লালমনিরহাট সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ (জিএম) কাদের এমপি বলেছেন, ডেঙ্গু দমনে দেশে জরুরি অবস্থা জারির কোনও দরকার নেই। সরকার যথেষ্ট পদক্ষেপ নিয়েছে। আমরা ডেঙ্গু দমনে সরকারের পাশে থেকে সহযোগিতা করবো। ডেঙ্গু নিয়ে রাজনীতি করার কিছু নেই।
শনিবার (৩ জুলাই) দুপুরে লালমনিরহাট সদর উপজেলার রাজপুর ইউনিয়নের রাজপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বন্যা কবলিত ৫৩০ পরিবারের প্রত্যেককে ১৫ কেজি করে চাল বিতরণ করে জাতীয় পার্টি। এ ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম শুরুর আগে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু দমনে যাদের গাফিলতি আছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা, জনসচেতনতা ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম ব্যবস্থা জোরালো করতে হবে। বন্যা দুর্গত এলাকাগুলোতে এখনও পর্যাপ্ত ত্রাণ পৌঁছায়নি বলে অভিযোগ করেন সাবেক এ বাণিজ্যমন্ত্রী। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের সঠিক তালিকা করে ত্রাণ বিতরণ করার আহ্বান জানান তিনি।
জি এম কাদের বলেন, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদের মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। এরপরও আমরা সাধ্যমতো কিছু ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে এসেছি। আপনারা দোয়া করবেন আগামীতে আমরা যেন আপনাদের যেকোনও দুর্যোগে পাশে দাঁড়াতে পারি। এর আগে গতকাল শনিবার সকালে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী কলেজ মাঠে বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন কাদের।
ত্রাণ বিতরণকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে কাদের বলেন, আমি দেখি ঢাকার মানুষ আতঙ্কিত। মশা দেখলেই ভয় পাচ্ছে। কারণ জ¦র হলে ডেঙ্গু হচ্ছে। ডেঙ্গু হলে মানুষ মারা যাচ্ছে। এই আতঙ্কিত মানুষকে রক্ষা করা সরকারের দায়িত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা অসহায় হয়ে থাকবো আর প্রতিদিন ডেঙ্গু বাড়বে কিছুই করতে পারবো না, এটা হতে পারে না। এই মহামারী অবস্থা ঠেকাতে সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর তার ছোট ভাই জিএম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে এটি কুড়িগ্রামে প্রথম সফর। জি এম কাদের বলেন, প্রতিবছরই কুড়িগ্রাম ও রংপুরসহ উত্তারাঞ্চলের লাখ লাখ মানুষ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রতি বছর বন্যায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাদের মাঝে ত্রাণ বিতরণের জন্য স্থায়ী তালিকা করতে হবে। বন্যার সময় তাদের কার্ড অনুযায়ী ত্রাণ পৌঁছে দিতে হবে।
জি এম কাদের বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত অনেক মানুষই কষ্টের মধ্যেও ত্রাণের জন্য লাইনে দাঁড়াতে চায় না। তাই তালিকা অনুযায়ী ত্রাণ দিলে সবার মাঝে সুষ্ঠুভাবে ত্রাণ বিতরণের স্থায়ী বন্দোবস্ত হবে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলেন, প্রধান বিরোধী দল হিসেবে আমরা সাধ্যমতো বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছি। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সব সময় বন্যার্তদের পাশে ছিলেন। আমরাও তাঁর দেখানো পথে দুর্গত মানুষদের সেবায় নিয়োজিত থাকব। আমাদের প্রিয় নেতা পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শোককে শক্তিতে পরিণত করে গণমানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করব। ত্রাণ বিতরণে কোনো অনিয়ম হলে আমরা সংসদে তা তুলে ধরব।
জাতীয় পার্টির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, জাতীয় পার্টির মধ্যে প্রতিযোগিতা আছে, তবে কোন দ্বন্দ্ব নেই। পরে জিএম কাদের পাঁচশ বন্যার্ত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেন। সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে জি এম কাদের বলেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে ডেঙ্গু আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মানুষের মধ্যে ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে। ডেঙ্গু জ¦রে মানুষ মারা যাচ্ছে, সরকার মানুষের ডেঙ্গুভীতি দূর করতে পারেনি। এ সময় জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও সংসদে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, আমাদের কোনো অ্যালায়েন্স নেই। আগামি জাতীয় নির্বাচনে জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করবে। রংপুরের ২২টি আসনেই জয়ী হতে পার্টিকে আরো শক্তিশালী করতে নেতাকর্মীদের প্রতি আহবান জানান তিনি। পাশাপাশি বন্যা নিয়ন্ত্রণে উত্তারাঞ্চলের সব নদ-নদীতে ড্রেজিং করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানান মসিউর রহমান রাঙ্গা।
জাতীয় পার্টির মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙ্গা এমপি, ভাইস চেয়ারম্যান আহসান আদেলুর রহমান আদেল এমপি, জেলা জাতীয় পার্টির আহ্বায়ক সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, কুড়িগ্রাম-২ আসনের জাপা সাংসদ পনির উদ্দিন আহমেদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত মেজর (অব.) আসাফু উদ দৌলা ত্রাণ বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এফএন/এমআর