবিধায় বিদ্যুৎকেন্দ্রের অত্যাবশ্যকীয় যন্ত্রপাতি রোটর, জেনারেটর, ট্রান্সমিশন লাইনের পাশাপাশি বোল্ডার পাথর, কেবল, পেইন্ট, ট্রান্সফরমার অয়েল, লুব বে¬ন্ডিং অয়েলের মতো পণ্য আমদানিরও চেষ্টা হচ্ছে। এনবিআরের প্রজ্ঞাপনে পণ্য তালিকা সুনির্দিষ্ট না থাকায় এ জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে রাজস্ব বিভাগ সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
সূত্র জানায়, মোংলা বন্দর দিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে পাথর, রড, স্টিল শিটের মতো পণ্য আমদানির ঘটনা ঘটছে। এসব পণ্যের স্থানীয় উৎপাদন থাকায় তাতে রেয়াত সুবিধা দিলে তা স্থানীয় শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎকেন্দ্রের রেয়াতযোগ্য পণ্যের সুনির্দিষ্ট তালিকা তৈরি করতে এনবিআরে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এনবিআরের প্রজ্ঞাপনের অস্পষ্টতা দূর হলে শুল্কায়ন প্রক্রিয়া আরো সহজ ও গতিশীল হবে। প্রজ্ঞাপনে রেয়াত সুবিধা দেয়া হয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রকে, ডিস্ট্রিবিউশনের ক্ষেত্রে নয়। তবে বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের দাবি, বিদ্যুৎ বিভাগ শুধু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণসংশ্লিষ্ট পণ্য আমদানিতেই প্রত্যয়নপত্র ইস্যু করছে। অরেয়াতযোগ্য কোনো পণ্য আমদানিতে প্রত্যয়নপত্র ইস্যু করা হচ্ছে না।
সূত্র আরো জানায়, বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনকারী বেসরকারি উদ্যোক্তারা বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কর রেয়াত সুবিধায় রড, পাথর আমদানি করে খোলাবাজারে বিক্রির অভিযোগের সত্যতা নেই বলে দাবি করছেন। অথচ দেশের ইস্পাত খাতের উদ্যোক্তাদের মতে, বিদ্যুৎ কোম্পানির নামে রেয়াত সুবিধায় রড, স্টিল স্ট্রাকচার শুল্কমুক্ত আমদানি করে খোলাবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে। ফলে দেশীয় শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অটো রি-রোলিং অ্যান্ড স্টিল মিলস অ্যাসোসিয়েশন সংশ্লিষ্টদের দাবি, বেশকিছু কোম্পানি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং সরকারি অবকাঠামো নির্মাণে শুল্কমুক্ত রড ও বিভিন্ন ধরনের স্টিল স্ট্রাকচার আমদানি করে খোলাবাজারে বিক্রি করছে। অথচ দেশীয় কোম্পানিগুলো সব ধরনের শুল্ক ও কর দিয়ে এ পণ্য উৎপাদন করছে। এমনিতে চলতি হিসাব বছরের বাজেটে রড উৎপাদনে করভার বাড়ানো হয়েছে। তাই রড ও স্টিল স্ট্রাকচারের দামও বেড়েছে। শুল্কমুক্ত সুবিধায় কম দামে বাজারে রড বিক্রি হওয়ায় অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। এ ব্যাপারে এনবিআরে অভিযোগ দেয়া হয়েছে। আশা করা যায়, এ বিষয়ে এনবিআর শক্ত পদক্ষেপ নেবে।
এদিকে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে কর রেয়াতযোগ্য পণ্য ও অরেয়াতযোগ্য পণ্যের তালিকা প্রস্তুত করতে একটি কমিটি গঠন করেছে এনবিআর। এনবিআর, বিদ্যুৎ বিভাগ, কাস্টম হাউজ ও সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত আট সদস্যের কমিটি এ ব্যাপারে তাদের মতামত জানাবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইপিপিএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বারাকা পাওয়ার লিমিটেডের চেয়ারম্যান গোলাম রব্বানি চৌধুরী জানান, রেয়াত সুবিধা অপব্যবহারের অভিযোগের কোনো ভিত্তি নেই। একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে অত্যাবশ্যকীয় যেসব পণ্য প্রয়োজন হয়, তা বিদ্যুৎ বিভাগ ও বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ঠিক করে দেয়। তাদের সনদ দেখে শুল্কমুক্ত পণ্য খালাস করে কাস্টম হাউজ। এখানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের নামে রড, পাথর আমদানি করে খোলাবাজারে বিক্রির কোনো সুযোগ নেই।
এ প্রসঙ্গে এনবিআরের কাস্টমস নীতি বিভাগের সদস্য সৈয়দ গোলাম কিবরিয়া জানান, বিদ্যুৎ খাতে সরকার সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। তাই এ খাতে বর্তমান রাজস্ব সহায়তা বহাল থাকবে। তবে আমাদের দেখতে হবে এ নীতির কোনো অপব্যবহার যেন না হয়। তাই রেয়াতযোগ্য পণ্যের তালিকা তৈরি করে নতুন প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। পাশাপাশি আগের প্রজ্ঞাপন বাতিল করা হবে।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ২৩:৪৯:১৮ ● ৩৫৮ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ