জাহিদ রিপন, সাগরকন্যা প্রতিবেদক॥
কেউ জমি চাষ দিচ্ছে। কেউ দিচ্ছে নিড়ানী। অনেকে আবার সদ্য বেড়ে ওঠা গাছের পরিচর্যাসহ পোকার আক্রমন হয়েছে কিনা পরীক্ষা করছে। এমন চিত্র এখন পটুয়াখালীর বিস্তীর্ণ আবাদী মাঠ জুড়ে। আমন ধান উঠার সাথে সাথে এভাবেই আবাদী মাঠে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে পটুয়াখালীর তরমুজ, মরিচ, আলুসহ বিভিন্ন রবিশষ্য চাষীরা। আনুকুল আবাহাওয়াসহ পোকার আক্রমন না হলে এবারও রবিশস্য চাষে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। অপরদিকে বাজার মূল্য ভাল পেলে শ্রম সার্থকসহ আর্থিক সাবলম্বীতা আসবে। এমন আশা কৃষকদের।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বিগত বছরে ভাল ফলনসহ কাংখিত মুল্য পাওয়ায় এ বছর রবিশস্য চাষের জমি বেড়েছে। বিভিন্ন প্রকারের ডাল, তেল, মসলা জাতীয় শস্য, শীতকালীন বিভিন্ন সবজিসহ প্রায় ২৫ প্রকারের অনান্য ফসলের চাষ হচ্ছে জেলার ৮টি উপজেলায়। চলতি রবি মৌসুমে তরমুজের নগরী খ্যাত রাঙ্গাবালী উপজেলায় ৮ হাজার হেক্টর, গলাচিপা উপজেলায় সাড়ে ছয় হাজার হেক্টর, কলাপাড়া উপজেলায় ২ হাজার হেক্টরসহ এ তিন উপজেলাতেই মোট সাড়ে ষোল হাজার হেক্টর জমিতে তরমুজ চাষ হচ্ছে। হেক্টর প্রতি ৪০ মেট্রিক টন হিসাবে এ তিন উপজেলায় ৬ লক্ষ ৬০ হাজার মেট্রিক টন তরমুজ উৎপাদনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। যার বিক্রয় মূল্য ধরা হয়েছে ৫৭৭কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। উৎপাদন খরচ ২০৬ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা বাদ দিয়ে কৃষক পর্যায়ে পাচ্ছে প্রায় ৩৭১ কোটি টাকা।
রাঙ্গাবলী উপজেলায় সাড়ে ৩’শ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি, ২’শ হেক্টর জমিতে খিরাই, পনের’শ হেক্টর জমিতে ফেলন, ৬’শ হেক্টর জমিতে খেসারী, ৫০০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজিসহ ১১ হাজার ৩৬৮.২৫ হেক্টর জমিতে ২৩ ধরনের রবিশস্য চাষ হচ্ছে। গলাচিপায় ৪’শ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হচ্ছে। হেক্টর প্রতি ৩০ টন হিসাবে প্রায় ১২ হাজার টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। আলুর উৎপাদন ব্যায় ১৫৭কোটি ৫০ লক্ষ টাকা বাদ দিয়ে লাভ হওয়ার সম্ভাবনা আশা করছে ১৭৯ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা।
কলাপাড়া কৃষি অফিস জানায়, চলতি মৌসুমে উপক’লীয় এলাকায় ১২’শ হেক্টর জমিতে ভুট্টা, ৫০০ হেক্টর জমিতে উফশী জাতের মরিচ, ৩৫ হেক্টর জমিতে চিনা বাদাম আবাদ হচ্ছে। জমি ভাড়া, জমি তৈরি, বীজ, নিড়ানী, সার-কিটনাশক এবং কৃষকের শ্রম ব্যয় ধরে প্রতি হেক্টর ভুট্টা উৎপাদন ব্যায় হচ্ছে ৬৫ হাজার টাকা। প্রতি হেক্টরে ৮টন হিসাবে ৯হাজার ৬’শ টন ভ’ট্টা উৎপাদন আশা করছে তারা। যার বিক্রয় মূল্য ধরা হয়েছে ১৯ কোটি ২০লক্ষ টাকা। এতে হেক্টর প্রতি ৯৫ হাজার টাকা কৃষক পর্যায়ে লাভ হচ্ছে। হাজার ৫ মেট্রিক টন চিনা বাদামে
রাংগাবালীর ছাতিয়ানপাড়ার তরমুজ চাষী নজরুল হাওলাদার জানান, ২কানী ২বিঘা জমিতে তরমুজ চাষ করেছেন। ভাল ফলন এবং মূল্য পেলে খরচ বাদে ৫/৬ লক্ষ টাকা লাভের আশা করছেন তিনি। বিগত বছরের লাভের হিসাব তুলে ধরে মরিচ চাষী নাজমুল জানান, ১ হেক্টর জমি মরিচ চাষে ৫০ হাজার টাকা ব্যায়ে তার লাভ হবে সাড়ে তিন লক্ষ টাকার বেশি। কলাপাড়ার তুলাতলী এলাকার মরিচ ও ভুট্টা চাষী নজরুল ইসলাম জানান, গেল বছর ২১ শতাংশ জমিতে ভুট্টা চাষে তার লাভ হয়েছে ১০ হাজার টাকা। ৩৬ শতাংশ জমিতে মরিচ চাষে লাভ হয়েছে কুড়ি হাজার টাকা। লাভ বেশি হওয়ায় এবার ১ একর জমিতে ভুট্টা ও ১ একর জমিতে মরিচ চাষ করছেন।
গলাচিপা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এআরএম সাইফুল্লাহ জানান, আমন ধান উঠার সাথে সাথে কৃষক রবিশষ্য চাষের জন্য খুব দ্রুত মাঠে নেমেছে। চাষীদের সঠিক পরামর্শ দেওয়ার জন্য ইউনিয়নে সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠে তৎপর রয়েছে। প্রাকৃতিক দূর্যোগ না হলে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে।
একই আশা ব্যক্ত করে কলাপাড়া উপজেলা এবং রাংগাবালী উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনকারী কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আ. মন্নান জানান, উপকূলীয় এলাকায় মিস্টি পানির সংরক্ষণ বাড়ানো গেলে উপকূলীয় এলাকায় রবিশস্য উৎপাদনে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে।