ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে রাজধানীতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের নেতাকর্মীরা।
শুক্রবার (২ আগস্ট) সকাল সাড়ে ১০টায় মিছিলটি নয়াপল্টনে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে আবারও বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কাছে এসে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিলে নেতৃত্ব দেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। মিছিলে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস ও সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদসহ সংগঠনের বিপুল নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।
রিজভী বলেন, এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুজ¦রে আক্রান্ত হয়ে যখন মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে, ডেঙ্গুর ব্যাপক বিস্তারে দেশবাসী যখন ভয়ে শঙ্কিত, তখন এ ভয়ঙ্কর মহামারী মোকাবিলায় জনবিচ্ছিন্ন সরকারের মাথাব্যথা নেই। তিনি আরো বলেন, দেশব্যাপী খুন, নারী-শিশু ধর্ষণ এবং ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রকোপ বৃদ্ধি সবকিছুকেই সরকারের মন্ত্রী-নেতারা গুজব বলছেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়কে গুজব ছড়ানোর কারখানাও বলা হচ্ছে। আসলে আমরা এমন এক নিপীড়ক সরকারের অধীনে বসবাস করছি যাদের মানবিকতা নেই, জনগণের প্রতি নূন্যতম ভালোবাসা ও দায়িত্ববোধ নেই, আছে শুধু চোখ রাঙানি ও অবৈধ ক্ষমতার দাপট। প্রকৃত পক্ষে জনগণের ভোটে নয় বরং নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে কব্জায় নিয়ে ৩০ ডিসেম্বরের আগের রাতে ভোট চুরির মাধ্যমে জোর করে যারা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে তাদের কাছে জনস্বার্থের কি বা মূল্য আছে।
বিএনপির এ নেতা আরো বলেন, নিজেদের অপশাসন বেপরোয়া গতিতে চলমান রাখতে নিজেদের অপকর্ম বিএনপিসহ বিরোধী দলের ওপর চাপিয়ে দিয়ে মনে করছে কেউ বুঝি কিছু টের পাচ্ছে না। কিন্তু সব অপকর্মের জবাব দিতে জনগণ ভেতরে ভেতরে প্রস্তুতি নিচ্ছে, সে খবর সরকার জানে না। আওয়ামী সরকারের জুলুম থেকে রক্ষা পেতে জনগণ রাজপথে ধেয়ে আসছে। রিজভী দাবি করেন, ডেঙ্গু সমস্যা সমাধানে সরকার চরমভাবে শুধু ব্যর্থই নয়, এ সরকারের আমলে বছর বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে মশাবাহিত রোগ ও রোগীর সংখ্যা। ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এবারে সব বছরের চেয়ে অত্যধিক বেশি বলেও জানান রিজভী।
অর্থ ‘হাতিয়ে নিতেই’ সরকারের লোকজন মশা নিধনে ‘অকার্যকর’ ওষুধ আমদানি করেছে বলে অভিযোগ করেন রিজভী। ক্ষমতাসীনদের উদ্দেশে রিভজী বলেন, এদেশে প্রতি বছরই ডেঙ্গু হচ্ছে। আপনারা (সরকার) কেন আগে থেকে প্রতিরোধে করেননি? যে ওষুধে মশা মরবে না, কোটি কোটি টাকায় সেই ওষুধ আপনারা আমদানি করেছেন। এসব টাকা কার পকেটে গেছে? এই বিএনপি নেতা এরপর নিজেই উত্তর দেন- এটা নিশ্চয় আপনাদের, ক্ষমতাসীনদের পকেটে গেছে। কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিতে ওই অকার্য্কর ওষুধ আমদানি করা হয়েছে। যে ওষুধে একটা মশাও মরে নাই। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে সাড়ে ১৯ হাজার মানুষ, যাদের মধ্যে ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে সংবাদপত্রে আসা খবরে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা এ বছর অর্ধশত ছাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে এডিস মশার প্রজননস্থানগুলো ধ্বংসে সফলতা না এলে এ রোগের প্রকোপ আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ঢাকায় এবার এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গু জ¦রে প্রকোপ বাড়তে শুরু করে গত জুন মাস থেকে। জুলাইয়ের শেষে এসে তা ছড়িয়ে পড়ে দেশের সব জেলায়। এই পরিস্থিতিতে সিটি করপোরেশনের মশা নিধন কার্যক্রমে শিথিলতার অভিযোগ ওঠে। মশা মারতে ব্যবহৃত ওষুধ ‘কার্যকর নয়’ বলে আইসিডিডিআর,বির এক গবেষণায় তথ্য এলে সমালোচনা আরও জোরালো হয়ে ওঠে।
ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে রিজভী বলেন, আজকে দেশ কোথায়? আজকে মানুষ মরছে হাসপাতালে, আজকে মানুষ মরছে বাড়িতে বাড়িতে…। আর ঢাকার দুই মেয়র তাচ্ছিল্য করে, উপহাস করে। দুই মেয়র, যারা ভোটে নির্বাচিত হয় নাই, তারাই কা-জ্ঞানহীন বাগাড়ম্বর করছেন, তাচ্ছিল্য-উপহাস করছেন। আপনারা জানেন, প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে আর স্বাস্থ্যমন্ত্রী তার পরিবার নিয়ে মালয়েশিয়ায় গেলেন। এই হচ্ছে সরকারের অবস্থা। ডেঙ্গু প্রতিরোধে গণসচেতনতা তৈরি এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল এই বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে। বিএনপির জ্যৈষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব তাঁর বক্তৃতায় বলেন, বর্তমান হিংসাশ্রয়ী সরকারের রোষানলের শিকার বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
সরকারের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে রিজভী বলেন, শেখ হাসিনার কাছে প্রতিহিংসার রাজনীতিই মূখ্য। তাই তাঁর ব্যক্তিগত আক্রোশের শিকার বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়া না হলে সরকারের পরিণতি শুভ হবে না। মানুষের ন্যায় বিচারের প্রত্যাশা উচ্চতর আদালতের কাছে থাকে। কারণ নিম্ন আদালত সরকারের হাতের মুঠোয়। গত বুধবার দেশবাসী বিশ্বাস ও আস্থা রেখেছিল উচ্চতর আদালত বেগম জিয়াকে জামিন দেবেন। কিন্তু দেশনেত্রী জামিন না পাওয়ায় দেশের মানুষ হতাশ। এই অবিচারের পরিণতি নিয়ে আমরা শঙ্কিত।
এফএন/এমআর