হাইকোর্টে মিন্নির জামিন আবেদন, শুনানি মঙ্গলবার
প্রথম পাতা »
বরগুনা »
হাইকোর্টে মিন্নির জামিন আবেদন, শুনানি মঙ্গলবার
ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন আবেদনের শুনানির জন্য মঙ্গলবার দিন নির্ধারণ করেছেন হাইকোর্ট।
সোমবার (৫ আগস্ট) বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ওই আদেশ দেন। মিন্নির পক্ষে সকালে আইনজীবী জেড আই খান পান্না জামিন আবেদন করেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষ ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. রেজাউল করীম বলেন, এ মামলার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেল শুনানি করবেন। আদালত আগামীকাল মঙ্গলবার শুনানির জন্য দিন ধার্য করেন।
এদিকে, আদালতে আবেদনটি শুনানির জন্য উপস্থাপন করে আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, এটি খুবই দুঃখজনক ঘটনা। এ মামলায় মিন্নি চাক্ষুস সাক্ষী, অথচ মামলার ১২ নম্বর আসামির বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তাকে আসামি করা হয়েছে। অবশ্যই এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা। রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাউল করিম এ সময় আদালতের কাছে সময়ের আবেদন করে বলেন, এ মামলায় অ্যাটর্নি জেনারেল নিজে শুনানি করবেন। এজন্য সময় প্রয়োজন। এরপর আদালত মঙ্গলবার জামিন আবেদনটি শুনানির জন্য রাখে।
এর অগে কি যুক্তিতে মিন্নির জামিন চাওয়া হয়েছে জানতে চাইলে জেড আই খান পান্না সাংবাদিকদের বলেন, প্রথমত তিনি একজন নারী এবং তিনি অসুস্থ। তাছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৮ ধারায় তার জামিন পাওয়ার অধিকার আছে। আর তিনি এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী। ষড়যন্ত্র করে তাকে গ্রেফতার ও আসামি করা হয়েছে।
বিগত ৩০ জুলাই বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলার আসামি তাঁর স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এর আগে গত ২২ জুলাই বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে প্রথমবার মিন্নির জামিনের আবেদন করেন তাঁর আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. মাহবুবুল বারী আসলাম। ওই দিনই শুনানি শেষে আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম গাজী তাঁর (মিন্নি) জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এরপর ২৩ জুলাই মিস কেস দাখিল করে বরগুনার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আসাদুজ্জামানের আদালতে ফের জামিনের আবেদন করেন মিন্নির আইনজীবী মো. মাহবুবুল বারী আসলাম। পরে জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতের নথি তলব করে ৩০ জুলাই এ জামিন শুনানির দিন ধার্য করেন আদালত। দীর্ঘ তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে উভয়পক্ষের শুনানি চলতে থাকে। এ সময় মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে তলব করেন আদালত। তদন্ত কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির আদালতে উপস্থিত হলে এ হত্যাকা-ে মিন্নির সম্পৃক্ততার বিষয়ে তথ্য জানতে চান আদালত। সবার উপস্থিতিতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ল্যাপটপে হত্যাকা-ের আগের ও পরের ভিডিও ফুটেজ দেখান। এ ছাড়া মিন্নির ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিসহ হত্যার আগে ও পরে প্রধান আসামি নয়ন বন্ডসহ অন্যান্য আসামির সঙ্গে তাঁর কললিস্টের তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করেন।
২৬ জুন রিফাতকে বরগুনার রাস্তায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। সে সময় স্বামীকে বাঁচাতে মিন্নির চেষ্টার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারাদেশে আলোচনার সৃষ্টি হয়। পরদিন রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ ১২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেন; তাতে প্রধান সাক্ষী করা হয়েছিল মিন্নিকে। সম্প্রতি মিন্নির শ্বশুর তার ছেলের হত্যাকা-ে পত্রবধূর জড়িত থাকার অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করলে আলোচনা নতুন দিকে মোড় নেয়। ১৬ জুলাই মিন্নিকে বরগুনার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে ডেকে নিয়ে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদের পর এ মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। পরদিন আদালতে হাজির করা হলে বিচারক মিন্নিকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। রিমান্ডের তৃতীয় দিন শেষে মিন্নিকে আদালতে হাজির করা হলে সেখানে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বলে পুলিশ জানায়। তবে বরগুনা সরকারি কলেজের এই স্নাতকের ছাত্রী ইতোমধ্যে জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে। তার বাবার অভিযোগ, নির্যাতন করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে মিন্নিকে ‘স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে’ পুলিশ। এর পেছনে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের হাত আছে বলেও তার দাবি। বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালত এবং জেলা ও দয়েরা জজ আদালতে মিন্নির জামিন আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ার পর এখন হাই কোর্টের দ্বারস্থ হলেন তার আইনজীবীরা।
এফএন/এমআর
বাংলাদেশ সময়: ২০:৪৫:৫৮ ●
৩৪১ বার পঠিত
(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)