কলাপাড়া (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥
পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রে বাঙালী ও চীনা শ্রমিকরা এক যোগে কাধে কাধ মিলিয়ে পাওয়ার ব্লক এলাকায় ফের কাজ শুরু করেছে। ১৮ জুন অনভিপ্রেত ঘটনাকে কেন্দ্র করে ১৫ দিন ছুটির পরে ফের বাঙালী শ্রমিকরা বুধবার কাজে যোগ দেয়। বৃহস্পতিবার বাঙালী ও চীনা শ্রমিকদের যৌথভাবে পাওয়ার ব্লক এলাকায় কাজ করতে দেখা গেছে। নেই কোন ভেদাভেদ। বিরাজ করছে শ্রমিকদের কোলাহল। কর্মচঞ্চল পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র অভ্যন্তরে দুই দেশের শ্রমিকরা যেন নতুন করে সেতুবন্ধনে মিলেছে। একে অপরের হাতে হাত ধরে তারা পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের নির্মাণ কাজ করছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেছে দুই দেশের শ্রমিকরা মনের খুশিতে কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
বিসিপিসিএলএর নির্বাহী প্রকৌশলী জনাব রেজওয়ান ইকবাল খান বলেন, ‘বাংলাদেশি শ্রমিকদের জাতীয় পরিচয় পত্র সংগ্রহ করে তা নির্বাচন কমিশনে জমা দেয়া হচ্ছে যাতে কেউ ভুয়া পরিচয় পত্র দিয়ে এখানে কাজ করতে না পারে। এতগুলো শ্রমিকের যাচাই বাছাই করা যেহেতু একটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার তাই আমাদের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নির্বাচিত কিছু সংখ্যক শ্রমিকদের গতকাল কাজে যোগদান করানো হয়েছে। যাদের সংখ্যা ৩০৮জন। এসব শ্রমিক আগের মত সেফটি ড্রিল প্রশিক্ষণ শেষে চাইনিজদের সাথে একযোগে কাজ শুরু করেছে।’ এছাড়াও পাওয়ার প্লান্টের অভ্যন্তরে অবকাঠামোর উন্নয়ন কাজে আরও দেড় শতাধিক বাঙালী শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছে। অন্তত পাঁচ শ’ বাঙালী শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। অনাকাঙ্খিত ঘটনার রেশ কাটিয়ে পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র অভ্যন্তরে প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে আসায় আশাপাশের দোকানিরাও খুশি। তাদের বেচাকেনাও সচল হয়েছে। চীনা কোম্পানি নর্থ ইস্ট (নাম্বার-১) ইলেক্ট্রিক পাওয়ার কনস্ট্রাকশন কর্পোরেশন লিমিটেড এনইপিসি সুত্রে জানা গেছে, ইতোপুর্বে ৫০টি এজেন্সী শ্রমিক সরবরাহের কাজ করে আসলেও বর্তমানে ১২টি এজেন্সীকে লোক সরবরাহের অনুমতি দেয়া হয়েছে। আরও যাচাই-বাছাই করে বাকিদের এক এক করে অনুমতি দেয়া হবে। প্রকল্প পরিচালক(প্রধান প্রকৌশলী) জনাব শাহ্ আবদুল মওলা বলেন, “আমরা আশা করছি অন্যান্য শ্রমিকরাও খুব দ্রুত কাজে যোগদান করবে, তবে শ্রমিকদের পুলিশ ক্লিয়ারেন্স থাকা বাধ্যতামূলক, এ জন্য প্রশাসন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। ”
১৮ জুন বিকেলে তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রে পাওয়ার ব্লক এলাকায় কর্মরতকালে সেফটি বেল্ট খুলে বয়লার থেকে নিচে পড়ে নিহত হয় বাঙালী শ্রমিক সাবিন্দ্র দাস। ওই লাশ গুমের গুজবকে কেন্দ্র করে শ্রমিকরা অশান্ত হয়ে ওঠে। হামলে পড়ে চীনা শ্রমিকদের ওপর। ওই রাতে ফের পাওয়ার কেন্দ্র অভ্যন্তরে সন্ত্রাসী হামলা ভাংচুর লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় কলাপাড়া থানায় পৃথক দু’টি মামলা করেন এনইপিসির সেফটি ডিরেক্টও ওয়াং লিবিং। পুলিশ এ মামলায় তিন দফায় মোট ১৭ জনকে গ্রেফতার করে। এ মামলায় মোট ১২ শ’ অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। কলাপাড়া থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম জানান, পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র এলাকায় এখন নিñিদ্র নিরাপত্তা রয়েছে। শ্রমিকসহ কেন্দ্র অভ্যন্তরে আসা-যাওয়ায় চেক পোস্ট বসানো হয়েছে। কলাপাড়ার ইউএনও মো. মুনিবুর রহমান জানান, পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র এখন সম্পুর্ণ স্বাভাবিক রয়েছে। রয়েছে কর্মমুখর। কাজকর্ম স্বাভাবিক রয়েছে। তবে ৫০টি বৈধ-অবৈধ এজেন্সী ম্যানপাওয়ারের ব্যবসা করে আসছিল। যার মধ্যে মাত্র ১২টি এজেন্সীকে বর্তমানে শ্রমিক সরবরাহের অনুমতি দেয়ায় বঞ্চিতরা ক্ষুব্ধ হয়ে আছে। এরা বিষয়টি স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিতে পারছে না তারা। এনিয়ে নেতিবাচক আলোচনা চলছে ধানখালীসহ কলাপাড়ার সর্বত্র।
এমইউএম/এমআর