ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোর যথাযথ মেরামতে পর্যাপ্ত বরাদ্দ পাচ্ছে না। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সড়ক-মহাসড়ক রক্ষণাবেক্ষণ করতে সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর ১১ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা চেয়েছিল। তার বিপরীতে বরাদ্দ দেয়া হয় মাত্র ২ হাজার ৩৫০ কোটি টাকা। ফলে অপ্রতুল ওই অর্থ দিয়ে অনেকটা দায়সারাভাবেই চলেছে সারা বছরের সড়ক মেরামত কার্যক্রম। তাতে সামান্য বৃষ্টিতেই নষ্ট হয়ে গেছে মেরামতকৃত অনেক সড়ক-মহাসড়ক। বিটুমিনের প্রলেপ উঠে গিয়ে রাস্তায় তৈরি হয়েছে খানাখন্দ। শুধু চলতি অর্থবছরই নয়, সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে প্রায় প্রতি বছরই চাহিদার তুলনায় খুবই নগণ্য বরাদ্দ মিলছে। সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জান যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, সারা দেশে সওজ’র অধীনে ২১ হাজার ৩০২ কিলোমিটার সড়ক-মহাসড়ক রয়েছে। গত ১০ বছরে উন্নয়ন খাতের আওতায় ৪ হাজার ৩৩১ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার মহাসড়ক মজবুতীকরণসহ ৫১৭১ দশমিক ২৭ কিলোমিটার মহাসড়ক প্রশস্তকরণ করা হয়েছে। অনুন্নয়ন খাতের আওতায় ৪ হাজার ৮৬৮ দশমিক ৬৫ কিলোমিটার মহাসড়ক কার্পেটিং ও সিলকোট করা হয়েছে। তাছাড়া ১ হাজার ৮৯২ দশমিক ৪১ কিলোমিটার ডিবিএসটি এবং ৮ হাজার ১৫৮ দশমিক ১১ কিলোমিটার ওভারলে করা হয়েছে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বরাদ্দ পাওয়া না গেলে প্রয়োজনীয় মান ও মাত্রার রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে অনেক ক্ষেত্রেই সড়কগুলো আর মেরামতের উপযোগী থাকে না। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সড়কগুলো পুননিমাণ বা পুনর্বাসনের আবশ্যকতা দেখা দেয়।
সূত্র জানায়, সওজ অধিদপ্তরের মহাসড়ক উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের (এইচডিএম) তথ্যানুযায়ী বিগত ১০ বছরে ওই খাতে যা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে, পাওয়া গেছে তার এক-চতুর্থাংশেরও কম। ওই সময়ে ৫৫ হাজার ২৬৪ কোটি টাকার চাহিদার বিপরীতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১৩ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা। সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৯ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা চাহিদার বিপরীতে ১ হাজার ৪৯০ কোটি, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১২ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা চাহিদার বিপরীতে ১ হাজার ৪৬৮ কোটি, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ১ হাজার ৪৪৪ কোটি টাকা, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৭ হাজার ৭৭৩ কোটি টাকা চাহিদার বিপরীতে ১ হাজার ২৩৯ কোটি, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৩ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা চাহিদার বিপরীতে ১ হাজার ১৩৫ কোটি, ২০১১-১২ অর্থবছরে ৩ হাজার ৮৫১ কোটি টাকা চাহিদার বিপরীতে ৭০৪ কোটি, ২০১০-১১ অর্থবছরে ৩ হাজার ৩৯৯ কোটি টাকা চাহিদার বিপরীতে ৬৬৭ কোটি এবং ২০০৯-১০ অর্থবছরে ২ হাজার ৫৭৪ কোটি টাকা চাহিদার বিপরীতে সওজকে বরাদ্দ দেয়া হয় ৬১০ কোটি টাকা।
সূত্র আরো জানায়, প্রতি অর্থবছরই বাজেটের আগে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণের লক্ষ্যমাত্রা ও বরাদ্দ হিসাব করা হয়। তার ভিত্তিতে অর্থ মন্ত্রণালয়ে চাহিদা প্রেরণ করা হয়। তবে বাজেটে বিভিন্ন খাতে বণ্টনের কারণে প্রতি বছরই সড়ক রক্ষণাবেক্ষণে পর্যাপ্ত বরাদ্দ পাওয়া যায় না। অথচ প্রতিটি সড়ক চার ধরনের মেরামত প্রয়োজন হয়। তার মধ্যে রয়েছে বছরভিত্তিক নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, ২/৩ বছর পর হালকা মেরামত বা প্রিয়ডিক মেইনটেন্যান্স (পিএমপি) মাইনর, ৫-১০ বছর পর ভারি মেরামত বা পিএমপি মেজর এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর জরুরি মেরামত। সেগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করা হলে সড়ক-মহাসড়কের যে উপযোগিতা পাওয়া যায়, তার আর্থিক মূল্য নতুন সড়ক নির্মাণের চেয়েও অনেক বেশি। কিন্তু নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না করায় সড়ক দ্রুত নষ্ট হচ্ছে। তাতে যাতায়াতে সময়ও বেশি লাগছে। সড়ক মেরামত ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে। ফলে সড়কের নিরাপত্তা কমছে ও দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়ছে। আর দুর্ঘটনা, যানবাহনের ক্ষতিসহ বিভিন্ন কারণে সড়ক ব্যবহার ব্যয় বাড়ছে, যা অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
এদিকে সড়ক নির্মাণ ও মেরামত খাতে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপাদানের দাম কয়েক বছর ধরেই বাড়ছে। তাতে রক্ষণাবেক্ষণের বিভিন্ন ধাপের ব্যয় ২৬ থেকে ৪২ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। সেজন্য প্রতি বছর মেরামত খাতে বাড়তি বরাদ্দ প্রয়োজন। কিন্তু চাহিদা অনুপাতে বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে না। ফলে সড়কের অবস্থা খারাপ হচ্ছে।
অন্যদিকে সওজ সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা মনে করেন, অপ্রতুল বরাদ্দের পাশাপাশি জনবলের অভাবের কারণেই সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ কার্যক্রম বিঘিœত হচ্ছে। তার বাইরে উন্নয়ন প্রকল্পের সঙ্গে রক্ষণাবেক্ষণ খাতে বরাদ্দ না থাকাকেও তারা দায়ি করছেন। তাদের মতে, একটা রাস্তা বানানোর আগে সওজ থেকে পরিকল্পনা কমিশনে নির্মাণ ব্যয়ের পাশাপাশি নির্মাণ-পরবর্তী সময়ে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অর্থের সংস্থান রাখার প্রস্তাব দেয়া হয়। পরিকল্পনা কমিশন বরাবরই সেখান থেকে রক্ষণাবেক্ষণ খাতের ব্যয়টা কেটে দেয়। একটা সড়ক নির্মাণের পর সেটি রক্ষণাবেক্ষণে যে পরিমাণ টাকা দরকার, সে পরিমাণ টাকা সওজ পাচ্ছে না।
এফএন/এমআর