গোপালগঞ্জ সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বর্ষাকালে চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা আর চলাচল নৌকা ছাড়া যেন অনেকটাই অচল।এসব এলাকার মানুষের নিত্যপ্রয়োজনে কোটালীপাড়া উপজেলার কালিগঞ্জ বাজারে বালির মার্কেটে সপ্তাহে দুইদিন রবিবার ও বৃহস্পতিবার ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাট বসে।
রবিবার কালীগঞ্জে নৌকার হাটে ঘুরে দেখা যায় মেহগনি, কড়ই, আম, চাম্বল, রেইনট্রি গাছের কাঠ দিয়ে তৈরি ডিঙি নৌকা মেলে এই হাটে। আকার ও মানভেদে প্রতিটি নৌকা তিন হাজার থেকে আট হাজার টাকায় বিক্রি হয়। প্রত্যান্ত অঞ্চল ছাড়াও আশপাশের মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, বরিশাল থেকে ক্রেতারা এই হাটে নৌকা কিনতে আসেন।
উপজেলার রামশীল, রাধাগঞ্জ, কলাবাড়ী, সাদুল্যাপুর, কান্দি শুয়াগ্রাম ইউনিয়নে পানিবেষ্টিত এলাকায় যোগাযোগের মাধ্যম এখনো নৌকার । এ ছাড়া রয়েছে অসংখ্য খাল-বিল ও ডোবা-নালা। বর্ষার সময় এগুলো পানিতে থাকে টইটম্বুর। এসব উপজেলায় রয়েছে বিভিন্ন চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল। নদ-নদী থেকে যখন পানি উপচে পড়ে, তখন এসব চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলে পানি উঠে পড়ে। তখন চলাচলের প্রধান বাহন হয় এই নৌকা।
এ ছাড়া কৃষিকাজ, গোখাদ্য, খেত থেকে সবজি ও ফসল সংগ্রহ করে বিক্রি, মাছ শিকার ও হাটবাজারে নিয়ে যাওয়া এবং খাল-বিল থেকে শাপলা তোলাসহ নানান প্রয়োজনে নৌকা অপরিহার্য।
যুগ যুগ ধরে নৌকা এসব অঞ্চলের ঐতিহ্য বহন করে আসছে।
রবিবার বিকালে হাটে গিয়ে দেখা গেল, বিভিন্ন আকৃতি ও কাঠের তৈরি নৌকার পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। সারি সারি করে রাখা এসব নৌকার নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে যে কারোরই মনে ঢেউ জাগবে। ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০শ টি নৌকা দেখা গেল হাটে।
ক্রেতাদের পদচারণায় অনেক টা মুখরিত হয়ে উঠছে পুরো নৌকার হাট। ভোর থেকেই জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন যানবাহন করে ব্যবসায়ীরা নৌকা নিয়ে হাটে আসেন।
উপজেলার শুয়গ্রাম থেকে নৌকা ব্যবসায়ী সর্বানন্দ বাড়ৈ ও পরিমল বল্লভ বলেন আজ নৌকা হটে ১০০ টি নৌকা নিয়ে হাটে এসেছি বিক্রির জন্য। সন্ধা পর্যন্ত এই নৌকা গুলো আষা করি সব বিক্রি করে বাড়ী যাব।
হরিবর রায় নামে এক নৌকা ব্যবসায়ী বলেন আমি সকাল থেকে এই সময়ের মধ্যে ২০টি নৌকা বিক্রি করেছি।
নৌকা তৈরির ব্যাপারে মিস্ত্রী রঞ্জন মধু বলেন , আমি এই নৌকা গুলো নিজেই তৈরি করি । বাড়ীতে বসে এই নৌকা তৈরি করে হাটে নিয়ে আসি বিক্রি করতে। ভাল ভাবে বিক্রি করতে পারেলে কাঠ ও শ্রমীক খরচ দেওয়ার পর কিছু টাকা লাভ হয়। তবে তিনি বলেন আগের মত এখন আর বেশি নৌকা বিক্রি হয় না । এখন প্রতিটি এলাকায় রাস্তাÑঘাট হওয়ার পর নৌকার যোগাযোগের মাধ্যম কমে গেছে।
অমল সরকার,গোলক বালা,সমির জয়ধর নামে নৌকা ক্রেতাগণ বলেন , আমাদের এলাকা পানিবেষ্টিত এলাকা হলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলে রান্তা- ঘাট হওয়ার কারণে এখন আর আগের মত নৌকার প্রয়োজন হয় না। তারপর ও নৌকা কিনেছি গরুর ঘাস কাটা সহ নিজেদের কাজের জন্য।
নৌকা হাটের ইজারাদার সুজন ফলিয়া সুকচাঁদ ফলিয়া বলেন, কালিগঞ্জের হাটে বিগত ১২থেকে১৫ বছর ধরে এই ঐতিহ্যবাহী নৌকার হাট বসে আসছে । হাটে দূর-দূরান্ত থেকে ক্রেতারা নৌকা কিনতে আসেন। প্রতিটি বিক্রীত নৌকা থেকে শতকরা ১০টাকা হারে টোল আদায় করা হয়। বর্ষার সময় প্রতি হাটে ৪০০ থেকে ৫০০টি নৌকা ওঠে। এর মধ্যে ৩০০ থেকে ৩৫০টি নৌকা বিক্রি হয়ে থাকে।