আমতলী (বরগুণা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
এক বছর চার মাস বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকেও বেতন-ভাতা তুলছেন বরগুনার আমতলী উপজেলার দক্ষিণ কেওয়াবুনিয়া সরকারী প্রাথমকি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মোসাঃ মেহেরুন নেছা।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ নুরুল আলমের যোগসাজসে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে অনুপস্থিতির বিষয়টি গোপন রেখে মাসিক রির্টানে উপস্থিত দেখিয়ে এ বেতন ভাতা তুলে নিয়েছেন। বিদ্যালয় হাজিরা খাতায় চিকিৎসা ছুটি লেখা থাকলেও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে কোন ছুটির আবেদন নেই। প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগসাজসে বিদ্যালয়ে ভুয়া ছুটি দেখিয়ে ওই শিক্ষিকা এক বছর চার মাস ধরে অনুপস্থিত রয়েছেন।
জানাগেছে, উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ কেওয়াবুনিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মোসাঃ মেহেরুন নেছা ২০১০ সালে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। যোগদান করার পর থেকেই প্রধান শিক্ষক নুরুল আলমের সাথে আতাত করে বিদ্যালয়ে না এসে সহকারী শিক্ষিকা মেহেরুন নেছা প্রায়ই হাজিরা সিটে স্বাক্ষর করতেন এমন অভিযোগ ওই বিদ্যালয়ের অপর শিক্ষকদের। শিক্ষিকা মেহেরুন নেছার বিদ্যালয়ের হাজিরা সিট ঘেটে দেখাগেছে, গত বছর ৫ মার্চ থেকে ২৯ আগষ্ট পর্যন্ত তিনি ৬ মাসের চিকিৎসা ছুটি নেন। ছুটির মধ্যে প্রধান শিক্ষক নিজ হাতে হাজিরা খাতায় জাল স্বাক্ষর দিয়ে ওই শিক্ষিকাকে উপস্থিত দেখিয়েছেন এমন অভিযোগ ওই বিদ্যালয়ের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন সহকারী শিক্ষকের। ছয় মাসের ছুটি শেষ হতেই আবার শিক্ষিকা মেহেরুন নেছা ওই বছর ১ সেপ্টেম্বর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চার মাসের চিকিৎসা ছুটি নেন। ৩১ ডিসেম্বর তার ছুটির মেয়াদ শেষ হয়। এ বছর তিনি বিদ্যালয়ে যোগদান না করে ১ জানুয়ারী থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত পুনরায় চিকিৎসা ছুটি নেন। ২০১৮ সালের মার্চ মাস থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত তিনি এক বছর চার মাস চিকিৎসা ছুটি নিয়েছেন। এক বছর চার মাস চিকিৎসাকালীন ছুটির মধ্যে আবার প্রধান শিক্ষক নুরুল আলম ছয় দিন অনুপস্থিত লিখে রেখেছেন। বিদ্যালয় হাজিরা খাতায় চিকিৎসা ছুটি লেখা থাকলেও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে কোন ছুটির আবেদন নেই। প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগসাজসে বিদ্যালয়ে ভুয়া ছুটি দেখিয়ে ওই শিক্ষিকা এক বছর চার মাস ধরে অনুপস্থিত রয়েছেন। এ বছর ৩০ জুন মাসে তার ছুটি মেয়াদ শেষ হয়েছে কিন্তু ৭ জুলাই (রবিবার) পর্যন্ত কোন কারন ছাড়াই তিনি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন বলে জানান প্রধান শিক্ষক নুরুল আলম।
আমতলী উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানাগেছে, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা মোসাঃ মেহেরুন নেছা ২০১৮ সালের মার্চ থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট কোন চিকিৎসা ছুটির আবেদন করেননি। তিনি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসকে অবহিত না করে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। কিন্তু বিদ্যালয়ের মাসিক রিটার্ন ফরমে তার (সহকারী শিক্ষিকা) স্বাক্ষরসহ প্রধান শিক্ষক নুরুল আলম প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে জমা দিয়েছেন। ওই অনুসারে প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ওই শিক্ষিকার বেতন ভাতা ছাড় দিয়েছেন। এদিকে সহকারী শিক্ষিকা মোসাঃ মেহেরুন নেছা ভুয়া চিকিৎসা ছুটি দেখিয়ে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি আমতলী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ মজিবুর রহমান এ বছর জানুয়ারী মাসে অবগত হন। পরে তিনি ওই বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন। শিক্ষা অফিসার তদন্ত সাপেক্ষে প্রধান শিক্ষক মোঃ নুরুল আলম ও সহকারী শিক্ষিকা মোসাঃ মেহেরুন নেছাকে বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন কেন অনুপস্থিত তার জবাব চেয়ে শোকজ করেন। কিন্তু শিক্ষিকা মেহেরুন নেছা শোকজের কোন জবাব দেয়নি। এরপর থেকে শিক্ষা অফিসার মোঃ মজিবুর রহমান তার বেতন ভাতা বন্ধ করে দিয়েছেন। গত ছয় মাস ধরে তার বেতন ভাতা বন্ধ রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে,ওই শিক্ষিকার স্বামী ও তার নামে পটুয়াখালী ও বরিশালে দুইটি প্রাইভেট নাসিং হোম রয়েছে। ওই নাসিং হোমের একটি তিনি দেখভাল করেন। এ কারনে তিনি বিদ্যালয়ে ভুয়া চিকিৎসা ছুটি নিয়ে এক বছর চার মাস অনুপস্থিত রয়েছেন।
এ বিষয়ে সহকারী শিক্ষিকা মোসাঃ মেহেরুন নেছার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল আলম ওই শিক্ষিকার বিদ্যালয়ে আসার গাফলতির কথা স্বীকার করে বলেন, বিগত বছর মার্চ মাসে সে অসুস্থ্য হয়ে পরেন। এরপর তার স্বামী এসে নিয়ে গেছেন। পরে আমাকে জানিয়েছেন সে চিকিৎসা ছুটিতে আছেন। এরপর থেকে সে আর বিদ্যালয়ে আসেননি। সে বিদ্যালয়ে না আসায় তাকে দু’বার শোকজ করা হয়েছে। শোকজেরও কোন জবাব দেননি তিনি। পরে বিষয়টি প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে জানানোর পরে তিনি বিদ্যালয়ে পরিদর্শন করে তার বেতনভাতা বন্ধ করে দিয়েছেন। চিকিৎসা ছুটির মধ্যে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর ও অনুপস্থিত লেখার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক এর কোন সদুত্তর দিতে পারেননি।
সহকারী শিক্ষা অফিসার মোঃ মনিরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষিকা মেহেরুন নেছা চিকিৎসাজনিত কোন ছুটির আবেদন করেননি। ছুটি ছাড়াই ওই শিক্ষিকা বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন। এ কারনে বিগত ছয় মাস ধরে তার বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
আমতলী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ মজিবুর রহমান বলেন, কোন ছুটি ছাড়া বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির কারনে ওই শিক্ষিকাকে শোকজ করা হয়েছে। শোকজের জবাব পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বরগুনা জেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে সুপারিশ করা হবে।
বরগুনা জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ মিজানুর রহমান বলেন, আমি বিষয়টি জানিনা। জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এমএইচকে/এমআর