প্রতি সেকেন্ডের ডেঙ্গু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

প্রথম পাতা » জাতীয় » প্রতি সেকেন্ডের ডেঙ্গু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
বৃহস্পতিবার ● ১ আগস্ট ২০১৯


প্রতি সেকেন্ডের ডেঙ্গু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥

 স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, আমরা প্রতি সেকেন্ডের ডেঙ্গু পরিস্থিতি মনিটরিং (পর্যবেক্ষণ) করছি। আমরা মশার উৎপত্তিস্থল ধ্বংস করছি, মশা মারার জন্য নতুন ওষুধ আনছি। প্রধানমন্ত্রী লন্ডনে চিকিৎসাধীন থেকেও প্রতিদিন খোঁজ নিচ্ছেন ও নির্দেশনা দিচ্ছেন। আমাদের উদ্যোগের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সমন্বয়ে সব কাজ চলছে। আমরা বিশ্বাস করি পরিস্থিতি অল্প দিনের মধ্যে ম্যানেজ হয়ে যাবে। আপনাদের কাছে সগযোগিতা চাই।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সকালে ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (মিটফোর্ড) ডেঙ্গু বিষয়ক এক সেমিনারে সরকারের এসব প্রস্তুতির কথা তুলে ধরেন তিনি। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সব হাসপাতাল থেকে আনা তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, ৩১ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৭ হাজার ১৬৩ জন রোগী। চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন ১২ হাজার ২৬৬ জন। বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন চার হাজার ৯০৩ জন। ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ১৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় (৩১ জুলাই ভোর ৬টা থেকে ১ আগস্ট ভোর ৬টা পর্যন্ত) ভর্তি হয়েছেন এক হাজার ৪৭৭ জন। নেত্রকোনা ছাড়া ৬৩ জেলায় ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাসপাতালগুলোতে নতুন নতুন ওয়ার্ড খুলছি। যেসব হাসপাতালে রোগী ভর্তি করা হতো না সেখানে ভর্তির ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। প্রত্যেক জেলার সিভিল সার্জনকে ডেঙ্গু চিকিৎসার গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে। আমাদের ২৯ জন বিশেষজ্ঞ রয়েছেন। তারা ঘুরে ঘুরে প্রত্যেক জেলায় যাচ্ছেন। ডেঙ্গু পরীক্ষায় ৬৫ হাজার কিট বিতরণ করা হয়েছে। আরও পাঁচ লাখ কিট আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতি সেকেন্ডের ডেঙ্গু পরিস্থিতির মনিটরিং করা হচ্ছে। আপনাদের কাছে সহযোগিতা চাই।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু রোগী বেড়ে গেলে যাতে সামাল দেওয়া যায়, সেজন্য ঢাকায় তিনটি সরকারি হাসপাতালকে প্রস্তুত করা হচ্ছে। প্যাথলজি পরীক্ষার কিট ও রিএজেন্ট আমদানি করা হচ্ছে। আর কোরবানির ঈদে ঢাকার মানুষ গ্রামে গেলে ডেঙ্গু আরও ছড়িয়ে পড়ার যে শঙ্কা রয়েছে, তা মোকাবিলার পরিকল্পনাও আগে থেকে করার ওপর জোর দিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। সারা দেশে ‘সুন্দরভাবে সব ম্যানেজ’ করা হচ্ছে দাবি করে জাহিদ মালেক বলেন, সকলে মিলে কাজ করলে ক্রাইসিস মোকাবেলা করা যায়। দেশে ডেঙ্গুর এই প্রকোপের মধ্যে ছুটি নিয়ে স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য মালয়েশিয়ায় গিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এই পরিস্থিতিতে সফর সংক্ষিপ্ত করে বিগত বুধবার রাতেই তিনি দেশে ফেরেন;
বৃহস্পতিবার সকালে মিটফোর্ড হাসপাতালে যান ডেঙ্গু কর্নার উদ্বোধন করতে। সেখানে তিনি কথা বলতে রাজ না হলে সাংবাদিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আয়োজিত ডেঙ্গু বিষয়ক সেমিনারে অংশ নেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, এখন মোটামুটি দেশের প্রতিটি জেলাতেই রোগী পাওয়া যাচ্ছে। ঈদের সময় ছড়িয়ে যাবার সম্ভাবনাটা আরেকটু বেশি। এজন্য আমাদের আগে থেকেই প্ল্যান প্রোগ্রাম নিতে হবে। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ছুটি বাতিল… যেহেতু এটা দেশের একটা সমস্যা। কেউ চিকিৎসা পায়নি বা চিকিৎসা না পেয়ে ফিরে গেছে; এমন কেউ বলতে পারবে না। ঢাকায় এডিস মশাবাহিত রোগ ডেঙ্গুজ¦রে প্রকোপ বাড়তে শুরু করে গত জুন মাস থেকে। জুলাইয়ের শেষে এসে তা ছড়িয়ে পড়ছে দেশের প্রায় সব জেলায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর এ পর্যন্ত সারা দেশে ১৭ হাজার ১৮৩ মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে গেছেন। এর মধ্যে কেবল জুলাই মাসেই মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১৫ হাজার রোগী। এ পর্যন্ত মোট ১৪ জনের মৃত্যুর খবর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নথিতে এসেছে, যদিও সংবাদপত্রে আসা খবরে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা ইতোমধ্যে অর্ধশত ছাড়িয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ডেঙ্গুর জীবাণুর বাহক এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসের ওপর জোর দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক সেব্রিনা ফ্লোরা গত বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যত রকম ওষুধই ব্যবহার করি না কেন যদি সোর্স রিডাকশন না হয় এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব। যদি সোর্স রিডাকশনে আমরা সবাই মিলে কাজ না করি তাহলে ট্রেন্ড থামানো যাবে না। সেদিক থেকে প্রত্যেক নাগরিককে সচেতন করার দায়িত্ব আমাদের সবার। সেটা না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়বে। পরে আস্তে আস্তে কমে আসবে। বাংলাদেশে ডেঙ্গুর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে সেপ্টেম্বর মাসে। সেজন্য প্রস্তুতি নেওয়ার কথা জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনা বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট এবং মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখনো সেভাবে রোগী যায় না। সেজন্য বেডগুলো অধিকাংশই খালি থাকে। আমরা নির্দেশনা দিয়েছি ওই হাসপাতালগুলো রেডি করার জন্য। বার্ন ইন্সটিটিউটে এক হাজার বেড রেডি হচ্ছে। বর্তমানে আমাদের যে হাসপাতালগুলোতে রোগী নিচ্ছেৃ সেখানে যদি জায়গা না হয়, তাহলে আমরা এই তিনটা হাসপাতালেৃ যেখানে কয়েক রোগী রাখার ব্যবস্থা আছে, সেখানে আমরা ডেঙ্গু রোগী নিয়ে নেব।”
চিকিৎসক ও নার্সদের প্রশংসা করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা সত্যিই গর্বিত, আমাদের ডাক্তাররা, আমাদের নার্সরা, আমাদের যারা চিকিৎসা দেয়, সকলেই যে কঠিন পরিশ্রম করছেন, তার জন্য আমার পক্ষ থেকে এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে আপনাদের সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আপনারা দিনরাত রাজ করছেন এবং ঝুকিপূর্ণ কাজ করছেন। এর মধ্যে দুই একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আপনারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। ডেঙ্গু মোকাবেলায় সবাইকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে জাহিদ মালেক বলেন, আমরা যদি সকলে মিলে কাজ করি, আমরা আশা করি, অল্প দিনের মধ্যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি বদলে যাবে, আমরা নিয়ন্ত্রণে আনতে পারব।
ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলায় গণমাধ্যমের সহযোগিতা চেয়ে মন্ত্রী বলেন, সাংবাদিক ভাইদেরও সহযোগিতা দরকার। সাংবাদিক ভাইদের দেখতে হবে- এখানে চিকিৎসা হচ্ছে কিনা, দেখতে হবে রোগী ফেরত যাচ্ছে কি না, হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে পারছে কি না, বেড পাচ্ছে কি না। এবং কী কী পদক্ষেপ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিয়েছে রোগী সামাল দেওয়ার জন্য এবং সুন্দরভাবে সারা বাংলাদেশে ম্যানেজ করা হয়েছেৃ এই বিষয়গুলো আপনারা তুলে ধরবেন, এটি আমরা আপনাদের কাছে আশা করি।

এফএন/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৯:১১:৫৭ ● ৩২৮ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ