আমতলী সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
তালতলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে একই দলের দুই ভাই ভোট যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। ছোট ভাই মোঃ রেজবি-উল-কবির জোমাদ্দার সরকার দলের পক্ষে আর বড় ভাই মোঃ মনিরুজ্জামান মিন্টু সরকার দলের বিপক্ষে। কেউ কাউকে ছাড়তে নারাজ। ইতিমধ্যে বড় ভাই বিদ্রোহী প্রার্থীকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিস্কার করেছে স্থানীয় আওয়ামীলীগ। দু’জনে সম্পর্কে মামাতো-ফুফাতো ভাই। দুই ভাই একই দলের হওয়ায় দলীয় আভ্যন্তরীণ কোন্দল চরম আকার ধারণ করেছে। দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে দলের নেতা-কর্মীরা প্রচার প্রচারনা চালাচ্ছেন।
জানা গেছে, গত ৯ মে তালতলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ভোট গ্রহন ১৮ জুন। ভোটের মাত্র আর দুই দিন বাকী। দ’ুপক্ষের প্রচার প্রচারনায় তালতলীর নির্বাচনী মাঠ সরগরম। প্রত্যান্ত গ্রামাঞ্চল চায়ের দোকান, হোটেল, রেস্তোরা সর্বত্রই চললে দুই ভাইয়ের পক্ষে বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনা। তবে সমালোচনায় স্থান জুড়িয়ে আছেন বড় ভাই মনিরুজ্জামান মিন্টু। গত পাঁচ বছরের শাসনামলে তিনি একাধিক ঘটনার নায়ক। কথায় কথায় মেরেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ওসি, এসআই, সাংবাদিক,শিক্ষক, নৈশপ্রহরী, শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ। তার মতের অবাধ্য হলেই চলছে টর্চার সেলে নির্যাতন। তিনি ছিলেন গত পাঁচ বছর অপ্রতিরোধ্য। এর জন্য খেশারতও দিতে হয়েছে তাকে। তফসিল ঘোষনার এক বছর পূর্বেই স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় তার কৃতকর্মের তদন্ত সাপেক্ষে বরখাস্ত করেছেন। বরখাস্ত থেকেও তিনি দমিয়ে থাকেননি। ব্যবহার করেছেন সরকারী গাড়ী, উপজেলার অর্থনৈতিক কর্মকান্ড রেখেছেন স্থবির। কেউ সাহস করে তার বিরুদ্ধে গিয়ে উপজেলা পরিষদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড পরিচালিত করতে পারেনি। স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় তাকে বরখাস্ত করে ভাইস চেয়ারম্যান মোঃ খলিলুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিলেও সাহস করে দায়িত্ব পালন করতে পারেনি সে। মিন্টু হলেন তালতলী উপজেলার সকল মানুষের কাছে এক মুর্তিমান আতঙ্ক। চর থাপ্পরের ভয়ে সাহস করে তার সাথে কথা বলতেও নারাজ সাধারণ মানুষ। তার বিরুদ্ধে রয়েছে একাধিক মামলা ও সাধারণ ডায়েরী। ছোট ভাই মোঃ রেজবি-উল-কবির জোমাদ্দার বড় ভাইয়ের সমতুল্য না হলেও তিনিও সমালোচনার উর্ধ্বে নয়। গত পাঁচ বছর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন কালে তার সাঙ্গপাঙ্গরা বেশ সুযোগ সুবিধা নিয়েছেন। তিনি বিতর্কিত কাজে না জড়ালেও তার সহচার্যে কর্মী-সমর্থক ও আত্মীয় স্বজনের কারনে কিছুটা সমালোচনা মুখর তিনি। নির্বাচনের তারিখ যতই ঘনিয়ে আসছে ততই গরম হচ্ছে নির্বাচনী মাঠ। দু’পক্ষের সংঘর্ষ লেগেই আছে। চলছে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া। দুই পক্ষে চার শতাধিক নেতা-কর্মীর নামে থানায় মামলা হয়েছে। পুলিশ রয়েছে তটস্থ অবস্থায়।
তালতলী থানা সূত্রে জানাগেছে, দুই পক্ষের বিরুদ্ধে রয়েছে ৪ টি মামলা। এই চার মামলায় চার শতাধিক আসামী। পুলিশ ৭ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেছে।
দুই ভাইয়ের ভোট যুদ্ধের সংঘর্ষ ও হাঙ্গামা দাঙ্গামার সুযোগে ভোটে হানা দেয়ার কথা থাকলেও দিতে পারেনি আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী উপজেলা বিএনপির আহবায়ক মোঃ ফরহাদ হোসেন আক্কাস মৃধা। তিনি নিরবে বিভৃতিকে প্রচারনা চালিয়ে তেমন জনগনের মনে প্রভাব ফেলতে পারেনি। এদিকে দুই ভাই সরকার দলের পক্ষে- বিপক্ষে ভোট যুদ্ধে অবতীর্ন হওয়ায় সাধারণ নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পরেছেন। দলীর শৃংখলা ভঙ্গের দায়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলা কমিটি বিদ্রোহী প্রার্থী মনিরুজ্জামান মিন্টু, বরগুনা জেলা পরিষদ সদস্য মোঃ আবুল কালাম শিকদার, নিশানবাড়ীয়া ইউপি চেয়ারম্যান দুলাল ফরাজী, সোনাকাটা ইউপি চেয়ারম্যান সুলতান ফরাজী, বড়বগী ইউপি চেয়ারম্যান আলমগীর হোসেন আলম মুন্সি ও পচাঁকোড়ালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান নজির হোসেন কালু পাটোয়ারীকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিস্কার করেছেন। পরে জেলা কমিটির উদ্যোগে উপজেলায় মাইকিং করা হয়। তবে দুই ভাইয়ের মধ্যেই লড়াই হবে এমন দাবী সাধারণ ভোটারদের। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটি জড়িপে ৩৮ জন মন্তব্যকারীদের মধ্যে নৌকার প্রার্থী মোঃ রেজবি-উল কবির জোমাদ্দার ১৫, স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরহাদ হোসেন আক্কাস ১০ ও বিদ্রোহী প্রার্থী মোঃ মনিরুজ্জামান মিন্টুকে ৩ জনে সমর্থণ করেছেন। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থী তেমন প্রচারনায় না থাকায় তার জন সমর্থণ ধরে রাখতে পারেনি এমনটাই দাবী সাধারণ ভোটারদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভোটার বলেন, দুই ভাইয়ের মধ্যে প্রতিদ্বন্ধিতা হবে। তবে মিন্টু পাঁচ বছরে মানুষের যে নির্যাতন করেছে তাতে তাকে সাধারণ মানুষ ভোট দিবে না। তার ভয়ে এখনো কোন ভোটার মুখ খুলছে না। তারা আরো বলেন, রেজবি ভাল মানুষ হলেও তার সাঙ্গপাঙ্গরা ভাল না। তবে সাধারণ মানুষের মন কেড়ে নিয়েছেন তিনি।
স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ ফরহাদ হোসেন আক্কাস মৃধা বলেন, আমি নিরবে নিভৃতিতে প্রচারনা চালাচ্ছি। সাধারণ মানুষ ভোট দিতে পারলে আমি জয়লাভ করবো।
তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি ও যুবলীগ সভাপতি বিদ্রোহী প্রার্থী বড় ভাই মনিরুজ্জামান মিন্টুর বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ অস্বীকার এবং জয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, আমার বিরুদ্ধে একটি মহল ষড়যন্ত্র করে অপপ্রচার চালাচ্ছে, যাতে আমার সুনাম ক্ষুন্ন হয়। তিনি আরো বলেন,সরকার দলীয় প্রার্থী প্রভাব বিস্তার করে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখাচ্ছেন। যাতে ভোটার কেন্দ্রে গিয়ে সুষ্ঠুভাবে ভোট দিতে না পারেন।
উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সরকার দলীয় প্রার্থী ছোট ভাই মোঃ রেজবি-উল করিব জোমাদ্দার শতভাগ জয়ের আশা ব্যক্ত করে বলেন, বিদ্রোহী প্রার্থী মোঃ মনিরুজ্জামান মিন্টু নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছেন। আমার গণজোয়ার দেখে আমার কর্মী-সমর্থকদের মারধর করছে। হিন্দু বাড়ীতে হামলা চালিয়ে ভোট কেন্দ্রে যেতে বাঁধা দিচ্ছেন। আমি প্রশাসনে কাছে বিদ্রোহী প্রার্থীর এহেনো বিতর্কিত কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবী জানিয়েছি।