কুয়াকাটা (পটুয়াখালী) সাগরকন্যা অফিস॥
সংবাদ প্রকাশের জের ধরে সাংবাদিক নাসির উদ্দিন বিপ্লবের উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার রাত ৯টার দিকে মৎস্য বন্দর আলিপুর চৌরাস্তা সংলগ্ন অনলাইন নিউজ পোর্টাল সাগরকন্যা অফিসের সামনে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এতে নাসির উদ্দিন বিপ্লবসহ ৬ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে ৪ জনকে রাতেই স্থানীয়রা উদ্ধার করে কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করেছে। আহত সাংবাদিক নাসির উদ্দিন বিপ্লব কলাপাড়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সাধারণ সম্পাদক, যুগান্তরের কুয়াকাটা প্রতিনিধি, অনলাইন নিউজ পোর্টাল সাগরকন্যার সম্পাদক, কুয়াকাটা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও মহিপুর কো-অপারেটিভ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য।
স্থানীয় ও আহতদের সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাতে নাসির উদ্দিন বিপ্লবসহ আহতরা আলীপুর বন্দরের সাগরকন্যা অফিসের সামনে আলাপচারিতায় ব্যস্ত ছিলেন। এ সময় মহিপুর থানা যুবলীগ নেতা ও কুয়াকাটা পৌর মেয়র বারেক মোল্লার ছেলে মাসুদ মোল্লা, মেয়রের ভাই মোশারেফ মোল্লা, লতাচাপলি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেয়রের ভাই আনছার উদ্দিন মোল্লা ও তার ছেলে রাসেল মোল্লার নেতৃত্বে ৩০/৩৫ জনের একটি বাহিনী লাঠিসোটা নিয়ে তার ওপর হামলা করে। কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই সন্ত্রাসীরা সাংবাদিক নাসির উদ্দিন বিপ্লবসহ সাথে থাকা লোকজনকে এলোপাতাড়ি মারধর শুরু করে। এতে জামাল হোসেন (৩৪), ছলেমান ফকির (৩২), চুন্নু হাওলাদার (৩৫), শাকিল খলিফা (২২) ও সবুর মিয়া (২৬) আহত হয়। সন্ত্রাসীরা নাসির উদ্দিন বিপ্লবকে টানা হেচড়া করে শরীরের পোশাক ছিড়ে ফেলে। এসময় স্থানীয়দের ডাকচিৎকারে লোকজন জড়ো হলে সন্ত্রসীরা পালিয়ে যায়। পরে মহিপুর থানা পুলিশ এসে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আহত সাংবাদিক নাসির উদ্দিন বিপ্লব বলেন, সম্প্রতি কুয়াকাটা পৌর মেয়র আবদুল বারেক মোল্লা লতাচাপলি ইউনিয়ন পরিষদের একটি জনসভায় প্রকাশ্যে মাইকিং করে আনছার উদ্দিন মোল্লাকে নির্দেশ দেয় যে, সাংবাদিক নাসিরকে থামাতে হবে। সে বিভিন্ন সময়ে আমাদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের নিউজ করে রাজনৈতিকভাবে আমাদেরকে হেয় করে আসছে। তার সাংবাদিকতা খেয়ে ফেলতে হবে। তা না হলে রাজনীতি করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার রাতে তার ওপর হামলার ঘটনা ঘটে বলে তিনি আশংকা করছেন। এঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
এদিকে লতাচাপলী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনছার উদ্দিন মোল্লা দাবী করেছেন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা নজরুল ইসলাম ফকির তাকে একটি ঘুষি মেরেছে। এছাড়াও বলেন, ঘটনার পরে মহিপুর থানায় যাওয়ার পথে তার সাথে থাকা আলমগীর নামে এক জনকে মারধর করা হয়েছে। পরে তাকে উদ্ধার করে কলাপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
মেয়রের পুত্র অভিযুক্ত মাসুদ মোল্লা নিজে জড়ির থাকার বিষয়টি অস্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, লোকমুখে শুনে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করি।
প্রকাশ্যে মাইকিং করে সাংবাদিক নাসিরকে থামাতে বলার অভিযোগ অস্বীকার করে কুয়াকাটা পৌর মেয়র আ: বারেক মোল্লা বলেন, কোনো হামলার ঘটনাই ঘটেনি। সামান্য একটু ঝামেলা হয়েছে।
মহিপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদুল ইসলাম হামলার ঘটনা স্বীকার করে বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আহতদের পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কলাপাড়া সার্কেল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জালাল আহমেদ বলেন, ঘটনা শুনেছি এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, কুয়াকাটার পৌর মেয়র আবদুল বারেক মোল্লা চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রীর বরাত দিয়ে কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশের এসআই শাহ আলমের কেনা কোরাল মাছ জোর করে নিয়ে যায়। এ ঘটনায় যুগান্তর পত্রিকায় সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর তিনি প্রতিনিধির ওপর ক্ষিপ্ত হন।
কেএআর/এমআর