টুঙ্গিপাড়া (গোপালগঞ্জ) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
‘এই ভিটায় আমার বাবা মরেছে , ঠাকুরদা (পিতার পিতা) এবং তার ঠাকুরদা মরেছে ।’পাঁচ পুরুষের সেই ভিটার ঘর থেকে জোর করে বের করে দিয়ে পুকুর খনন করার কাজ শুরু করেছে । ঘরের চার পাশ দিয়ে মাটি কেটে ফেলছে। বাবার হাতের শেষ স্মৃতিটুকু আর রাখতে পারলামনা । এর থেকে মরে যাওয়া ভালো ছিলো । চোখের কোনে পানি চলমল করছিলো আর থেমে থেমে কথা গুলো বলছিলেন দ্বীজেন গাইন (৮০)।
দ্বীজেন গাইন গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নের লেবুতলা গ্রামের মধ্যপাড়া গাইন বাড়ির স্বর্গীয় কমলেশ লাল গাইনের ছেলে । দুই ছেলে ও পুত্রবধুদের নিয়ে একত্রে থাকেন তিনি। তার একটি প্রতিবন্ধি নাতিও আছেন। বাবার দেওয়া ঘর তিনি সর্বশেষ মেরামত করেন ১৯৮৮-৮৯ সালে। এখানেই সবাইকে নিয়ে বসবাস করে আসছে যুগের পর যুগ। সেই বসত ভিটা হারাতে বসেছেন দ্বীজেন গাইন।
দ্বীজেন গাইনের পুত্রবধু শিবানি গাইন বলেন, পাশের বাড়ির মলিনা বিশ্বাস (৪০) স্থানীয় প্রভাব শালীদের ছত্রছায়ায় থেকে ক্ষমতা দেখিয়ে ওই জায়গা থেকে তাদের ঘর সরিয়ে নিতে পায়তারা করে আসছে বিগত এক বছর যাবত। এনিয়ে আদালতেও মামলা করেছে মলিনা বিশ্বাস । কিন্তু আদালত মামলা খারিজ করে দেন। এরপর মলিনা বিশ্বাস ভাড়াটিয়া লোক নিয়ে গত ২৯ শে জুলাই আমাদের ঘরের সামনের থেকে মাটি কেটে পুকুর খনন করার কাজ শুরু করে। ৩০ জুলাই দ্বীজেন গাইনের ছেলে নিতীশ গাইন (৪৫) টুঙ্গিপাড়া থানায় অভিযোগ করলে পুলিশ এসে নিষেধ করে এবং উভয় পক্ষকে থানায় হাজির হতে বলে। কিন্তু ওই আদেশ অমান্য করে ২ আগষ্ট মলিনা লোক দিয়ে পুনরায় মাটি কাটে এবং দ্বীজেনের রান্না ঘর , টিউবওয়েল ও টয়লেট ভেঙ্গে অন্যত্র ফেলে দেয় । এক পর্যায়ে বসত ঘরের সামনের সিড়িঁ ও পোতার (মেঝের) মাটি কাটে । দ্বীজেনের ছেলে পুনরায় থানায় জানালে থানার থেকে পুলিশ এসে মাটি কাটা বন্ধ করে এবং উভয় পক্ষকে ১৫ আগষ্ট পর্যন্ত নিরব থাকার জন্য অনুরোধ করে।
৩ আগষ্ট শনিবার সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টুঙ্গিপাড়া-বাশবাড়িয়া সড়কের পাশে লেবুতলা মধ্যপাড়া গাইন বাড়ি। ঐখানে গাইন বাড়ির প্রায় ৪০টি পরিবারের বসবাস। দ্বীজেন গাইনের ঘর দক্ষিন পাশে। ঘরের দক্ষিন পাশে পূর্ব-পশ্চিম দিকে ৫০ বছরের পুর্বের দ্বীজেনের বাবার হাতে লাগানে সারি বদ্ধ নারিকেল গাছ। তার পাশ দিয়ে মলিনার শশুরের জায়গা। কিন্তু দ্বীজেনের ঘরের চার পাশ থেকে মাটি খনন করে গর্ত করে রেখেছে ও রান্ন ঘর, টিউবওয়েল ভেঙ্গে অন্যত্র ফেলে দিয়েছে।
দ্বীজেন গাইন বলেন, এই জায়গায় আমরা দেড়শ বছর যাবত বসবাস করে আসছি। পাশের বাড়ির কিশোর বিশ্বাসের স্ত্রী মলিনা কয়েক মাস আগে এসে বলে তোমাদের ঘর এখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যাও , এখানে আমাদের জায়গা । আমরা বলি এখানে আমার পাঁচ পুরুষ বসবাস করে আসছে । তোমার স্বামী কখনো বলেনি তুমি এগুলো কি বলছো । কিছু বলতে গেলে স্থানীয় মুসলমান ও পুলিশের ভয় দেখায়। সে আমাদের বিরুদ্ধে আদালতে মামলাও করে তখন আদালত মামলা খারিজ করে দিলে থানায় নালিস করে এবং পরের দিন এসে মাটি কাটা শুরু করে। আমরা বাধা দিলে বলে আমি ওসির নির্দেশে এগুলো করছি । আমাকে কাজ করতে বলছে ওসি।
এবিষয়ে মলিনা বিশ্বাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার স্বামী , ছেলে-মেয়ে, শশুর সবাই ভারতে থাকে আমি আমার জামাইকে নিয়ে এখানে থাকি। আমার শশুর তার জায়গা আমাকে লিখে দিয়ে গেছে। ওই জায়গায় দ্বীজেন গাইনের ঘর তাই আমি টুঙ্গিপাড়া থানার ওসিকে (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ) বলেছি সে আমাকে বলেছে তোমার জায়গায় তুমি কাজ করো যদি কেউ বাধা দেয় তাহলে তার হাত-পা ভেঙ্গে দেব। তার কথায় কাজ করছি এবং আমি ওখানে পুকুর খনন করবো। ওদের টিউবয়েল ,রান্না ঘর ভেঙ্গেছি এবং উঠান থেকে মাটি কেটেছি ,পরে পুলিশ এসে বলে গেছে ১৫ আগষ্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে। এরপর আবার মাটি কাটবো।
মলিনা বিশ্বাসের ভাসুরের ছেলে সুধাংশু বিশ্বাস বলেন, দ্বীজেন গাইন ও তার ছেলেরা যেখানে থাকে ওখানে আমাদের জায়গা। ওরা একশ বছর যাবত ওই জায়গা দখল করে আছে।
এবিষয়ে টুঙ্গিপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক মো.মনিরুজ্জান বলেন, দ্বীজেন গাইনের ছেলে নিতীশ গাইন থানায় একটা অভিযোগ করেছে। তখন আমরা সেখানে গিয়ে মাটি খননের কাজ বন্ধ করে দিয়েছি যাতে কোন ধরনের কোন মারামারির ঘটনা না ঘটে।
এব্যাপারে টুঙ্গিপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একেএম এনামুল কবীরকে তার ব্যবহারিত মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলে ও তিনি রিসিভ করেননি। ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) জাফর মিয়া বলেন, স্যার ঢাকা আছে আর আমি এবিষয়ে কিছুই জানিনা স্যার হয়তো জানেন।
এসএস/এমআর