আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
যৌতুকের দাবীতে সাত মাসের অন্তঃস্বত্তা গৃহবধু ঝর্না আক্তারকে স্বামী কুদ্দুস মাদবর অমানুষিক নির্যাতন করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আহত গৃহবধুকে রবিবার সন্ধ্যায় স্বজনরা আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। ঘটনা ঘটেছে আমতলী উপজেলার গোজখালী গ্রামে।
জানাগেছে, আমতলী উপজেলার পূর্ব কুকুয়া গ্রামের হামেদ প্যাদার কন্যা ঝর্না আকতার। ছোট বয়সে ঝর্না বাবা হামিদ প্যাদা ও মা হাসিনুর বেগমকে হাড়িয়ে এতিম হয়। বাবা-মায়ের মৃত্যুর পরে চাচাতো ভাই খবির প্যাদা তার দেখভাল করেন। ২০১৫ সালে ঝর্নাকে পার্শ্ববর্তী গুলিশাখালী ইউনিয়নের গোজখালী গ্রামের মোঃ জব্বার মাদবরের ছেলে কুদ্দুস মাদবরের সাথে বিয়ে দেয়। বিয়ের সময় যৌতুক হিসেবে ২০ হাজার টাকা, স্বর্নালংকার ও প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র দেয়। বিয়ের কিছুদিন যেতে না যেতেই তার উপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। স্বশুর ও শ্বাশুড়ীর প্ররোচনায় স্বামী কুদ্দুস প্রায়ই তাকে নানা অযুহাতে বেধরক মারধর করে। গত চার বছরে শতাধিকবার মারধর করেছে বলে অভিযোগ করেন ঝর্না আক্তার। বর্তমানে ঝর্না সাত মাসের অন্তঃস্বত্তা। অন্তঃস্বত্তা হলেও স্বামী কুদ্দুস তাকে কোন চিকিৎসা করাচ্ছেন না। গত শনিবার রাতে স্বামী কুদ্দুস স্ত্রী ঝর্নার নিকট চিকিৎসা করানো বাবদ বাবার বাড়ী থেকে ২০ হাজার টাকা এনে দিতে বলে। এতিম ঝর্না এ টাকা এনে দিতে অস্বীকার করায় ওইদিন রাতে তাকে স্বামী প্রথম দফায় মারধর করে। রবিবার সকালে আবারো দ্বিতীয় দফায় বাঁশের কাঞ্চি দিয়ে মারধর করে সোনাখালী গ্রামের নানা আফেজ খানের বাড়ীতে টাকা আনতে পাঠিয়ে দেয়। মারধরে ঝর্নার মুখের নিচের ঠোট এবং ডান হাতের বাহু ও ডান পায়ের হাটুর নিচে রক্তাক্ত জখম হয়। স্বজনরা রবিবার সন্ধ্যায় তাকে আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেছে। খবর পেয়ে রবিবার রাতে পুলিশ আমতলী হাসপাতালে গিয়ে আহত ঝর্নার খোঁজ খবর নেন।
আহত ঝর্না কান্নাজনিত কন্ঠে বলেন, মোর দুঃখ দ্যাহার কেউ নাই। ছোডকালে মা-বাবা মইর্যা গ্যাছে। চাচাতো ভাই পাইল্্যা বিয়া দ্যাছে। এ্যাহোন শ্বাশুড়ী ও শ্বশুরের কুপরামর্শে স্বামী মারধর করে। বিয়ার চার বচ্ছরে শতাধিকবার মারছে। এটটু আলে গোনে কলে গ্যালাই মোরে মারে। মোর প্যাডে ৭ মাসের বাচ্চা মোরে কোন ডাক্তার দ্যাহায় না। মোরো এ্যাহোন চাচাতো ভাইডে গোনে টাহা আইন্না দেতে কয়। মুই কিভাবে টাহা আইন্ন্যা দিমু। টাহা আইন্ন্যা দেতে রাজি না অওয়ার মোরে মারছে। মুই এ্যাইয়্যার বিচার চাই।
আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার মিঠুন সরকার বলেন, সাত মাসের অন্তঃস্বত্তা আহত ঝর্নার মুখের নিচের ঠোট, ডান হাতের বাহু ও হাটুর নিচে রক্তাক্ত জখমের চিহৃ রয়েছে। তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
ঝর্নার চাচাতো ভাই খবির প্যাদা বলেন, বিয়ের পর থেকেই ভগ্নিপতি কুদ্দুস বিভিন্ন অযুহাতে আমার বোনকে মারধরে করছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।
এ বিষয়ে স্বামী কুদ্দুসের মুঠোফোনে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
আমতলী থানার ওসি (তদন্ত) মনোরঞ্জন মিস্ত্রি বলেন, খবর পেয়ে আমতলী হাসপাতালে পুলিশ পাঠিয়ে গৃহবধুর খোঁজ খবর নিয়েছি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমএইচকে/এমআর