কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥
কুয়াকাটার আলীপুর-চাপলী বাজার ১২ কিলোমিটার সড়কের কার্পেটিং উঠে অসংখ্য খানাখন্দ সৃষ্টি হওয়ায় চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে পর্যটকসহ স্কুল ও কলেজ পড়–য়া হাজার হাজার শিক্ষার্থী। ভারী বর্ষণের ফলে গর্তে পানি জমে যাওয়ায় চরমে ওঠেছে এ ভোগান্তি। যাত্রীসহ ধীর গতির গাড়িগুলো পড়ছে নানা বিড়ম্বনায়। গাড়ির চাকা পাঙ্কচার হয়ে পথের মাঝে বিপাকে পড়তে হয়েছে অনেক পর্যটককে। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করে বিভিন্ন ধরনের কয়েক শত গাড়ি। এদের মধ্যে দূরপাল্লার যাত্রীপরিবহনসহ চলছে হোন্ডা, ট্রাক, ট্রলি, লরি, অটোভ্যান, ভিভিআইপি গাড়ি। সড়কটির বেহাল দশায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে যাত্রী সাধারণ। অসহনীয় এ জনভোগান্তি নিরসনে দ্রুত সময়ের মধ্যে বিশেষ আর্থিক বরাদ্দের মাধ্যমে সড়কটির মেরামতের দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পর্যটকসহ এলাকাবাসী।
সড়কটির বিভিন্ন পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, উপরের অংশ ভেঙ্গে ইটের খোয়া বেড়িয়ে পড়েছে। সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য বড় বড় গর্তের। কোনো কোনো পয়েন্টে দুপাশের অংশ ভেঙ্গে গিয়ে সংকুচিত হয়ে গেছে সড়কটি। ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনায় কবলিত হচ্ছে এ সব গাড়ি। এ সড়ক দিয়েই পর্যটকরা দেখতে যায় এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম সীমাবৌদ্ধ মন্দির। তাছাড়া সূর্যোদয়ের বিরল দৃশ্য দেখতেও এ সড়ক ব্যবহার করে গঙ্গামতির সূর্যোদয় স্পটে ছুটে যাচ্ছে দেশ-বিদেশের ভ্রমণ পিপাসু হাজারো পর্যটক। গোড়াআমখোলা পাড়ায় এ সড়কের পাশেই অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবল স্টেশন। অন্যদিকে কলাপাড়া উপজেলা সদরের সাথে কিকল্প সড়ক হিসেবে সংযোগ সৃষ্টি করেছে এ সড়ক। প্রতিদিন বেশ কয়েকটি পরিবহন গাড়ি এ পথেই ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এছাড়া বালিয়াতলী, ধূলাসার, গঙ্গামতি, চরচাপলী, মিশ্রিপাড়া ও লক্ষ্মী বাজার এলাকায় উৎপাদিত শাক-সবজিসহ বিভিন্ন খাদ্য শস্য এ সড়ক পথে মহিপুর, আলীপুর ও কুয়াকাটায় বাজারজাত করা হয়। এ সড়ক ব্যবহার করেই আলীপুর-মহিপুরের মৎস আড়তে গঙ্গামতির জেলেবহর থেকে চলে আসে সামুদ্রিক মাছের বড় চালান। অথচ পর্যটক ও জনসাধারণের গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটির বেহাল দশা নিরসনে যেন কেউ নেই এমনটাই ক্ষোভ প্রকাশ করলেন এলাকাবাসী।
জানা গেছে, ২০০৪ সালের দিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর এ সড়কটি নির্মাণ করেছে। পরবর্তীতে কার্পেটিংয়ের কাজ হলেও বর্তমানে তা ভেঙ্গে এর ব্যবহার উপযোগীতা হারিয়েছে। সড়কটির নাজুক অবস্থা দেখে বগুরা থেকে বেড়াতে আসা পর্যটক আলমগীর খান বলেন, কুয়াকাটার আকর্ষণে ছুটে এসেছি। মিশ্রিপাড়া বৌদ্ধমন্দির দেখতে যাব। কিন্তু গাড়ি খানাখন্দে পড়ে টায়ার পাঙ্কচার। রাস্তার যে অবস্থা তা দেখে দ্বিতীয়বার কেউ এখানে আসবে বলে মনে হয় না।
সবজি ব্যবসায়ী নূর ইসলাম জানালেন তার তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা। তিনি বলেন, হেদিন ভ্যানে শাক-সবজি বোঝাই হইর্রা আলীপুর বাজারে যাইতেছি। পথের মদ্দে ভাঙ্গনে মোর ভ্যানডা কাইত অইয়া পইর্ড়া যায়। মুইও রাস্তার সাইডে পইর্ড়া ঠ্যাংগে ব্যথা পাইছি। কইয়েন না ভাই! গরীবের যতো মরণ। রাস্তাডায় গর্ত অইয়া ম্যালাদিন পইর্ড়া রইছে। অথচো এডা দ্যাহার মতো কি কেউ নাই?
কলেজ শিক্ষার্থী সুমনার রোজ ওই সড়ক দিয়ে আসা যাওয়া করতে হয়। কষ্টের কথা তুলে ধরে সে বললো, ওই সড়কটি এখন একটা মরণ ফাঁদ। গাড়ির প্রচন্ড ঝাঁকুনি অসহনীয়। একবার একটা গাড়ি গর্তে পড়ে ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। পরে ইঞ্জিন ঠিক না হওয়ায় অন্য গাড়িতে কলেজে যেতে হয়েছে। এ ভোগান্তি থেকে আমরা মুক্তি চাই।
এ সড়ক সংলগ্ন কুয়াকাটা খানাবাদ ডিগ্রি কলেজ অবস্থিত। ওই কলেজের অধ্যক্ষ সিএম সাইফুর রহমান যাতায়াতে ভোগান্তির কথা উল্লেখ করে বলেন, এ অঞ্চলের ছেলেমেয়েরাই কলেজে লেখাপড়া করতে আসে। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে অনেক কষ্ট হয়। অচিরেই সড়কটি মেরামতের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করছি।
এ প্রসংঙ্গে কলাপাড়া উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর’র প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান বলেন, সড়কটির গুরুত্ব বিবেচনা করে মেরামতের জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছিলো। ওই কাজের জন্য টেনডারও হয়েছিলো। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের অনুমোদন না পাওয়ায় সড়কটির মেরামতের কাজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান জানান, কুয়াকাটায় একটি প্রকল্পের কাজ চলমান আছে। ওই প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত সড়কটি মেরামত করা সম্ভব নয়।
এমজেএইচ/এমআর