ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
দেশে গড় আয়ু বৃদ্ধি, মাতৃমৃত্যু হ্রাসসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি লাভ হলেও অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, এমপি। তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে অসংক্রামক রোগ প্রকোপ আকার ধারণ করছে। ক্যান্সার, কিডনী, সিরোসিস, ডায়াবেটিসসহ নানা অসংক্রামক রোগে বছরে মোট মৃত্যুর ৬০ ভাগ মানুষ মারা যাচ্ছে। দেশের মাত্র ৩ ভাগ মানুষ রিস্ক ফ্যাক্টরের বাইরে রয়েছে।
বুধবার (২৯ মে) দুপুরে সচিবায়ের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব প্রিভেন্টিভ অ্যান্ড হেলথ মেডিসিন (নিপসম) আয়োজিত “অসংক্রামক রোগের ঝুঁকিসমূহের ব্যাপ্তি নিরূপম জরিপ ২০১৮-ঝঞঊচঝ এর ফলাফল প্রকাশ” অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির তিনি এসব কথা বলেন।
স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠান (নিপসম) এর পরিচালক অধ্যাপক ডা. বায়জিদ খুরশিদ রিয়াজ। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব বাবুল কুমার সাহাসহ মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে সচেতনতার উপর জোর দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষের ৯০ ভাগ নিয়মিত কোলস্টোরল টেস্ট করায় না। ফলে মানুষের স্ট্রোক, হার্ট ব্লক, ডায়াবেটিস ও কিডনি কখন বিকল হয়ে যাচ্ছে তা বুঝতেও পারছে না। ৭০ ভাগ লোক আছে তারা কখনই রক্ত পরীক্ষা করায় না। দেশের মানুষ দিনে যে পরিমান ফলমূল, শাক-সবজি খাওয়ার কথা তার মাত্র ৫ ভাগের ১ ভাগ গ্রহণ করে। মানুষ শাক-সবজি খায় না, রক্ত পরীক্ষা করায় না, নিয়মিত ব্যায়ামও করে না।
ফলে দেশে বর্তমানে অসংক্রামক রোগে আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে বর্তমান সরকার মানুষের স্বাস্থ্য সেবায় সর্বদাই সজাগ রয়েছে। তাই, ক্যান্সার-কিডনী রোগের দেশজোড়া প্রকোপ এড়াতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় দেশের ৮টি বিভাগে ৮টি ক্যান্সার-কিডনী হাসপাতাল নির্মাণ করার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। খুব শীঘ্রই আট বিভাগে আটটি ক্যান্সার-কিডনী হাসপাতাল নির্মাণ কাজ শুরু করা হবে।
জাহিদ মালেক বলেন, সংক্রামক রোগ ধীরে ধীরে কমছে, দ্রুত বাড়ছে অসংক্রামক রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। আর অসংক্রামক রোগে আক্রান্তরা খুব তাড়াতাড়ি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন। এ ধরনের রোগের চিকিৎসাব্যয় দেশের অধিকাংশ মানুষের সামর্থের বাইরে চলে যাচ্ছে। অসংক্রামক রোগ আজ মারাত্মক জনস্বাস্থ্য সমস্যা, যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই প্রতিকার ও প্রতিরোধযোগ্য।
অনেকগুলো সংক্রামক রোগের মধ্যে কয়েকটি হচ্ছে কার্ডিওলজিভাস্কুলার ডিজিজ(সিভিডি), ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং ফুসফুসের দীর্ঘস্থায়ী সংকোচনজনিত রোগ। সংক্রামক রোগকে অধিক গুরুত্ব দিতে গিয়ে নীরব ঘাতক সংক্রামক রোগ অপেক্ষিত রয়ে গেছে। যার নেতিবাচক প্রভাব আজ সমগ্র জাতির সামনে দৃশ্যমান। অধিকতর কারিগরি নির্ভরশীলতা আমাদেরকে কম কায়িক পরিশ্রম এবং অধিক ক্যালরিযুক্ত খাবারের দিকে ধাবিত করছে। যার প্রেক্ষিতে বর্তমানে দেশের শতকরা ৬১ ভাগ রোগই হচ্ছে অসংক্রামক রোগ।
অধিক বয়স্ক লোকের সংখ্যা এবং অসংক্রামক রোগে আক্রান্ত লোকের সংখ্যা সমানুপাতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর্থিক অস্বচ্ছলতা, অশিক্ষা এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থার অপ্রতুল এই সমস্যাকে আরো প্রকট করে তুলছে। এসব রোগের চিকিৎসায় অনেক ক্ষেত্রেই ব্যয়বহুল হয়ে থাকে। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে প্রতিরোধ করার বিষয়ে সকলকে সজাগ থাকতে হবে।
এফএন/এমআর