সমস্যা অনিয়মে ভেঙ্গে পড়েছে কলাপাড়া হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা

প্রথম পাতা » লিড নিউজ » সমস্যা অনিয়মে ভেঙ্গে পড়েছে কলাপাড়া হাসপাতালের স্বাস্থ্যসেবা
শনিবার ● ১৩ জুলাই ২০১৯


সমস্যা অনিয়মে ভেঙ্গে পড়েছে কলাপাড়া হাসপাতালের স্বাস্থ্য সেবা

মেজবাহউদ্দিন মাননু॥

মধ্যবয়সী ইদ্রিস হাওলাদার সতদিন ছেলে সোহেল হাওলাদরকে নিয়ে কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। প্রতিপক্ষের মারধরে আহত হয়ে বাবা-ছেলে হাসপাতালের ১৪,১৫ নম্বর বেডে অবস্থান করছেন। সাতদিনে এরা দুই জনে প্রায় ৩০ হাজার টাকার ওষুধ বাইরে থেকে কিনেছেন। হাসপাতালের কোন ওষুধ জোটেনি।
শনিবার (১৩ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কথা হয় এ রোগীর সঙ্গে। জানালেন, আজ সকালে খাবার হিসেবে একটি সেদ্ধ ডিম, একটি পাঁচ টাকা দামের বনরুটি, এক চিমটি চিনি পেয়েছেন। শুক্রবার রাতে খেয়েছেন ভাতের সঙ্গে এক টুকরো চাষের পাঙ্গাশ ও দুই টুকরো আলু। বিছানার চাদর একবার পাল্টে দেয়া হয়েছে সাত দিনে। বালিশে কোন কভার নেই। তেলচটা হয়ে আছে, হাত আটকে যায়। বাথরুম, টয়লেট ব্যবহার উপযোগী নয়। ময়লা, শেওলা ধরে গেছে। দুর্গন্ধে বমি আসে। নার্সরা রেগুলার আসেন। খোঁজ-খবর রাখেন। চিকিৎসকরা সকালে এবং রাতে ভিজিট করেন। জরুরি বিভাগে চিকিৎসাকালে শ’ তিনেক টাকা ভিজিট দিয়েছেন বলেও জানালেন এই রোগী। ধুলাসারের মাসুম বিল্লাহ ১২ জুলাই ভর্তি হয়েছেন। তারও ভাষ্য ওষুধ বাইরে থেকে কিনতে হয়েছে। আট মাসের কন্যা শিশু রাফিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন মা জেসমিন ও বাবা সাঈদুর রহমান। চাকামইয়ার কামরাপাড়া গ্রামে বাড়ি। শয্যা জোটেনি। তাই বারান্দায়, ফ্লোরে শুইয়ে রেখেছেন শিশুকে। জানালেন এ দম্পতি, ডায়রিয়া হওয়ায় শুক্রবার রাতে হাসপাতালে এসেছেন। এ পর্যন্ত ১২ শ’ টাকার ওষুধ বাইরে থেকে কিনেছেন। হাসপাতাল থেকে এক পয়সার ওষুধ জোটেনি। সাইদুর জানালেন, ইনজেকশন করে নার্সরা ওষুধের খোশা নিয়ে যায়। এক বছর সাত মাস বয়সী শিশুর অভিভাবক হাবিবুর রহমান জানালেন, ৭০০ টাকার ওষুধ বাইরে থেকে কিনেছেন। একই ভাষ্য ৯০ ভাগ রোগীর। ওষুধ নেই। হাসপাতালের সব অপরিচ্ছন্ন। বাথরুম-টয়লেট ব্যবহার উপযোগী নয়। শয্যা সঙ্কট। দায়িত্বরত নার্স নওরীন জাহান জানালেন, ডায়রিয়ার রোগীদের জন্য কোন পুশ করার স্যালাইন নেই। শুধু মুখে খাবার স্যালাইন রয়েছে। এ সেবিকার তথ্যে শনিবার দুপুর পর্যন্ত মোট ৮৪ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। ৫০ শয্যার এ হাসপাতালটি এখন আর রোগীর ভার সইতে পারছে না। চিকিৎসক সঙ্কট প্রকট। ২৭ জন চিকিৎসকের পদ রয়েছে। রয়েছেন মাত্র সাত জন। তার মধ্যে কুয়াকাটায় ২০ শয্যার হাসপাতালে দুই জন। মাত্র পাঁচ জন চিকিৎসককে প্রতিদিন দেড়/দুই শ’জন আউটডোরের রোগী সামলে ইনডোরের চিকিৎসা সেবা দিতে হয়। উপজেলা স্বাস্থ্য প্রশাসক ডাঃ চিন্ময় হাওলাদার জানান, দ্রুত ডাক্তারসহ শুন্যপদে লোকবল নিয়োগ না দিলে চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা কষ্টকর। হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিয়ে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ মহিব্বুর রহমান এমপি গেল মাসের সভায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন। তিনি হাসপাতালে ওষুধ এবং রোগীদের খাবার তালিকা টানিয়ে দেয়ার নির্দেশনা দিলেও তা কার্যকর হয়নি। এছাড়া রোগীরা অভিযোগ করেন, চিকিৎসকরা তাদের নির্দিষ্ট ল্যাবে পরীক্ষা না করালে দেখতে চায়না। হাসপাতাল ডিউটিকালীনও চেম্বারে ভিজিট দিতে হয়। রোগীদের সঙ্গে তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীরা দুর্ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। খাবার নিয়ে বড় ধরনের ঘাপলা রয়েছে। অনিয়মের শেষ নেই। মান নিয়ে ক্ষুব্ধ রোগীরা। ফলে সরকারের ভাবমুর্তি চরমভাবে ক্ষুন্ন হচ্ছে। এছাড়া হাসপাতালের কোয়ার্টারগুলো কম বেতনের কর্মচারীদের নামে বরাদ্দ দেখিয়ে বেশি বেতনের কর্মচারীরা থাকায় সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব, এমন অভিযোগও রয়েছে। হাসপাতালে রোগীদের যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ রয়েছে তাও পায়না। মোট কথা সমস্যা আর অনিয়মের কারণে এখানকার তিন লক্ষাধিক মানুষের স্বাস্থ্যসেবা ভেস্তে যাচ্ছে।

এমইউএম/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৯:০৪:৩২ ● ৭০৫ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ