ঢাকা সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বিএনপিকে বিভক্ত করার চক্রান্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আরাফাত রহমান কোকোর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত মিলাদ মাহফিলের আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে তিনি এ অভিযোগ করেন। ফখরুল বলেন, আজকে অনেক চক্রান্ত শুরু হয়েছে। সেই চক্রান্তগুলো হচ্ছে বিএনপিকে দুর্বল করার জন্য। এই চক্রান্ত হচ্ছেৃ বিএনপিকে যেটা এখন পর্যন্ত পারেনি, এর আগেও চেষ্টা করেছেৃ বিএনপিকে বিভক্ত করে তার শক্তিকে ছোটো করে দেওয়া। আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, কোনোদিনই তারা (সরকার) সেটা পারবে না। যতবার বিপর্যয় এসেছে ততবার বিএনপি সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ফিনিক্স পাখির মতই জেগে উঠেছে, নতুন জীবন লাভ করেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা বিভিন্ন সময়ে বিএনপিতে ‘ভাঙনের সুর’ তৈরি হওয়ার কথা বলে আসছেন। বিএনপির অনেক নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার জন্য ‘তৈরি হয়ে আছে’ বলেও গত নির্বাচনের আগে মন্তব্য করেছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ভোটের পর গত ২৩ জানুয়ারি এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের জোট শরিক বিকল্প ধারার সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ‘মহাপরাজয়’ ঘটায় বিএনপির শৃঙ্খলা ‘ভেঙে গেছে’। বিএনপিকে যারা ‘বিভক্ত করতে চায়’ তাদের পরাজিত করতে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, আমাদের রাজনীতিকে বুঝে সেই রাজনীতির পক্ষে আমাদেরকে অত্যন্ত শক্তভাবে অবস্থান নিতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের ঘরে ঘরে যেতে হবে, বাংলাদেশের মানুষ বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী রাজনীতিকে ধারণ করে। সেজন্যই বিএনপির প্রতি তাদের এত দুর্বলতা, বিএনপিকে তারা ভালোভাসে। সেই ভালোবাসাকে কাজে লাগিয়ে বিএনপিকে আরো শক্তিশালী করতে হবে, দেশপ্রেমিক শক্তিগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে এবং গণতন্ত্রের পক্ষের শক্তিগুলোকে শক্তিশালী করে ঐক্যবদ্ধ হয়েৃ তাদেরকে পরাজিত করতে হবে। আওয়ামী লীগ এখন ‘গণশত্রুতে’ পরিণত হয়েছে মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। সেজন্য তারা একের পর এক গণবিরোধী কাজগুলো করে চলেছে। খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে কোকোর স্মরণে এই মিলাদে ফখরুল বলেন, আমরা একদিকে আরাফাত রহমান কোকোর রুহের মাগফিরাত কামনা করব, তাকে স্মরণ করব।
অন্যদিকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য অতিদ্রুত আমরা সংগঠিত হয়ে তাকে মুক্ত করে নিয়ে আসব ইনশাল্লাহ, আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসব। এদিকে, বিএনপি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপ নির্বাচনে প্রার্থী দেবে কি না- সে সিদ্ধান্ত নিতে বৈঠকে বসছে দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বৈঠকের কথা জানান ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন তারা। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ফখরুল বলেন, আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করব। আজকে আমাদের স্ট্যান্ডিং কমিটির মিটিং আছে, সেই মিটিংয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। অ্যাক্টিং চেয়ারপারসনের সঙ্গে কথা বলে আমরা সিদ্ধান্ত নেব। জাতীয় নির্বাচনের দুই মাসের মাথায় আগামি ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদে উপ নির্বাচনের আয়োজন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ২৮ ফেব্রুয়ারি উত্তরের মেয়র পদে উপ-নির্বাচনের পাশাপাশি ঢাকার দুই সিটির নতুন ৩৬ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদেও ভোট হবে। নির্বাচনে অংশ নিতে আগ্রহীরা ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবেন। প্রার্থিতা প্রত্যাহার করা যাবে ৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুতে পদটি শূন্য হলেও আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে এতদিন ভোট আটকে ছিল। তবে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ভরাডুবির পর বিএনপি স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচনে যাবে কিনা- সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে দলটির নেতাকর্মীদের মধ্যে। কোকোর চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে বনানীতে গিয়ে তার কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুল লতিফ খান, আবদুল কুদ্দুস, যুগ্ম মহাসচিব হারুনুর রশীদ, কেন্দ্রীয় নেতা নুরী আরা সাফা, তাবিথ আউয়াল, হেলেন জেরিন খান, চেয়ারপারসনের একান্ত সচিব এবিএম আবদুস সাত্তার, প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন। ২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি মালয়েশিয়ায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান আরাফাত রহমান কোকো। পরে তার লাশ ঢাকায় এনে বনানীতে দাফন করা হয়।
এফএন/এনইউবি