ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
দেশে নূন্যতম সুরক্ষা নেই মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির সদস্য ড. শাহদীন মালিক। তিনি বলেছেন, দেশে যে অবস্থা রয়েছে তাতে আমরা বিন্দু মাত্র আইনের সুরক্ষা পাচ্ছি না। এসব বিষয়ে কথা বললেও কোনও সুরাহা হচ্ছে না। তবে, বিদেশে এ নিয়ে কথা বলা শুরু হয়েছে।
শনিবার (৩ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবে মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটি আয়োজিত ‘নির্যাতন বিরোধী জাতিসংঘ সনদের বাস্তবায়ন পর্যালোচনা: আমাদের বক্তব্য’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আইনে একজনের সুরক্ষার কথা তো সোয়া‘শ বছর আগেও বলা হয়েছিল। কিন্তু এর বাস্তবায়ন তো হচ্ছে না। আইনে সংবিধানে সব কিছু হচ্ছে। কিন্তু দেশে এ ব্যাপারে প্রতিকার পাচ্ছি না। দেশের বাইরে এই প্রথম আইনমন্ত্রীকে জবাবদিহিতার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। এটাই এখন একটু ভরসা। সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় নির্যাতনবিরোধী জাতিসংঘ কমিটির অধিবেশনে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ‘অবাস্তব প্রতিবেদন’ জমা দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন ড. শাহদীন মালিক। সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় নির্যাতনবিরোধী জাতিসংঘ কমিটির অধিবেশনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের নেতৃত্বে বাংলাদেশে নির্যাতনবিরোধী সরকারি পদক্ষেপের চিত্র তুলে ধরে একটি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। সরকারি সেই প্রতিবেদনকে ‘অবাস্তব’ মন্তব্য করে এবং জেনেভায় আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের সমালোচনা করে ড. শাহদীন মালিক বলেন, একজন আইনজীবী হিসেবেও (আইনমন্ত্রী) এ ধরনের কথা বলা, আমার কাছে শুনেই খুব লজ্জা লেগেছে। ‘মানুষের নূন্যতম সুরক্ষা নেই’ মন্তব্য করে ড. শাহদীন মালিক বলেন, বিচারবর্হিভূত হত্যাকা-, এসবের বিচার না হওয়া।… নিষ্ঠুরতম নির্যাতন, ধরে নিয়ে গিয়ে যা ইচ্ছে তাই করবে, গুম করে ফেলবে, মারবে, মাসের পর মাস ধরে রাখবে। একেবারে নূন্যতম যেটা, নূন্যতম আমাদের কোনো সুরক্ষা নেই। তিনি বলেন, অনেক কথা হয়েছে, কথাগুলো কেন বলছি। জেনেভার ওখানে গিয়ে যে কথাবার্তা… আমাদের দেশের আইনে যে সুরক্ষার কথা আছে তার বিন্দুমাত্র আমরা এখানে পাচ্ছি না। এজন্য এই আলোচনাটি এখন বিদেশেও হচ্ছে। আইনে সব কিছুই লেখা আছে। দেশ আদর্শ অকার্যকর দেশ হওয়ার পথে যাচ্ছে মন্তব্য করে ড. শাহদীন মালিক বলেন, সব কিছু মিলিয়ে দেশের অবস্থা নিঃসন্দেহে ভয়াবহ। স্ট্যান্ডার্ড অকার্যবকর রাষ্ট্র হওয়ার, একদিনে হয় না তো, কয়েকটা স্টেপ লাগে এক, দুই, তিন, চার করে। এই আইনজীবী বলেন, দুনিয়ার এত দেশে যে গৃহযুদ্ধ হচ্ছে, কোনো সরকার নেই। একটু হিসেবে করলে দেখবেন ৫/১০/১৫/২০ বছর আগে ওই দেশের সরকারগুলো নির্যাতন দিয়ে শুরু করেছে। বিচারবহিভূত হত্যাকা- দিয়ে শুরু করেছে।
তিনি বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- এবং নির্যাতনের জবাবদিহিতা না থাকা অবিচ্ছেদ্যভাবে এটা হলো অকার্যকর রাষ্ট্রের পথে যাত্রা শুরুর সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ। মৌলিক অধিকার সুরক্ষা কমিটির এ সদস্য বলেন, উন্নয়ন একবারে বাজে কথা। এই যে লিবিয়া, সিরিয়া এদের পারক্যাপিটা ইনকাম আমাদের চেয়ে ১০, ২০, ৩০ গুণ বেশি। উন্নয়ন ওদের অনেক হয়েছে কিন্তু সবগুলোতো এখন ব্যর্থ রাষ্ট্র হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী জবাবদিহিতার উর্ধ্বে উঠে যায়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে জবাবদিহিতা চাইবার মতো যখন অবস্থা থাকে না। সবাইকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. শাহদীন মালিক বলেন, আমাদের সবাই সোচ্চার না হলে, এটা একটা অকার্যকর রাষ্ট্রের দিকে যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে সেটা আমরা রোধ করতে পারবো না। আন্তর্জাতিক মহলে গিয়ে কিছু চেষ্টা, কিন্তু নিজেদের মধ্যেও তো কিছু চেষ্টা করতে হবে। যারা চেষ্টা করছি তাদের চেষ্টাগুলো আরও জোরদার করতে হবে। অধিকার নিশ্চিত না হলে ১০০ বছরে কোনো রাষ্ট্রের উন্নতি হয়েছে আমাদের কাছে এ ধরনের উদাহরণ নেই।
তিনি আরও বলেন, অকার্যকর রাষ্ট্র কি এটা একটু মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকার দেশগুলোর চিত্র দেখলে বোঝা যাচ্ছে। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে আমরা সেই ভয়াবহতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। নারী অধিকার কর্মী শিরিন হকের সঞ্চালনায় আলোচনায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- আইনজীবী সারা হোসেন, জ্যোর্তিময় বড়ুয়া, মানবাধিকার কর্মী সাজ্জাদ হোসেন, নূর খান লিটন প্রমুখ।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, নির্যাতন বন্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেই, প্রতিকারেরও কোনও উপায় নেই। তাই,পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন বন্ধ হচ্ছে না। আইনে না থাকলেও বাস্তবে গুম হচ্ছে। আবার নির্যাতন বন্ধে আইন আছে অনেক কিন্তু বাস্তবায়ন শূন্য।
এফএন/এমআর