ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
লাইসেন্স ছাড়াই দেশে কার্যক্রম চালাচ্ছে শত শত কুরিয়ার সার্ভিস। অনুমোদনহীন কুরিয়ার সার্ভিসগুলো অবৈধভাবে সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠানের ডাক ও দ্রব্যাদি আদান-প্রদানের মাধ্যমে টাকা হস্তান্তর ও স্থানান্তর করছে। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা প্রেরণ করার ক্ষেত্রে প্রেরণকারী ও গ্রহণকারীর কোনো তথ্য সংরক্ষণ করা হয় না। ফলে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে জনগণ উপকৃত হলেও বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকা- বিশেষ করে ঘুষ আদান-প্রদান, চাঁদাবাজি, প্রতারণা, মাদক ব্যবসা ও মানি লন্ডারিং সংশ্লিষ্ট অর্থের লেনদেনসহ নানা ধরনের অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। পাশাপাশি অর্থ লেনদেনের ঝুঁকিও সৃষ্টি হচ্ছে। সরকার ওসব অবৈধ কুরিয়ার সার্ভিস বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে বর্তমান ১১শ’ কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানি রয়েছে। তার মধ্যে লাইসেন্স রয়েছে ১২৮টি প্রতিষ্ঠানের। লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ২৬টি পরিচালনা হচ্ছে পণ্য আদান-প্রদানে এবং ৮টি আন্তর্জাতিক কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠান আর্থিক লেনদেন করলে তা অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবে। কিন্তু কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন না নিয়েই আর্থিক লেনদেনজনিত ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। তা বন্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার।
সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে লাইসেন্স ছাড়া পরিচালিত হচ্ছে ৯৭২টি কুরিয়ার সার্ভিস। ওসব কুরিয়ার সার্ভিস বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। একই সঙ্গে আর্থিক লেনদেন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানিগুলোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। অনুমোদনহীন প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবৈধ হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি অনুষ্ঠিত মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল ও কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে ঘুষ আদান-প্রদান নিয়ন্ত্রণ ও মানি লন্ডারিংয়ের ঝুঁকি নিরসন সংক্রান্ত বৈঠকে এসব নির্দেশ দেয়া হয়। ওই বৈঠকে ওসব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অবৈধ আর্থিক লেনদেন বন্ধ করতে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবকে মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেয়া হয়।
সূত্র আরো জানায়, কেউ আইন বা আইনের বিধিবিধানের ঊর্ধ্বে নয়। সেবা সংক্রান্ত সব কর্মকা-ই আইন পরিপালন করে পরিচালনা করতে হবে। যদি কোনো ক্ষেত্রে আইন বা বিধিবিধানের সংশোধন প্রয়োজন হয়, তবে তা বিদ্যমান প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করা হবে। সরকার মেইলিং অপারেট ও কুরিয়ার সার্ভিস বিধিমালা ২০১১ জারি করেছে। ওই বিধিমালা অনুসরণ করে যথাযথ লাইসেন্স নিয়ে কুরিয়ার সার্ভিস কোম্পানিগুলোকে ব্যবসা পরিচালনা করতে হবে। একই সাথে কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলোকে সঠিকভাবে ভ্যাট ও ট্যাক্স প্রদান করতে হবে। পাশাপাশি লাইসেন্স কর্তৃপক্ষ কর্তৃক অনুমোদনপ্রাপ্ত কুরিয়ার সার্ভিসের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে এবং কুরিয়ার সার্ভিস ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে কুরিয়ার সার্ভিস বিধিমালা-২০১১ অনুসরণ করতে হবে।
এদিকে অবৈধ কুরিয়ার সার্ভিসের কার্যক্রম প্রসঙ্গে মনিটরিংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব (ব্যাংক) ফজলুল হক জানান, আইনসিদ্ধভাবে কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলোকে লাইসেন্স নিতে হবে। কারণ ইতিমধ্যে সন্ত্রাসীরা এ চ্যানেল ব্যবহার করে আর্থিক লেনদেন করছে। যে কোনো আর্থিক লেনদেন ব্যবসা বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন ছাড়া করা যায় না। কুরিয়ার সার্ভিসগুলো আর্থিক লেনদেন করছে। কাজেই তাদেরও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদন নিতে হবে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম জানান, কুরিয়ার সার্ভিস প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে তাদের গ্রাহকদের এনআইডির তথ্য যাচাই-বাছাই করতে পারে সে বিষয়ে বিটিআরসিকে উদ্যোগ নিতে হবে। এদের কার্যক্রম পরিচালনায় যাতে মানি লন্ডারিং বা কোনো অবৈধ লেনদেন না হয়, সে বিষয়ে ডাক বিভাগ বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
এফএন/এমআর