চরফ্যাশনে জেলে পল্লীতে নিহত স্বজনদের আহাজারি

প্রথম পাতা » ভোলা » চরফ্যাশনে জেলে পল্লীতে নিহত স্বজনদের আহাজারি
শুক্রবার ● ১২ জুলাই ২০১৯


চরফ্যাশনে জেলে পল্লীতে নিহত স্বজনদের আহাজারি

চরফ্যাশন (ভোলা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥

সাগরে বিগত শনিবার ভোরে ঝড়ে ঢেউয়ের তোপে চরফ্যাশনের ভাড়ানী ও সমারাজ ঘাটের ২টি ট্রলার ডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ২৯ জেলেদের মধ্যে ৮ জেলের মৃতদেহ এবং ২ জেলেকে মৃতপ্রায় অবস্থায় কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের  সিগাল পয়েন্ট থেকে উদ্ধার করা হলেও শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত একই পরিবারের দুই ভাইসহ কমপক্ষে ২১ জেলে নিখোঁজ রয়েছে।
এসব নিখোঁজ জেলেদের বাড়ি উপজেলার দুলারহাট থানার আহম্মদপুর, চরমাদ্রাজ ও জিন্নগড় ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে। ট্রলার ডুবির ৫দিন পরও নিখোঁজ স্বজনদের কোন খবর না পাওয়ায় জেলেদের জীবন নিয়ে অজানা আশংকায় জেলে পরিবারগুলোতে শোকের মাতম চলছে। ডুবে যাওয়া ট্রলারে নিখোঁজ জেলে ৭টি মরদেহসহ মনির মাঝি ও জুয়েলকে জীবিত উদ্ধার হওয়ায় ঘটনায় নিখোঁজে থাকা জেলে পরিবারগুলোর শোককে উস্কে দিয়েছে।
আহাম্মদপুর ইউনিয়নের ভাড়ানী  ঘাটের শাহজাহান মাঝির এবং সামরাজ ঘাটের মনির মাঝির ট্রলার ক’দিন আগে গভীর সাগরে মাছ ধরতে যায়। দু’টি ট্রলারে ২৯ জন জেলে ছিল। সাগরে উত্তাল ঢেউয়ের তোপে শনিবার ও রোববার রাতে টেংরার চর ও  শিবচর এলাকায়  ট্রলার দু’টি ডুবে যায়। ঢেউয়ের তোপে দিকবিদিক ভেসে যায় দু’টি ট্রলারের সব জেলে। দূর্ঘটনার পরপর আশপাশে থাকা জেলে ট্রলারগুলো নিমজ্জিত জেলেদের উদ্ধারের চেষ্টা করলেও ঝড়ের তান্ডব চলায় সেসব চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ¯্রােতের টানে ট্রলারসহ জেলেরা সাগরে ভেসে গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী জেলেরা জানিয়েছে। নিখোঁজ ২৯ জেলের মধ্যে বুধবার কক্সবাজার সমুদ্রে ৮টি মরদেহ ও জীবিত ২ জেলেকে উদ্ধার করা হলেও নিখোঁজ আছেন ভাড়ানী ঘাটের শাহাজাহান মাঝির ১৪ জেলেট্রলারসহ আরো ২১জেলে।
এদিকে চরফ্যাশন উপজেলার চরমাদ্রাজ ইউপির চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মল হক জমাদার বলেন, মাদ্রাজ সামরাজ ঘাটের ১৫জন নিখোঁজের মধ্যে ২জন জীবিত ও ৫জন মৃত কক্সবাজার থেকে ইলিশা ফেরিঘাট আসছে। লাশ পৌছতে শুক্রবার সন্ধ্যার পর হবে।
প্রত্যক্ষদর্শী জেলেরা  জানান, সামরাজ ঘাটের মনির  মাঝির এবং ভাড়ানী ঘাটের শাহজাহান মাঝির ট্রলার দুিট  সাগরে সিগন্যাল উঠেছে-এমনটা নিশ্চিত হয়ে নিকটবর্তী নিরাপদ আশ্রয়ে ফেরার সময় শনিবার ও রোবাবর রাতে ভয়ংকর ঢেউয়ের তোপে তাদের ট্রলার ডুবে যায়। শিবচর ও টেংরারচর  ঘটে এই দূর্ঘটনা। সেই ট্রলার ডুবে যাওয়ার পর ঢেউয়ের তান্ডবে জেলেরা দিকবিদিক হয়ে যায়। কেউ আর কাউকে খুঁজে পায়নি।মৃত ও জিবিতদের উদ্ধারের
খবর পেয়ে নিখোঁজ ২১ জেলের স্বজনরা তাদের বাড়িতে ভীর করেন। ভীর করেন পাড়া প্রতিবেশীরাও।
শুক্রবার দুপুরে জীবিত উদ্ধার হওয়া জেলেদের বাড়িতে দেখা হয় শোকাহত ষাটোর্ধ বৃদ্ধা জাহানার বেগমের সাথে। শোকাহত চলৎশক্তিহীন জাহানারা বেগম এসেছেন তাঁর নিখোঁজ স¦জনদের খোঁজ নিতে। কিন্ত নিখোঁজ সন্তানের কোন খবর না পেয়ে মাটিতেই বসে নির্বাক দৃষ্টিতে আকাশের দিকে চেয়ে থাকেন জাহানারা বেগম। এই বাড়িতে নিখোঁজ স্বামীদের  জীবনের অজানা আশংকায় শোকের মাতম করতে দেখা গেছে মমতাজ বেগম আমিরন ও সুরমাদের। নিখোঁজ জেলেদের মধ্যে ট্রলার মালিক শাহজাহান মাঝি, জামাল উদ্দিন, রুবেল, আব্দুল হাই, সুলতান মাঝি , রফিজল, মো. হোসেন, আবদুল হক, আফসার, নাছির, জসিম, সাহাজাহান,  জিহাদ, রবিউল আলম, আবদুল জলিল, কবির হোসেন, আবদুল হাই,। নিখোঁজ ২১ জেলের পরিবারের শোকের মাতম গ্রামের আকাশ-বাতাসকেও ভারী করে তুলেছে।
চরফ্যাশন থানার অফিসার ইনচার্জ শামসুল আরেফীণ বলেন, ২৯ জেলের মধ্যে ৭ জেলে উদ্ধার হয়েছে। তার মধ্যে দু‘ জেলে জীবিত রয়েছে। তাদেরকে চরফ্যাশন শুক্রবার পৌছবে বলে কক্সবাজার সদর থানা সূত্রে জানা গেছে।
চরফ্যাশন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমীন বলেন, নৌ-বাহিনী, কোষ্টগার্ড, পুলিশ ও ব্যক্তির উদ্যোগে ৩টি ট্রলার লাশ উদ্ধারের জন্যে টহলে রয়েছে। যেখানে সংবাদ পায় সেখানেই উপস্থিত হয়ে উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়াও এখন থেকে নদীতে জেলেদের মাছ ধরতে নামার সময় বয়া ও লাইফ জ্যাকেট নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কেউ তা না নিয়ে নদীতে গেলে জেল জরিমানা করা হবে বলে নির্বাহী কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।

এমএএইচ/এমআর

বাংলাদেশ সময়: ১৮:১৫:৩৯ ● ৫৫২ বার পঠিত




পাঠকের মন্তব্য

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

আর্কাইভ