চরফ্যাশন (ভোলা) সাগরকন্যা প্রতিনিধি॥
বঙ্গোপসাগর, মেঘনা, বুড়া গৌরাঙ্গা নদীর ভয়াল ছোবলে চরফ্যাশনের দু’শত বছরের পুরনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ঢালচরে দিনের পর দিন বিলীন হয়ে যাচ্ছে বসত-ভিটা, ফসলি জমি, স্কুল, মাদ্রাসা, মসজিদও মৎস্য আড়ৎসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
তীব্র ভাঙ্গনের কবলে বিগত ১৫দিনে প্রায় শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। আর এসব বসত-ভিটা হারানো মানুষগুলো খোলা আকাশের নিচে মনবেতর দিন কাটাচ্ছে। তারা আশ্রয়র কোন ঠিকানা পাচ্ছে না। তাদের দিন কাটছে অনেক কষ্টে। ভাঙ্গণের তীব্রতায় আতংকে দিনাতিপাত করছে ঢালচরের জেলে পল্লীর বাসিন্দারা।
এলাকাবাসীর সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, দ্বীপজেলার এক তৃতীয়াংশ মৎস্য আয়ের উৎস হচ্ছে ঢালচর। নদী ও সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে চলছেন এখানকার ৩০ হাজার মানুষ। মাছের ওপর নির্ভরশীল হয়ে বেকারত্ব দুর করার চেষ্টা চললেও এসব মানুষের স্বপ্ন আশা ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে নদী ও সাগরের ভয়াবহ ভাঙন। এলাকাবাসীর দেওয়া তথ্য মতে, গত ৬ মাসে ১টি বৃহৎ বাজার, ৪টি গুচ্ছগ্রাম, ২শতাধিক ঘর-বাড়ি, ১টি মাদ্রাসা, ২টি মসজিদ, ৫টি পুকুর, ১টি ফরেস্ট অফিস, ২৫০টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও শতাধিক একর ফসল জমি বিলীন হয়ে গেছে। চলতি শীত মৌসুমেও ভয়াবহ ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। এখন ভাঙনের মুখে পড়েছে ২টি গুচ্ছ গ্রাম, ২টি মৎস্য আড়ৎ, একটি পুলিশ ফাঁড়ি, ৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, একটি কোয়াটার, রেস্টহাউজ , একটি ফরেস্ট অফিস এবং হ্যালিপেডসহ অসংখ্য ঘর-বাড়ি। ভাঙন রোধ কল্পে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে পুরো ঢালচর বিলীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
ক্রমেই ছোট হয়ে আসছে দু‘শত বছরের প্রাচীন এ দ্বীপটি। ভাঙনের ফলে এক তৃতীয়াংশ বিলীন হয়ে যাওয়ায় চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন ঢালচরবাসী। পুরো জনপদ ভেঙে গেলে তারা কোথায় আশ্রয় নেবে সে চিন্তায় দিশেহারা তারা। গুচ্ছ গ্রামের বাসিন্দা মনোয়ারা, সকিনা ও বিবি রাবেয়া বলেন,“বর্ষা মৌসুমেও নদীতে ঘর-বাড়ি বিলীন হয়ে যায়। বহু কষ্ট করে নতুন ঘর তুলেছি। কিন্তু এখন আবার ভাঙন চলছে। এখন আর কোথাও আশ্রয় নেওয়ার জায়গা নেই। ঢালচরের বাসিন্দা সেকান্দার, নিরব, শাহে আলম বলেন, “যেভাবে ভাঙন চলছে। এ ভাঙন অব্যাহত থাকলে সাগরে বিলীন হয়ে যাবে পুরো ঢালচর। ঢালচরের মৎস্য ব্যবসায়ী মাহাবুবুর রহমান বলেন,“ঢালচরকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষার দাবিতে কিছুদিন আগে আমরা মানব বন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলসহ বিভিন্ন কর্মসূচী পালন করেছি’ কিন্তু আজো কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
ঢালচর ইউপির চেয়ারম্যান আবদুস ছালাম হাওলাদার বলেন, ঢালচরে বর্তমানে প্রধান সমস্যা রয়েছে নদী ভাঙ্গন কবল থেকে রোধ করা। আমি সকল মহলকে বিষয়টি অবগত করিয়েছি। এখানে প্রায় ২শতাধিক পরিবার নদী ভাঙ্গণ কবলে পড়ে ছিন্নমূল হিসাবে রয়েছে। বন বিভাগের জমি খালি পড়ে রয়েছে। সরকার এ পরিবার গুলোকে বন্দোবস্তের ব্যবস্থা করলে পরিবার গুলোকে মাথা গুজার ঠাই পেত। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড ডিভিশন-২ নির্বাহী প্রকৌশলী কাউছার আহম্মেদ সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি বলেন, এই বিষয় স্থানীয় জাতীয় সাংসদ সদস্যকে জানানো হয়েছে।তিনি চরফ্যাশন-মনপুরার বিষয়ে আন্তরিক। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুহুল আমীন বলেন, “ঢালচরের নদী ভাঙন রোধ কল্পে আপাতত কোনো প্রকল্প আছে কিনা আমার জানা নেই। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডের। ভাঙনের মুখে পড়া স্থাপনাগুলো আমরা অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা চালাচ্ছি।
এদিকে, সহায় সম্বল হারিয়ে দিশেহারা ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষ। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকা মানুষ গুলো ভাঙন রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।’
এমএইচ/এমআর