আমতলী (বরগুনা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
তালতলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীই রয়ে গেলেন উপজেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি ও যুবলীগ সভাপতি মোঃ মনিরুজ্জামান মিন্টু। দলীয় সিধান্ত ভঙ্গ করে বিদ্রোহী প্রার্থী থেকে দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্ধিতা করায় তাকে দল থেকে বহিস্কারের দাবী তুলেছেন নেতা-কর্মীরা।
জানাগেছে, বিগত ৯ মে তালতলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা করে নির্বাচন কমিশন। তফসিল ঘোষনার পরেই তালতলীর সাধারণ মানুষের মাঝে নির্বাচনের আমেজ বিরাজ করছে। তালতলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট গ্রহন ১৮ জুন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে ১৩ মে তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ বর্ধিত সভা করে। ওই সভায় চারজনের নাম প্রস্তাব করে বরগুনা জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে তালিকা প্রেরন করেন। বরগুনা জেলা আওয়ামীলীগ ওই চারজন থেকে মোঃ রেজবি উল কবির জোমাদ্দার, মোঃ তৌফিকুজ্জামান তনু ও উপজেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি যুবলীগ সভাপতি বর্তমান বরখাস্তকৃত উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মনিরুজ্জামান মিন্টুর নাম প্রস্তাব করে আওয়ামীলীগ কেন্দ্রিয় কার্যালয়ে তালিকা পাঠায়। কেন্দ্রিয় আওয়ামীলীগের বাছাই কমিটি তালতলী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মোঃ রেজবি-উল-কবির জোমাদ্দারকে মনোনয়ন দিয়েছেন। দলের মনোনয়ন না পেয়ে মোঃ মনিরুজ্জামান মিন্টু দলের বিদ্রোহী হয়ে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল বৃহস্পতিবার কিন্তু মিন্টুৃ মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেনি। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে তিনি দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়ছেন। বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে দলের মনোনিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্ধিতা করায় দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। দলীর শৃংখলা ভঙ্গের দায়ে তাকে দল থেকে বহিস্কারের দাবী তুলেছেন অনেক নেতা-কর্মীরা।
এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামীলীগ মনোনিত প্রার্থী মোঃ রেজবি-উল-কবির জোমাদ্দার, আওয়ামীলীগ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মোঃ মনিরুজ্জামান মিন্টু (আনারস), স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ ফরহাদ হোসেন আক্কাস মৃধা ( মোটর সাইকেল) ও নুরুল আমিন (ঘোড়া) প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। গত শুক্রবার তাদের মাঝে প্রতিক বরাদ্দ দেয়া হয়। ইতিমধ্যে দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের দায়ে উপজেলা আওয়ামীলীগ মিন্টুকে কেন দল থেকে বহিস্কার করা হবে না মর্মে চিঠি দিয়েছেন।
পঁচাকোড়ালিয়া ইউনিয়র ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি মোঃ মজিবুর রহমান বলেন, মনিরুজ্জামান মিন্টু দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করছে না তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নির্বাচন করছেন। তাকে দ্রুত দলের সকল পদ থেকে বহিস্কারের দাবী জানাই।
বড়বগী ইউনিয়ন ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক খালেক মাসুদ, নিশানবাড়িয়া ওয়ার্ড আওয়ামীলীগ সভাপতি সোহরাব হাওলাদার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন তার বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্ধিতা করা মানে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্ধিতা করা। দ্রুত বিদ্রোহী প্রার্থী মনিরুজ্জামান মিন্টুকে দলের সকল পদ থেকে বহিস্কার করার দাবী জানাই।
তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ কবির আকন বলেন, দলীয় শৃংখলা ভঙ্গ করে দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্ধিতা করায় মনিরুজ্জামান মিন্টুকে দল থেকে বহিস্কার করার দাবী জানাই।
তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক ছোটবগী ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ তৌফিকুজ্জামান তনু বলেন, দলীয় শৃংখলা ভঙ্গ করে মনিরুজ্জামান মিন্টু আওয়ামীলীগ মনোনিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্ধিতা করায় কেন তাকে দল থেকে বহিস্কার করা হবে না এই মর্মে নোটিশ দেয়া হয়েছে। আগামী সোমবার উপজেলা আওয়ামীলীগ বর্ধিত সভা ডেকে তাকে দলের সকল পদ থেকে বহিস্কারের জন্য বরগুনা জেলা আওয়ামীলীগ ও কেন্দ্রিয় আওয়ামীলীগের কাছে সুপারিশ পাঠানো হবে।
তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সভাপতি ও আওয়ামীলীগ মনোনিত প্রার্থী মোঃ রেজবি-উল-কবির জোমাদ্দার বলেন, দলের উচ্চ আসনে থেকে কেউ দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে না। মনিরুজ্জামান মিন্টু উপজেলা আওয়ামীলীগ সহ-সভাপতি ও যুবলীগ সভাপতির মত পদ দখল করে দলের মনোনিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে লড়ছেন।এতে সে দলীয় শৃংখলা ভঙ্গ করেছেন। আগামী সোমবার উপজেলা আওয়ামীলীগ দলীয় সভা করে তাকে এবং দলীয় পদ দখল করে যারা তার সাথে রয়েছেন তাদেও সকলকে দল থেকে বহিস্কারের জন্য সুপারিশ করা হবে।
বিদ্রোহী প্রার্থী মোঃ মনিরুজ্জামান মিন্টু দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের নোটিশ প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে বলেন, আমি তালতলী উপজেলা আওয়ামীলীগকে দুর্দিনে ধরে রেখেছি। আমি দলীয় মনোনয়ন পাইনি তারপরও দলের সকল নেতাকর্মীরা আমার সাথে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা রয়েছে দলের যে কেউ প্রতিদ্বন্ধিতা করে বিজয়ী হয়ে আসতে পারলে সেই তার। আমি প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মনে দলের বাহিরে গিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করছি। তিনি আরো বলেন, উপজেলা আওয়ামীলীগ কোন মতেই আমাকে বহিস্কার করতে পারে না। কেন্দ্রিয় আওয়ামীলীগ যদি আমাকে বহিস্কার করে তাতে আমার কোন আপত্তি থাকবে না। কেন্দ্রিয় আওয়ামীলীগ থেকে উপজেলা আওয়ামীলীগকে বহিস্কারের কোন নির্দেশনা নেই।
বরগুনা জেলা যুবলীগ সভাপতি এ্যাড.কামরুল আহসান মহারাজ বলেন, দলীয় শৃংখলা ভঙ্গ করে তালতলী উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মনিরুজ্জামান মিন্টু উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের মনোনিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্ধিতা করায় আপনাআপনি তিনি যুবলীগ সভাপতির পদ থেকে বহিস্কার হয়ে গেছেন। তাকে সভা করে আর বহিস্কার করার প্রয়োজন নেই।
এমএইচকে/এমআর