ঢাকা সাগরকন্যা অফিস॥
নাইকো দুর্নীতি মামলার বিচারে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে আদালত স্থানান্তরের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার রিট আবেদনের শুনানি ১০ জুন পর্যন্ত মুলতবি রেখেছে হাই কোর্ট।
মঙ্গলবার (২৮ মে) শুনানিতে আদালতের কিছু বিষয়ের প্রশ্নের জবাব দিতে তার আইনজীবীরা সময় চাওয়ায় বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। আদালতে খালেদার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও মওদুদ আহমদ। তাদের সঙ্গে ছিলেন নওশাদ জমির ও কায়সার কামাল।
আইনজীবীর খন্দকার মাহবুব হোসেনও এ সময় সেখানে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, দুদকের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী খুরশীদ আলম খান। মওদুদ আহমেদ পরে সাংবাদিকদের বলেন, আদালত আরও কিছু জানতে চেয়েছে। সেগুলো এই আবেদনের সঙ্গে সম্পূরক হিসেবে হলফনামা আকারে দেওয়া হবে। সেজন্য আজকের মত শুনানি মুলতবি হয়েছে। বন্ধের পর ১০ জুন এই মামলার শুনানি আবার হবে। শুনানিতে মোহাম্মদ আলী বলেন, কেরানীগঞ্জ ঢাকা মহানগর এলকার মধ্যে নয়। এটা মেট্রোপলিটন আদালতের এখতিয়ারের বাইরে। এটা অন্য সেশন ডিভিশন (অন্য অধিক্ষেত্র)। আর আইন অনুযায়ী মামলার বিচার হতে হবে উন্মুক্ত আদালতে। তখন বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, এর আগে ওঁর মামলার বিচার তো আরেকটি কারাগারে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতে হয়েছে, এখন আরেকটি কারাগারের অস্থায়ী আদালতে বিচারের বিষয়টি এসেছে। আগে কারাগারে আদালত স্থাপনের ক্ষেত্রে আপনারা কী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন? সেটা কি রেস্ট্রিকডেড ছিল না? আমরা মনে করি, এই আবেদনের সাথে এই মামলার চার্জশিট দেওয়া উচিত ছিল। তাহলে আমাদের বুঝতে সুবিধা হত। এ ছাড়া ওই আদালতের বিচারকের অধিক্ষেত্রের গেজেটটাও আমাদের দেখানো উচিত ছিল।’ এরপর খালেদা জিয়ার আইনজীবী বলেন, তাহলে আজকে এই পর্যন্তই রাখছি। আরেকদিন এ বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরব। শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আসামি ফারুক রহমানের বিচার জেলখানায় হয়েছে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মামলাও চলেছিল। উনারাই সেটা করেছিলেন। বিডিআর মামলার অনেক আসামি। সেটার বিচার আলিয়া মাদ্রাসার পাশে কারা অধিদপ্তরের মাঠে হয়েছিল। এ মামলাটাও ওখানে হত। কিন্তু সেখানে কিছু সমস্যা হয়েছিল। গাড়ি ভাঙচুর হয়েছে। পরে মামলাটি পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক কক্ষে স্থানান্তর করা হয়। এর মধ্যে জেলখানা ট্রান্সফার হয়েছে। এখন ওই কোর্টটা জেলখানার ভেতরে নয় সামনে। আমাদের কাছে ল্যাপটপে বিষয়টি আছে। চাইলে দেখতে পারেন।’ তখন আদালত সিডি জমা দিতে বলে।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এখানে মেট্রো সেশনের কোনো বিষয় না। বিশেষ জজ আদালতের মামলা। সুতরাং এখানে কোনো মেট্রো সেশনের কোনো সম্পর্ক নাই। পরে এ জে মোহাম্মদ আলীর সময় আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত শুনানি ১০ জুন পর্যন্ত মুলতবি করে। নাইকো দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিচারের জন্য বিশেষ আদালত পুরান ঢাকার পরিত্যক্ত কারাগার থেকে সরিয়ে কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে নেওয়ার সরকারি আদেশের বিরুদ্ধে গত রোববার উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করা হয়।
খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলার বিচারে বিশেষ জজ আদালত-৯ পুরান ঢাকার সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে কেরানীগঞ্জে কেন্দ্রীয় কারাগারের দুই নং ভবনে স্থানান্তরে ১২ মে জারি করা গেজেটকে কেন অবৈধ এবং বেআইনি ঘোষণা করা হবে না মর্মে রুল চাওয়া হয়েছে রিট আবেদনে। রুলের নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ওই গেজেটের কার্যকারিতাও স্থগিত চাওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র সচিব ও আইন মন্ত্রণালয়ের দুই সচিবকে বিবাদি করা হয়েছে। দুর্নীতির মামলায় এক বছর আগে দ-ের পর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন সড়কের পরিত্যক্ত কারাগারে খালেদাকে রেখে তার বিরুদ্ধে অন্য কয়েকটি মামলার বিচারও সেখানেই চলছিল।
এফএন/এমআর