ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
ডেঙ্গুর ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে সরকার মশাবাহিত এই রোগের প্রাদুর্ভাবকেও গুজব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে বলে অভিযোগ এসেছে বিএনপির তরফ থেকে।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী রবিবার (২৮ জুলাই) নয়া পল্টনের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, বর্তমানে যেকোনো ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় গুজব। তারা ডেঙ্গু দমনে ব্যর্থ হয়ে এখন ছেলেধরা গুজবের মতো ডেঙ্গু জ¦রকেও গুজব বলছে। এ বছর ঢাকায় ব্যাপক হারে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলার হাসপাতালেও বেড়ে চলেছে এই রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। বিগত সপ্তাহের এশটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, ডেঙ্গু জ¦রে আক্রান্তের সংখ্যা এরইমধ্যে সাড়ে তিন লাখ ছাড়িয়ে গেছে। ডেঙ্গু নিয়ে মানুষের উৎকণ্ঠার মধ্যেই ২৫ জুলাই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন অভিযোগ করেন, ছেলে ধরা, সাড়ে তিন লাখ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত একই সূত্রে গাঁথা। সরকার দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞ, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই ষড়যন্ত্রকারীদেরা মোকাবেলা করবে। ডেঙ্গু রোগীদের পাশে থেকে কঠিন জেবাব দেওয়ার জন্য সরকার প্রতিজ্ঞ।
রিজভী বলেন, ডেঙ্গুতে মানুষ মরছে, মরছে চিকিৎসক, মরছে শিশুসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থীরা। এ পর্যন্ত একজন সিভিল সার্জনসহ কয়েকজন ডাক্তার মারা গেছেন ডেঙ্গুতে। আর সরকারি দলের নেতাসহ মেয়ররা জনগণকে ধমক দিচ্ছেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার। বিএনপির কেন্দ্রীয় অফিস একটা গুজবের ফ্যাক্টরি- আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলা, জনগণের দুঃখ-দুর্দশা জাতির সামনে তুলে ধরা, গত ৬ মাসে শেয়ার বাজার থেকে ৪৩ হাজার কোটি টাকার মুলধন উধাও নিয়ে কথা বলা, সরকারের লুটপাট ও দুর্নীতি নিয়ে কথা বলা, শেয়ার বাজার লুট নিয়ে কথা বলা, ব্যাংক লুটের কথা, বিদ্যুত ও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ করা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলা, বিরোধী দলের ওপর সরকারি নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলা, গুম-খুন-বিচারবহির্ভূত হত্যার বিরুদ্ধে কথা বলা, নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলাই কী গুজব? সেতুমন্ত্রীর ভাষায় উন্নয়নের পালকি এগিয়ে যাওয়ার কথাই কী শুধু বলতে হবে? গণতন্ত্রকে কবরে পাঠিয়ে দেশে আইয়ুব খান মডেলের উন্নয়নেরই জয়গান কী গাইতে হবে? মনে হয় তাহলেই সেতুমন্ত্রীরা খুশি থাকবেন। এদিকে, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার আশঙ্কাজনক অবনতি ঘটেছে বলে দাবি করেছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তিনি বলেন, বিনা চিকিৎসায় তার ডায়াবেটিস সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণের বাইরে, এখন তার অবস্থা জীবন-মৃত্যুর লড়াইয়ের মধ্যে। ক্রমাগত বাড়ছে তার নিয়ন্ত্রণহীন ব্লাড সুগার। রিজভী বলেন, গত শনিবার গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তীব্র ব্যথা নিয়ে দাঁতের চিকিৎসা নিতে হয়েছে খালেদা জিয়াকে। সেখানে ২০ মিনিট বসিয়ে রেখে কী চিকিৎসা করা হয়েছে, আমরা জানি না। কিন্তু গণমাধ্যমে আমরা তার যে ছবি দেখেছি, সেটি ছিল- তীব্র ব্যথায় যন্ত্রণাক্লিষ্ট মানুষকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে নিয়ে যাওয়ার ছবি। খালেদা জিয়ার আর্থ্রাইটিস ও ফ্রোজেন শোল্ডার সমস্যার কারণে স্বাস্থ্যের আরও গুরুতর অবনতি ঘটছে বলে মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, খালেজা জিয়া ঘাড় ও মাথা সোজা রাখতে পারছেন না। কয়েক বছর আগে তার অপারেশন করা চোখ এবং হাঁটুর ব্যথা ক্রমশ বাড়ছে। ‘খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য নিয়ে বিএনপি অপপ্রচার করছে’ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এই বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন, একজন গুরুতর অসুস্থ মানুষের শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে উপহাস করছেন, অবজ্ঞা আর মিথ্যাচার করছেন। অথচ কয়েক মাস আগেও সেতুমন্ত্রী জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে ছিলেন। রাষ্ট্রের বিপুল অর্থ ব্যয়ে সিঙ্গাপুর থেকে তার চিকিৎসার জন্য এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আনা হয়েছিল। তিনি ফলোআপ চিকিৎসার জন্য নিয়ম করে সিঙ্গাপুর যাচ্ছেন। আমরা কোনোদিন তার শারীরিক অবস্থা নিয়ে উপহাস তো করিনি। রিজভী বলেন, শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আমি অসুস্থ হয়ে পড়লে বিদেশে নিয়ে যাবেন না, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তুলবেন না, দেশেই আমার চিকিৎসা করাবেন।’ তারপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চক্ষু চিকিৎসার জন্য দুদফা লম্বা ছুটি নিয়ে লন্ডন গেলেন। এখন তিনি দ্বিতীয় দফায় লন্ডনে, সেটিও নাকি চিকিৎসার জন্য। মানুষ এত দ্রুত কী করে তার অবস্থান পাল্টাতে পারে! তিনি (কাদের) যা বলেন, করেন তার উল্টা। খালেদা জিয়াকে দ্রুত মুক্তি দিয়ে তার পছন্দ অনুযায়ী বিশেষায়িত কোনও হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণের সুযোগ দেওয়া হোক বলে আহ্বান জানান রিজভী। তিনি আরও বলেন, তাকে বাঁচতে দিন। দেড়বছর তো বিনা অপরাধে সাজা খাটালেন। এবার প্রতিহংসা-ঈর্ষা বন্ধ করুন। তাকে মুক্তি দিয়ে বন্যা-ডেঙ্গু মোকাবিলার চেষ্টা করুন। সংবাদ সম্মেলনে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য অধ্যাপক সিরাজউদ্দিন আহমেদ, সুকোমল বড়ুয়া, কেন্দ্রীয় নেতা মনির হোসেন, আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এফএন/এমআর